বিশ্বের বিভিন্ন দাতা দেশ ও সংস্থাগুলো রোহিঙ্গাদের জন্য সাহায্য কমিয়ে দিয়েছে। ফলে রোহিঙ্গা শিবিরে খাদ্য ও অন্যান্য ক্ষেত্রেও নানা সংকট দেখা দিতে পারে। শুরুতে রোহিঙ্গাদের ব্যয়ের ৭২ শতাংশ দাতাদের কাছ থেকে পাওয়া গেছে। ২০২২ সালে পাওয়া গেছে ৬২ শতাংশ। চলতি বছরে সাহায্যের পরিমাণ আরও কমার শঙ্কা আছে। জাতিসংঘ ইতোমধ্যে রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা কর্মসূচি কাটছাঁট করেছে। রোহিঙ্গাদের খাদ্যের জন্য আগে বরাদ্দ ছিলো মাথাপিছু মাসিক ১২ ডলার। কিন্তু পহেলা মার্চ থেকে সেটি প্রায় ১৭ শতাংশ কমিয়ে দেয়া হয়েছে। বর্তমানে রোহিঙ্গাদের খাদ্যের জন্য মাথাপিছু দেয়া হচ্ছে ১০ করে। অর্থাৎ বাংলাদেশি টাকায় আগে দেয়া হত মাথাপিছু ১২২২ টাকা করে আর এখন দেয়া হচ্ছে ১০০০ টাকা করে। খাবারের জন্য নগদ কোন টাকা পায় না রোহিঙ্গারা। পরিবারপ্রতি একটি করে রেশন কার্ড দেওয়া হয়। পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের জন্য ১০ ডলার করে দেওয়া হয়। কোনো পরিবারের পাঁচজন সদস্য থাকলে ই-ভাউচারে জমা হবে মাসে ৫০ ডলার। সহায়তা কমে যাওয়ার কিছু কারণ রয়েছে। যার একটি কারণ হচ্ছে রোহিঙ্গা সংকট দীর্ঘায়িত হওয়ায় মানবিক সহায়তা দানকারীদের মধ্যে আবেগ কমে যাচ্ছে। আরেকটা কারণ হলো, জাতিসংঘ প্রথমদিকে রোহিঙ্গা সংকটকে লেবেল-তিন ইমার্জেন্সি ঘোষণা করেছিল। লেভেল-তিন হলো সর্বোচ্চ জরুরি পরিস্থিতি যা বর্তমানে তুরস্কে রয়েছে। পাঁচ বছর অতিবাহিত হওয়ায় তারা রোহিঙ্গা সংকটকে লেভেল-দুইয়ে নামিয়ে এনেছে। কারণ এই সংকট সহজে সমাধান হচ্ছে না। এই সংকটকে জরুরি অবস্থা নয় বলে ঘোষণা করেছে। ফলে সহযোগিতা কমিয়ে দেয়া হয়েছে। খাদ্যসহায়তা কমে যাওয়ায় ক্যাম্পে বন্দী রোহিঙ্গাদের জীবন আরও কঠিন হয়ে উঠবে। খাদ্যসহায়তা কমে যাওয়ায় এসব অপরাধমূলক কাজে জড়িত হওয়ার প্রবণতা আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। এখনই রোহিঙ্গাদের একটি অংশ মাদক চোরাচালানসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সাথ জড়িত। দেখা দিতে পারে নতুন সংকট। বস্ত্র একটি মানুষের মৌলিক অধিকার তবে আশ্রয়-শিবিরে রোহিঙ্গাদের জন্য নিয়মিতভাবে কাপড় দেওয়ার ব্যবস্থা নেই। অনেক ক্ষেত্রে সব প্রয়োজনীয় ওষুধও শিবিরে বিনা মূল্যে পাওয়া যায় না। খাবারের জন্য বরাদ্দও অপ্রতুল। সব মিলিয়ে বাড়তি আয়ের দিকে ঝুঁকতে হয় রোহিঙ্গাদের। ক্যাম্পের ভেতরে বিভিন্নভাবে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করে আয় করার সুযোগ আছে। তবে সেটি সীমিত। এখন অনেকে শিবিরের বাইরে গিয়ে কাজ করেন। খাদ্যসহায়তা কমে যাওয়ায় রোহিঙ্গাদের মধ্যে বাইরে কাজ করতে যাওয়ার হার আরও বাড়তে পারে। এতে শ্রমবাজারে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সঙ্গে রোহিঙ্গাদের দ্বন্দ্ব দেখা দিতে পারে। মন্দা পরিস্থিতির কারণে সামনে তহবিল আরও কমে আসার আশঙ্কা আছে। এতে বিভিন্ন খাতে সহায়তা আরও কমে আসবে। সুতরাং সংশ্লিষ্টদের তহবিল জোগাড়ে প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। সামনের দিনে কর্মসূচি বাস্তবায়নে আরও দক্ষতার সঙ্গে কার্যকরভাবে খরচ করা এবং সহনশীলতার ওপর জোর দিতে হবে।