দিন যাচ্ছে জনসংখ্যার আধিক্য যেমন বাড়ছে তেমনি বিভিন্ন প্রাকৃতিক বা মানবসৃষ্ট দুর্ঘটনাজনিত কারণে অকালে প্রাণ হারানোর চিত্রও বাড়ছে। যতই দিন যাচ্ছে প্রকৃতি যেন বিরূপ প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করছে। বিরূপ প্রকৃতি, জলবায়ু পরিবর্তন, উষ্ণতা বৃদ্ধি, বৃক্ষ নিধন, কথিত সীমানা পিলার চুরি হয়ে যাওয়াসহ নানা কারণে প্রতি বছর বাংলাদেশে বাড়ছে বজ্রপাতর সংখ্যা। আবার বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশে অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেছে বজ্রপাত। এর কারণে কয়েক বছরে প্রাণহানি বড়েছে উদ্বেগজনক হারে। এক প্রতিবেদন থেকে দেখা যায় দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশে বজ্রপাতের প্রবণতা সবচেয়ে বেশি, বাংলাদেশে প্রতি বর্গকিলোমিটারে অন্তত ৪০টি বজ্রপাত হয়। ডিজাস্টার ফোরাম -এর প্রতিবেদনে দেখা যায় ২০১১ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ১২ বছরে বজ্রাঘাতে মৃত্যু হয়েছে ৩ হাজার ১৬২ জনের। এর মধ্যে ২০১১ সালে ১৭৯ জন, ২০১২ সালে ২০১ জন, ২০১৩ সালে ১৮৫ জন, ২০১৪ সালে ১৭০ জন, ২০১৫ সালে ১৬০ জন, ২০১৬ সালে ২০৫ জন, ২০১৭ সালে ৩০১ জন, ২০১৮ সালে ৩৫৯ জন, ২০১৯ সালে ১৬৮ জন, ২০২০ সালে ২৩৬ জন এবং ২০২১ সালে ৩৬২ জন মারা গেছে বজ্রাঘাতে। বাংলাদেশে বজ্রপাতের ওপর তেমন কোনো গবেষণা নেই। তবে ইউরোপ, জাপান ও আমেরিকায় এ বিষয়টি নিয়ে বড় গবেষণা চলছে। মার্চ-এপ্রিল ও মে মাসে বজ্রপাত বেশি হয় হাওরাঞ্চলে-কিশোরগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সিলেট ও নেত্রকোনা জেলায়। দেশের হাওর এলাকায় বেশির ভাগ ফসলি জমিতে বড় কোনো গাছ না থাকায় মৃত্যু ঠেকানো যায় না। বজ্রপাতের ধর্ম হচ্ছে তা মাটিতে আঘাত হানার আগে সবচেয়ে উঁচু যে জায়গাটি পায় সেখানে গিয়ে পড়ে। হাওর এলাকায় কৃষকের শরীরই পায়, তার ওপর পড়ে। তাই বজ্রপাতের ঝুঁকি মোকাবিলায় প্রাথমিক পর্যায়ে সারা দেশে তালগাছের ৫০ লাখ চারা রোপণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি বজ্রপাতের আগাম বার্তা পেতে ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৮ জেলায় বজ্রপাতের গতি-প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ যন্ত্র স্থাপন করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। যন্ত্রটি সাইরেন বাজিয়ে লাল হলুদ ও নীল রঙের মাধ্যমে বজ্রপাতের সতর্ক সংকেত দেয়। এর মাধ্যমে বজ্রপাত ও বজ্রঝড় কোন অঞ্চল দিয়ে প্রবাহিত হবে, তা এক ঘণ্টা আগেই জানিয়ে দিতে পারে আবহাওয়া অফিস। কিন্তু তারপরও কমছেনা মৃত্যুহার। এর কারণ হিসেবে দেখা যাচ্ছে সাধারণ মানুষের অসচেতনতা। তাই বজ্রপাতের সময় খোলা জায়গা, খোলা মাঠ অথবা উঁচু স্থানে থাকা যাবেনা, ধানক্ষেত বা খোলা মাঠে থাকলে তাড়াতাড়ি পায়ের আঙুলের ওপর ভর দিয়ে এবং কানে আঙুল দিয়ে মাথা নিচু করে বসে থাকতে হবে। যেহেতু বজ্রপাত সবসময় উঁচু জিনিসে আঘাত হানে তাই বৃষ্টির সময় উঁচু গাছপালা ও বৈদ্যুতিক খুঁটি ও তার বা ধাতব খুঁটি, মোবাইল টাওয়ার থেকে দূরে থাকতে হবে। বজ্রপাত থেকে মানুষকে বাঁচাতে অবকাঠামোগত প্রস্তুতির পাশাপাশি সামাজিক সচেতনতা বাড়াতে হবে। তাই বলা যায় আমারা সচেতন হলেই বজ্রপাতে মৃত্যুর হার কমানো সম্ভব হবে।