রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সারাদেশে আলোচিত লক্ষ্মীপুরের সাবেক জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পৌরসভার মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু তাহেরের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। জেলা প্রশাসক আনোয়ার হোছাইন আকন্দ ও জেলা পুলিশ সুপার মাহফুজ্জামান আশরাফের নেতৃত্বে তাঁকে অগার্ড অব অনার প্রদান করেন। রোববার (১৯ মার্চ) বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে লক্ষ্মীপুর আদর্শ সামাদ সরকারি উচ্চবিদ্যালয় মাঠে জানাযার আয়োজন করা হয়। এতে হাজার হাজার মানুষ জানাজায় অংশ নেন।
প্রশাসনের কর্মকর্তারা,জেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা, মুক্তিযোদ্ধাসহ সর্বস্তরের মানুষ ছিলেন জানাজায়। জানাযা পরিচালনা করেন মাওলানা মহিউদ্দিন। জানাযা শেষে পরে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় লক্ষ্মীপুর পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডে মহিউস সুন্নাহ জালালিয়া মাদ্রাসার কবরস্থানে নিহতের মরদেহ দাফন করা হয়েছে। এরআগে তাঁর কফিনে পুষ্পস্তবক অর্পন করে দল থেকে শ্রদ্ধা জানান, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ এমপি, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ আবু সায়েদ আল মাহমুদ স্বপন এমপি, কেন্দ্রিয় যুব লীগ সাধারণ সম্পাদক নিখিল মানকিন, স্থানীয় সংসদ সদস্য সাবেক মন্ত্রী একেএম শাহজাহান কামাল, জেলা আ.লীগ সভাপতি গোলাম ফারুক পিংকু, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নুরউদ্দিন চৌধুরী এমপিসহ সহযোগী ও সামাজিক অসংখ্য সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। এ সময় পিতার মাগফেরাত কামনা করে সবার কাছে দোয়া চান, মুক্তিযোদ্ধা তাহেরের জেষ্ঠ্য পুত্র আফতাব উদ্দিন বিপ্লব, মেঝো ছেলো সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা যুবলীগ সাবেক সভাপতি একেএম সালাহ উদ্দিন টিপু।
তাঁর জানাযা ইমামতি করেন, মওলানা মো.মহিউদ্দিন। এ সময় সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে আ.লীগ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, তাহের ছিলেন, আওয়ামী লীগের নিবেদিত প্রাণ। তাঁর শূন্যস্থান পূরণ হবার নয়। তিনি তার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন। শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান। কেন্দ্রীয় নেতারা বলেন, লক্ষ্মীপুরের মুকুটহীন সম্রাট ছিলেন তাহের। শ্রমিক রাজনীতি দিয়ে শুরু করলেও পরে তিনি কর্মদক্ষতার মাধ্যমে পুরো লক্ষ্মীপুর জেলার জনপ্রিয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বে পরিণত হন। এমন বিরল সৌভাগ্যবান রাজনীতিবিদ আর কতজন আছে? তার মৃত্যুতে দেশ একজন মহান মুক্তিযোদ্ধা ও রাজনীতিবিদকে হারালো। তার শূন্যতা পূরণ হওয়ার নয়। দলের পক্ষ থেকে সমবেদনা জানাতে আমরা এসেছি।
জানাযায় হাজার হাজার মানুষের ঢল নামে। এরপর তাঁর কফিন নিয়ে যাওয়া হয় উত্তর তেমুহানাী বাঞ্চানগর কালিবাজার সড়কে জালালিয়া মাদ্রাসা প্রাঙ্গনে। সেখানে তার নিজের গড়া কবরস্থানে লাশ দাফন করা হয়। তিনি এলাকায় অর্ধশতাধিক ধর্মীয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সামাজিক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। এর আগে গত শনিবার দুপুর দেড়টার দিকে শহরে অবস্থিত নিজস্ব বাসভবনে মেয়র তাহের ইন্তেকাল করেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্নালিল্লাহি রাজিউন)। বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী এ বীর মুক্তিযোদ্ধা অনেক দিন থেকে ফুসফুস ক্যান্সারে ভোগছিলেন। তিনি স্ত্রী, তিন পুত্র এবং দুই কন্যা-জামাতা, নাত-নাতনীসহ বহু আত্মীয়-স্বজন, সহযোদ্ধা, রাজনৈতিক সহকর্মী রেখে যান।
পরিবার সুত্র জানায়, শনিবার (১৮ মার্চ) দুপুর ১টা ৫০ মিনিটে নিজ বাসায় তিনি অসুস্থজনিত কারণে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স ছিল ৭৪ বছর। তিনি স্ত্রী, তিন ছেলে, দুই মেয়ে এবং বহু রাজনৈতিক সহকর্মীসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। মেয়র আবু তাহের দীর্ঘদিন ধরে ডায়াবেটিস, ফুসফুস ও কিডনি রোগে আক্রান্ত ছিলেন। দেশ-বিদেশে চিকিৎসার পর শহরের নিজ বাসায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর আহবানে ভারতের রাজনগর ক্যাম্পে প্রশিক্ষন শেষে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। পরে আটিলারী গ্রুপ কমান্ডার হিসেবে মহুরী নদী, কোম্পানীগঞ্জ, রামগঞ্জ, লক্ষ্মীপুর ও রায়পুরে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠন হিসেবে নেতৃত্ব দেন। ১৯৫৩ সালের ৮ নভেম্বর লক্ষ্মীপুর বাঞ্ছানগর এক মুসলিম পরিবারে তাঁর জন্ম। তার পিতার নাম মরহুম আনোয়ারুল হক। এদিকে ২০০১ আ.লীগ সরকার পতনের পর তিনি বিএনপি জোট সরকারের আমলে তৎকালীন বিএনপি নেতা এ্যাড. নুরুল ইসলাম হত্যা মামলায় দীর্ঘ ২০০৮ সাল পর্যন্ত কারা নির্যাতন ভোগ করেন। আ.লীগ সরকার গঠনের পর তিনি কারা মুক্তি লাভ করেন। ১৯৭১ সালে তিনি লক্ষ্মীপুর কলেজ ছাত্র নেতা কালীন বঙ্গবন্ধুর ডাকে মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। তিনি ২ নং সেক্টরে মেজর হায়দারের অধীনে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। পরবর্তীতে তিনি ওই মামলায় খালাস পান। তাঁর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে লক্ষ্মীপুরে প্রভাবশালী এক নেতা ও নক্ষত্রের পতন ঘটলো। এ ছাড়া তিনি ১৯৭২-৭৪ সালে জেলা ছাত্রলীগের আহবায়ক, ১৯৭৬ যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক, ১৯৮০ পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, ১৯৮৪ পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি, ১৯৮৭ থানা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ১৯৯০ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ১৯৯৩ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। একই সঙ্গে ১৯৯৮ সালে পৌর চেয়ারম্যান ও ২০১১ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগের নির্বাচিত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
প্রধানমন্ত্রীর শোক: বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতি ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশরতœ জননেত্রী শেখ হাসিনা এমপি এক বিবৃতিতে লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও লক্ষ্মীপর পৌরসভার সাবেক মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ তাহের এর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। দলের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার দিলীপ বড়-য়া প্রেরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে তিনি তাহের মিয়ার পবিত্র আত্মার মাগফেরাত কামনা এবং শোক সন্তপ্ত পরিবার, আত্মীয়-স্বজন, গুনগ্রাহীদের প্রতি সমবেদনা জানান।
আ’লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের শোক প্রকাশ : বাংলাদেশ আ.লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সেঁতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এক শোক বার্তায় লক্ষ্মীপুর জেলা আ.লীগ সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পৌর মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ তাহের এর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। এক বিবৃতিতে তিনি মরহুম তাহেরের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেছেন। শোক বার্তায় তিনি মরহুমের আত্মীয়-স্বজন, শুভাকাংখি, গুনগ্রাহীদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।