সম্প্রতি বনানী থেকে বিএনপির বেশকিছু নেতাকর্মীকে আটক করে পুলিশ। পরে তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা দেওয়া হয়। বিএনপি দাবি করেছে, ঘরোয়া অনুষ্ঠানে খেতে গিয়ে বিনা ওয়ারেন্টে তাদের নেতাকর্মীদের আটক করেছে পুলিশ। এ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হয় পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে। বিনা ওয়ারেন্টে বিএনপি নেতাকর্মীদের আটকের পর সন্ত্রাস বিরোধী আইনে মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার দেখানো কতটা আইনসিদ্ধ হলো? এ প্রশ্নে আইজিপি বলেন, ওয়ারেন্ট ছাড়া কি কাউকে গ্রেপ্তার করা যায় না? পুলিশ যা করেছে আইন মেনেই করেছে। বাংলাদেশে আইন মেনেই সব করছে পুলিশ। শনিবার রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলের পদ্মা হলে আয়োজিত এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে একথা বলেন তিনি। বিএনপি নেতাকর্মীরা বনানীতে কী ধরনের সন্ত্রাসী কাজ করছিলেন- এমন প্রশ্নে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, আপনি এফআইআর দেখলে বুঝতে পারবেন যে কী ধরনের মামলা হয়েছে। এরপরও এটার বিষয়ে তদন্ত হবে। তদন্তের পরে আমরা সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবো। বিএনপি দাবি করেছে বিরোধী দলকে সংক্ষুব্ধ করতে, বাধা দিতেই এভাবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে পুলিশ প্রধান বলেন, এমনটি নয়, মামলার কপি দেখলেই সব পরিষ্কার হবে। এর আগে গত ১৯ মার্চ দিবাগত রাত ১টার দিকে রাজধানীর বনানী ক্লাব থেকে বিএনপির ৫৫ নেতাকর্মীকে আটক করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। ডিবির এই অভিযানে বনানী থানা পুলিশও সঙ্গে ছিল। পুলিশ জানায়, বনানী ক্লাবে বসে বিএনপির এই ৫৫ নেতাকর্মী রাষ্ট্রবিরোধী পরিকল্পনা করছিলেন। সংবাদ পেয়ে পুলিশ তাদের আটক করে। পরে তাদের মধ্যে ৫৩ জনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা দিয়ে আদালতে পাঠায় পুলিশ। এদিকে আলোচিত সোনা ব্যবসায়ী আরাভ খান ওরফে রবিউল ইসলাম দুবাই পুলিশের হাতে আটক হয়েছেন- এমন কোনো তথ্য জানা নেই বলে জানিয়েছেন আবদুল্লাহ আল-মামুন। তবে তিনি বলেছেন, আরাভ খানকে ফিরিয়ে আনার জন্য ইন্টারপোলে রেড নোটিশ জারি করা হয়েছে। সম্প্রতি দুবাই পুলিশের হাতে আরাভ খান আটক হয়েছেন বলে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়। আদৌ আরাভ খান আটক হয়েছেন কি না জানতে চাইলে আইজিপি সরাসরি জানান, দুবাইতে আরাভ খান আটকের কোনো তথ্য জানা নেই। তিনি বলেন, পুলিশ হত্যা মামলার পলাতক আসামি হিসেবে রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খানের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলে রেড নোটিশ জারি করা হয়েছে। আমাদের সঙ্গে ইন্টারপোলের যোগাযোগ রয়েছে। এর আগে, গত বৃহস্পতিবার রাতে ইন্টারপোল ওয়েবসাইটের রেড নোটিশের তালিকায় রবিউল ইসলামের নাম আসে। ইন্টারপোলের রেড নোটিশের তালিকায় ৬৩তম বাংলাদেশি তিনি। গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার যুবক রবিউল ইসলাম নিজের নাম, জাতীয়তা পরিবর্তন করে জোগাড় করেন ভারতীয় পাসপোর্ট। এ পাসপোর্টেই পাড়ি জমান সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই। দুবাই পাড়ি জমিয়ে প্রবাসী বাংলাদেশিদের কাছে তিনি হয়ে ওঠেন ‘আলাদিনের চেরাগ’। দুবাইয়ে ‘আরাভ জুয়েলার্স’ নামের ওই প্রতিষ্ঠানের মালিকের নাম আরাভ খান। মূলত তিনি বাংলাদেশের নাগরিক রবিউল ইসলাম। তবে ভারতে গিয়ে নাম পরিবর্তন করে রাখেন আরাভ খান। পুলিশ বলছে, আরাভ খানই মূলত ঢাকার স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) পুলিশ পরিদর্শক মামুন ইমরান খান হত্যা মামলার পলাতক আসামি রবিউল ইসলাম। তাকে ইন্টারপোলের মাধ্যমে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে। এ ছাড়া তিনি কীভাবে দেশত্যাগ করলেন সেটিও খতিয়ে দেখা হবে।