জনস্বাস্থ্য রক্ষার্থে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন ও তামাকজাত দ্রব্যের কর বৃদ্ধি জন্য সরকারকে অনুরোধ করেছেন দেশের প্রখ্যাত ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসহ আহছানিয়া মিশন ক্যান্সার ও জেনারেল হাসপাতালের ১৫০ জন চিকিৎসক। বৃহস্পতিবার আহছানিয়া মিশন থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিবৃতিতে এ কথা জানানো হয়। এক যৌথ বিবৃতিতে ক্যান্সার বিশেষজ্ঞরা বলেন, বিশ্বজুড়ে প্রতিরোধযোগ্য মৃত্যুর প্রধান আটটি কারণের ছয়টির সঙ্গেই তামাক জড়িত। তামাক ব্যবহারের কারণে বিভিন্ন স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি যেমন ক্যান্সার, হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, শ্বাসকষ্ট ও পায়ে পচন এবং ধোঁয়াবিহীন তামাক জর্দা ও সাদাপাতা ব্যবহারের ফলে খাদ্যনালীতে ক্যান্সারসহ নানা শারীরিক জটিলতা সম্পর্কে এখন আর কারও অজানা নয়। গ্লোবাল এডাল্ট টোব্যাকো সার্ভে (গ্যাটস)-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, বাংলাদেশে এখনও ৩৫ দশমিক তিন শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ (তিন কোটি ৭৮ লাখ) তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার করেন, ধূমপান না করেও প্রায় তিন কোটি ৮৪ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ বিভিন্ন পাবলিক প্লেস, কর্মক্ষেত্র ও পাবলিক পরিবহনে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হন। তামাক ব্যবহারের ফলে হৃদরোগ, স্ট্রোক, সিওপিডি বা ফুসফুসের ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি ৫৭ শতাংশ এবং অন্যান্য ধরণের ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি ১০৯ শতাংশ বেড়ে যায়। এ কারণে বাংলাদেশে প্রতি বছর এক লাখ ৬১ হাজারের অধিক মানুষ অকালে মৃত্যুবরণ করেন। এমতাবস্থায়, তামাকের ব্যবহার কমিয়ে আনতে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের পাশাপাশি তামাকজাত দ্রব্যের ওপর করারোপের মাধ্যমে দাম বাড়িয়ে তামাকের ব্যবহার কমানোর উদ্যোগ নেওয়া উচিত। এতে করে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষিত হবে। অন্যদিকে, প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গঠনেও তা সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য মতে, ২০২০-২১ সালের তুলনায় ২০২১-২২ সালে মাথাপিছু জাতীয় আয় দুই হাজার ৫৫৪ ডলার থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৫৯১ ডলার। অথচ এ সময়ে বেশিরভাগ সিগারেটের দাম হয় প্রায় অপরিবর্তিত থেকেছে অথবা সামান্য বেড়েছে। ফলে বর্তমানে সিগারেট অধিক সহজলভ্য হয়ে পড়ছে। এজন্য করারোপের মাধ্যমে সিগারেটের দাম বাড়ানো জরুরি। আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতার পাশাপাশি তামাক নিয়ন্ত্রণের স্বার্থে সর্বোপরি জনস্বার্থে তামাকজাত দ্রব্যের দাম নির্ধারণ এবং তামাকের কর বাড়ানো জরুরি। বাংলাদেশে বর্তমান তামাক কর কাঠামো অত্যন্ত জটিল বিধায় তামাকের ব্যবহার ও ক্রয়-ক্ষমতা হ্রাসে এটি কার্যকর ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হওয়ায় বর্তমানে সিগারেট খুবই সস্তা ও সহজলভ্য হয়ে পড়ছে। ফলে ধূমপান ছেড়ে দেওয়ার পরিবর্তে ধূমপায়ীরা তুলনামূলক কমদামী সিগারেট বেছে নিতে পারছেন। তাই তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারে ধূমপায়ীদের নিরুৎসাহিত করতে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনটি আরও শক্তিশালী করে প্রণয়ন এবং কর বাড়ানোর মাধ্যমে তামাক পণ্যের দাম বাড়ানো আশু জরুরি বলে তারা অভিমত দেন। প্রধানমন্ত্রীর ‘২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশের’ ঘোষণাকে বাস্তবে রূপ দিতে হলে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনকে আরও কঠোর করা ও বিদ্যমান তামাকজাত দ্রব্যের কর কাঠামোর সংস্কারের কোনো বিকল্প নেই বলেও তারা বিবৃতিতে জানান। বিবৃতি প্রদানকারী উল্লেখযোগ্য ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা হলেন, বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটি হাসপাতাল ও ওয়েলফেয়ার হোমের পরিচালক অধ্যাপক ডা. এম এ হাই, বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটির প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক ডা. গোলাম মহিউদ্দিন ফারুক, আহছানিয়া মিশন ক্যান্সার ও জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক, মেডিকেল সার্ভিসেস ও রেডিয়েশন অনকোলজি বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. কামরুজ্জামান চৌধুরী, স্কয়ার হাসপাতালের ক্লিনিক্যাল অনকোলজি এবং রেডিওথেরাপি বিভাগের সিনিয়র কনসালট্যান্ট অধ্যাপক ডা. সৈয়দ আকরাম হোসেন, আহছানিয়া মিশন ক্যান্সার ও জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ও ক্লিনিক্যাল অনকোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. এ এম এম শরিফুল আলম।