ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলার ৪ নং গাজীরটেক ইউনিয়ন পরিষদে ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে জলমহল খাতে বরাদ্দ প্রদানকৃত ৫৯ টাকা হরিলুট করা হয়েছে বলে বৃহস্পতিবার জোর অভিযোগ তুলেছেন ওই ইউনিয়ন পরিষদের ৯ জন সদস্য (মেম্বার)।
এর আগের দিন বুধবার ওই ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের মধ্যে বসতবাড়ীর হোল্ডিং নেম প্লেট তৈরী ও সরবরাহর বাবদ গ্রাম থেকে সংগৃহিত অর্থের অতিরিক্ত ৭ লাখ টাকা চেয়ারম্যান মোঃ ইয়াকুব আলী, ইউপি সচিব আঃ ছাত্তার ও ৭ নং ওয়ার্ড মেম্বার রেশাদ বেগ মিলে আত্মসাত করেছেন বলে পরিষদের অন্যান্য মেম্বার সামনা-সামনি অভিযোগ তুলে ধরলে বঞ্চিত মেম্বারদের উপর আকস্মিক হামলা চালায় চেয়ারম্যান গ্রুপ। এ হামলায় ৮ নং ওয়ার্ড মেম্বার মোঃ বশির মোল্যা ও ৪ নং ওয়ার্ড মেম্বার আবুল কালাম আহত হয়ে চরভদ্রাসন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন এবং মেম্বার বশির মোল্যা বাদী হয়ে চরভদ্রাসন থানায় একটি মামলা করেছেন। মামলায় ওই রাতেই মুজিবর বেগ নামক এক আসামীকে গ্রেপ্তারের পরের দিন কোর্টে চালান করেন পুলিশ।
বৃহস্পতিবার উপজেলার গাজীরটেক ইউনিয়ন পরিষদের সুবিধা বঞ্চিত অন্যান্য সদস্যরা অভিযোগে করে বলেন (রেকর্ড সংরক্ষিত), “অত্র ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে চেয়ারম্যান মোঃ ইয়াকুব আলী, ইউপি সচিব আঃ ছাত্তার ও ৭ নং ওয়ার্ড সদস্য প্রভাবশালী রেশাদ বেগ এই তিন জনে মিলে সরকারি প্রকল্পগুলো হরিলুট করে চলেছেন। আমাদের লামছাম দিয়ে না দিয়ে, খাতা কলমে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন দেখিয়ে সরকারের লাখ লাখ টাকা আত্মসাত করে চলেছেন চেয়ারম্যান গ্রুপ। আমরা প্রতিবাদ করলেই আমাদের উপর হামলা করা হয় এবং সমস্ত প্রকার সরকারি সুবধিা প্রাপ্তী থেকে ইউপি সদস্যদের বঞ্চিত করা হয়।
উক্ত ইউপি’র বঞ্চিত সদস্যরা জানান, এ বছর উপজেলা থেকে জলমহল খাতে অত্র ইউনিয়ন পরিষদ উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে প্রায় ৫৯ লাখ টাকা। এরমধ্যে চেয়ারম্যান মোঃ ইয়াকুব আলী একাই নিয়ে গেছেন প্রায় ২৪ রাখ টাকা। বাকী ৩৫ লাখ টাকা মোট ৯ জন ইউপি সদস্যদের মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়ন করার জন্য ভাগাভাগি করা হয়েছে। এতে প্রতিজন ইউপি সদস্য ২ লাখ ৪০ হাজার টাকার একটি করে প্রকল্প ভাগে পেয়েছেন। এই প্রতিজন ইউপি সদস্যর ২ লাখ ৪০ হাজার টাকার প্রকল্পর মধ্যে থেকে ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ ইয়াকুব আলী ৩৮% (শতভাগ) কমিশন অর্থাৎ ৯১ হাজার ২শ’ টাকা চেয়ারম্যান কমিশন দাবী করছেন। চেয়ারম্যান কমিশন বাদ দেওয়ার ১ লাখ ৪৮ হাজার টাকা দিয়ে আমরা এলাকার কি কাজ করবো আর নিজেরাই বা কি খেয়ে বেঁচে থাকুম বলে ৮ ইউপি সদস্য মোঃ বশির মোল্যা হতাশা ব্যক্ত করেন”। একই দিন ওই ইউপি’র আবদুর বর, আবুল কালাম সহ অণ্যান্য মেম্বারা বলেন, “আমরা চেয়ারম্যানের কাছে বার বার আকুতী করেছি যে, আপনি জলমহাল খাতের বরাদ্দকৃত অর্থের ২৪ লাখ টাকা নিয়ে গেলেন, কোনো কাজই করেন নাই। এখন আবার আমারদের নামে বরাদ্দ দেওয়া মাত্র ২ লাখ ৪০ হাজার টাকার প্রতিটি প্রকল্পর উপর ৩৮% (শতভাগ) কমিশন নিলে আমরা বাঁচবো কিভাবে আর জনগণকে আমরা এলাকায় কি উন্নয়ন দেখাবো। কিন্তু ওই চেয়ারম্যান ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বারদের কোনো কথা কর্ণপাত করেন নাই বলে জানিছেন”।
অবশ্য, বৃহস্পতিবার গাজীরটেক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ ইয়াকুব আলীকেএসব অভিযোগের কথা জিজ্ঞেস করলে তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, “ মেম্বারদের সমস্ত অভিযোগ মিথ্যা ও বানানো বলে তিনি উল্লেখ করেন”।
আর ওই ইউপি’র ৮ নং ওয়ার্ড সদস্য সহ অন্যান্যরা জানান, “ আজ আমরা সরকারি কোটি কোটি টাকার প্রকল্পগুলো চেয়ারম্যান কিভাবে আত্মসাত করে চলেছে সেই লিখিত অভিযোগ তৈরী করেছি। এই অভিযোগ পত্রে আমরা ৯ জন ইউপি সদস্য সই ও সীল দিয়ে জেলা প্রশাসক, ইউএনও কার্যালয়, ডিডিএলজি ও দদুক সহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ পেশ করা সহ দুর্নীতিগ্রস্থ চেয়ারম্যানের উপর অনাস্থা আনবো”।
ইউপি সদস্য বশির মোল্যা আরও জানান, ওই চেয়ারম্যান অত্র ইউনিয়নের চৌকিদারী ট্যাক্সের অর্জিত অর্থ, ট্রেড লাইসেন্স সরবরাহ বাবাদ অর্জিত অর্থ ও অন্যান্য খাতের অর্থ কোনো দিনই আমাদের মধ্যে হিসাব দেখান না এবং তিনি কোনো রেজুলেশন সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্যদের দেখান না।
এ ব্যপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার তানজিলা কবির ত্রপার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয় নাই। তিনি অফিসিয়াল বিশেষ কাজে ঢাকায় আছেন বলে জানা যায় এবং তিনি মুঠোফোন রিসিপ করেন নাই।
উল্লেখ, খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে উপজেলার জলমহল খাতে বরাদ্দ প্রদানকৃত অন্যান্য ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে চরভদ্রাসন ইউনিয়ন পরিষদে ৬৯ লাখ টাকা, চর হরিরামপুর ইউনিয়ন পরিষদে ৬০ লাখ টাকা ও চরঝাউকান্দা ইউনিয়ন পরিষদে ৩৩ লাখ টাকা সহ উপজেলার পক্ষ থেকেও কিছু প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে বলে জানা যায়। কিন্তু এ বছর জলমহল খাতের কোনো একটি প্রকল্পই দৃশ্যমান নয় বলে স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়। এ ছাড়া উপজেলার দুর্গোম চরের মধ্যে চরঝাউকান্দা ও চরহরিরামপুর ইউনিয়নের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কিছু ইউপি সদস্য জানান, কিছু দিন ধরে শুনতেছি, এ বছর এই পদ্মার চরাঞ্চলে ৫০ লাখ টাকা ব্যায় বরাদ্দ দিয়ে দুইটি প্রকল্প বাস্তবায়ন দেখানো হয়েছে কিন্তু আমরাতো কোনো উন্নয়ন দেখি নারে সাংবাদিক ভাই”।