রাজধানীর মোহাম্মদপুরে যৌতুক না পেয়ে বিচারপতির ভাতিজি ফাতেমা নাসরিনকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন স্বামী মির্জা সাখাওয়াত হোসেন। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শফি উদ্দিনের আদালতে তিনি ফৌজদারি কার্যবিধি ১৬৪ ধারায় দায় স্বীকার করে এ জবানবন্দি দেন। রোববার মোহাম্মদপুর নারী ও শিশু জিআরের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মোজাফফর হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার রিমান্ড চলাকালে তাকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। এ সময় তিনি ঘটনার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিতে সম্মত হওয়ায় তা রেকর্ড করার আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারক তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন। এরপর তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এর আগে বৃহস্পতিবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শান্ত ইসলাম মল্লিকের আদালত তার তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, ফাতেমা নাসরিন ও মির্জা সাখাওয়াত হোসেনের দীর্ঘ ১৯ বছরের দাম্পত্য জীবন। তাদের ১৭ বছরের একটি কন্যাসন্তান রয়েছে। বিয়ের পর থেকেই সাখাওয়াত বিভিন্ন সময় ফাতেমার কাছে যৌতুক দাবি করে আসছিলেন। ফাতেমা যেন ঠাকুরগাঁওয়ে তার পৈতৃক বাড়ি বিক্রি করে এনে তাকে যেন এক কোটি টাকা দেন- এজন্য চাপ দিতেন। ওই পৈতৃক বাড়িতে আরও অনেকের অংশ রয়েছে। তাই একা বিক্রি করা যাবে না বলে ফাতেমা তার স্বামী সাখাওয়াতকে জানান। এতে সাখাওয়াত ক্ষিপ্ত হয়ে ফাতেমাকে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করেন। সন্তান ও সংসারের কথা চিন্তা করে এসব অত্যাচার সহ্য করে আসছিলেন ফাতেমা। দিন দিন সাখাওয়াতের নির্যাতন বেড়ে যাওয়ায় ফাতেমা আর সহ্য না করতে পেরে জানুয়ারি মাসে পঞ্চগড় সদর থানায় নারী নির্যাতন আইনে একটি মামলা করেন। ওই মামলায় সাখাওয়াত গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। পরে তিনি জামিনে বের হয়ে আবারও যৌতুকের টাকার জন্য ফাতেমাকে চাপ দিতে থাকেন। গত ৮ মার্চ যৌতুকের টাকার দাবিতে সাখাওয়াত তার মোহাম্মদপুরের বাসায় ফাতেমাকে চাপ দিতে থাকেন। এতে প্রতিবাদ করলে সাখাওয়াত ধারালো বটি ও মশলা বাটার কাঠের বাটনা দিয়ে ফাতেমার মাথা থেতলে দেন। এ ছাড়া শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুরুতর জখম করেন। সর্বশেষ যখন সাখাওয়াত তার স্ত্রীকে ধারালো দিয়ে জবাই করতে উদ্যত হন, তখন তাদের সন্তান এসে বাধা দেয়। পরে ফাতেমাকে দ্রুত উদ্ধার করে আগারগাঁও ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তিনি গত ১৭ মার্চ রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এ ঘটনায় ১৮ মার্চ ভিকটিমের বড় বোন আরজিনা বেগম (৫২) বাদী হয়ে মোহাম্মদপুর থানায় একটি মামলা করেন।