একজন বাংলাদেশি চিকিৎসক, জনস্বাস্থ্য সক্রিয়তাবাদী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং মুক্তিযোদ্ধা। তিনি গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র নামক স্বাস্থ্য বিষয়ক এনজিওর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ১৯৮২ সালে প্রবর্তিত বাংলাদেশের ‘জাতীয় ওষুধ নীতি’ প্রণয়ন ও ঘোষণার ক্ষেত্রে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি হলেন
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তার জন্ম ১৯৪১ সালের ২৭ ডিসেম্বর। তিনি চিকিৎসক, জনস্বাস্থ্য সক্রিয়তাবাদী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র নামক স্বাস্থ্য বিষয়ক এনজিওর প্রতিষ্ঠাতা। ১৯৮২ সালে প্রবর্তিত বাংলাদেশের ‘জাতীয় ওষুধ নীতি’ ঘোষণার ক্ষেত্রে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। জাফরুল্লাহর জন্ম ১৯৪১ সালের ২৭ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম জেলার রাউজানে। তার বাবার শিক্ষক ছিলেন বিপ্লবী মাস্টারদা সূর্যসেন। পিতামাতার দশজন সন্তানের মধ্যে তিনি সবার বড়। ঢাকার বকশীবাজারের নবকুমার স্কুল থেকে মেট্রিকুলেশন এবং ঢাকা কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট উত্তীর্ণের পর তিনি ১৯৬৪ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস এবং ১৯৬৭ সালে বিলেতের রয়্যাল কলেজ অব সার্জনস থেকে এফআরসিএস প্রাইমারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। বিলেতের রয়্যাল কলেজ অব সার্জনস-এ এফআরসিএস পড়াকালীন বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে তিনি চূড়ান্ত পর্ব শেষ না-করে লন্ডন থেকে ভারতে ফিরে এসে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়ার নিমিত্তে আগরতলার মেলাঘরে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে গেরিলা প্রশিক্ষণ নেন এবং এরপরে ডা. এম এ মবিনের সাথে মিলে সেখানেই ৪৮০ শয্যাবিশিষ্ট 'বাংলাদেশ ফিল্ড হাসপাতাল' প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা করেন।
তিনি সেই স্বল্প সময়ের মধ্যে অনেক নারীকে প্রাথমিক স্বাস্থ্য জ্ঞান দান করেন যা দিয়ে তারা রোগীদের সেবা করতেন এবং তার এই অভূতপূর্ব সেবাপদ্ধতি পরে বিশ্ববিখ্যাত জার্নাল পেপার 'ল্যানসেট'-এ প্রকাশিত হয়।
স্বাধীন দেশে নিজেকে নিয়োজিত করেছেন গণমানুষের স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়নে। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নারীদের করেছেন প্রাথমিক স্বাস্থ্যকর্মী। প্রথম উদ্যোগ নিয়েছেন জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের। জনকল্যাণধর্মী চিকিৎসানীতির মাধ্যমে দেশে ওষুধের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার নীতি প্রণয়ন, জাতীয় শিক্ষা কমিটির সদস্য হিসেবে অগ্রসর শিক্ষা নীতি প্রণয়ন ও নারী উন্নয়নে রেখেছেন যুগান্তকারী ভূমিকা।
সরকার ও রাষ্ট্রের, ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর যেকোনো অনিয়মের বিরুদ্ধে তিনি দাঁড়িয়েছেন বুকচিতিয়ে। দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ-পরিস্থিতি যখন উত্তপ্ত, অনিশ্চিত তখনই বিবদমান পক্ষের মাঝখানে সমঝোতার সেতুর ভূমিকা নিয়েছেন।
জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে অনন্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি ১৯৭৭ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়াও তিনি ফিলিপাইন থেকে রামন ম্যাগসাইসাই (১৯৮৫) এবং সুইডেন থেকে বিকল্প নোবেল হিসাবে পরিচিত রাইট লাভলিহুড (১৯৯২), মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বার্কলি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘ইন্টারন্যাশনাল হেলথ হিরো’ (২০০২) এবং মানবতার সেবার জন্য কানাডা থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি পেয়েছেন।
২০২১ সালে আহমদ শরীফ স্মারক পুরস্কার পান। মা, মাটি ও মানুষ, জীবনে এই তিন নিয়ে চলেছিলেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী। দশ ভাইবোনের মধ্যে সবার বড় ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তাই পরিবারে বড় ভাই নামে পরিচিত। পরিবারের গণ্ডি ছাড়িয়ে তিনি গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রেরও বড় ভাই নামে পরিচিত। দেশের সেবায় ট্রাস্টি বোর্ড করে ১৯৭২ সালে সাভারে গড়ে তুলেছিলেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র।
ট্টগ্রামের রাউজানে জন্মগ্রহণ করেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। দেশের মাটি ও মানুষের প্রতি এই বীর মুক্তিযোদ্ধার ভালোবাসা অপরিসীম। বর্তমানে দীর্ঘ কর্মময় জীবনের শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে ছিলেন জাফরুল্লাহ। কিন্তু চিন্তা ও মননে ছিলেন যুবক।
গত মঙ্গলবার ধানমন্ডির গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি না ফেরার দেশে পাড়ি জমান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছে ৮১ বছর। ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর দীর্ঘদিন ধরেই কিডনি সমস্যায় ভুগছিলেন। তিনি কখনও বিদেশে চিকিৎসার কথা চিন্তা করেন নি। তার শেষ লক্ষ্য ছিল একটি ক্যানসার হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা, যেখানে অতি সাধারণ মানুষ ক্যানসারের চিকিৎসা নিতে পারবে। মৃত্যুর আগে আরাধ্য কাজ শেষ করে যেতে চেয়েছিলেন এ বীর মুক্তিযোদ্ধা।
এদিকে বিলেতের রয়্যাল কলেজ অব সার্জনস-এ এফআরসিএস পড়াকালীন বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে তিনি চূড়ান্ত পর্ব শেষ না-করে লন্ডন থেকে ভারতে ফিরে এসে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়ার নিমিত্তে আগরতলার মেলাঘরে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে গেরিলা প্রশিক্ষণ নেন এবং এরপরে ডা. এম এ মবিনের সঙ্গে মিলে সেখানেই ৪৮০ শয্যাবিশিষ্ট “বাংলাদেশ ফিল্ড হাসপাতাল” প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা করেন। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে অবদান রাখেন।
জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছিলেন, আমার জীবনে যা কিছু হয়েছে, তা আমার মায়ের জন্য। ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মা হাসিনা বেগম সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, তাঁর বড় ছেলে খুব দরদি। তাই এ ছেলে ডাক্তার হবে, মানুষের সেবা করবে। ২০১৫ সালে মার্জিয়া লিপির সঙ্গে অপ্রকাশিত এই কথপোকথনে জাফরুল্লাহ চৌধুরী উন্মোচন করেছেন তার জীবনের অজানা অনেক কথা।
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী পাকিস্তানি পাসপোর্ট ছিঁড়ে ফেলে বিলাত থেকে দামেস্ক হয়ে ভারতের নয়াদিল্লিতে এসেছিলেন ১৯৭১ সালে। সঙ্গী ছিলেন ডা. এম এ মোবিন। ওষুধপথ্য, শরণার্থী বাংলাদেশিদের জন্য কাপড় আর কিছু যন্ত্রপাতি এনেছিলেন। রাতে ব্যবহারযোগ্য বাইনোকুলার, নদীপথে ব্যবহারের জন্য ডুবোপোশাক এবং মিডগেট নামক কয়েকটি ডুবোতরিও ছিল সে তালিকায়।
নয়াদিল্লি থেকে কলকাতায় বাংলাদেশ হাইকমিশনার এম হোসেন আলী, মুজিবনগর সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ ও মুক্তিবাহিনীর অধিনায়ক কর্নেল এম এ জি ওসমানীর সঙ্গে দেখা করেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী। সেক্টর কমান্ডার খালেদ মোশাররফ, মেজর হায়দার ও জেড ফোর্সের কমান্ডার জিয়াউর রহমানের সঙ্গেও তাঁর দেখা হয়। প্রথম দিনের আলাপ শেষে তাজউদ্দীন আহমদ জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে বলেন, ‘বিভিন্ন জায়গায় যুদ্ধ হচ্ছে। যান, ঘুরে ঘুরে দেখুন। যেকোনো এক ফ্রন্টে যোগ দিন।’
মুক্তিযোদ্ধা সাদেক খানের পরামর্শে গেরিলা যুদ্ধ বুঝতে আগরতলায় চলে আসেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী। বিশ্রামগঞ্জে মুক্তিযোদ্ধা ও শরণার্থীদের জন্য ৪৮০ শয্যার ফিল্ড হাসপাতাল স্থাপন করেন। ১৯৭১ সালের ৩ জুলাই জাফরুল্লাহ চৌধুরী, সেক্টর কমান্ডার এবং কে ফোর্সের অধিনায়ক খালেদ মোশাররফের দুটি অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে থেকে ঢাকায় আসেন। এক. ক্র্যাক প্লাটুন কতটা কার্যকর? দুই. তেল বহনকারী ট্যাংকারের সাপ্তাহিক গতিবিধির সংবাদ জেনে আসা।
ঢাকায় আসার পর কথা ছিল, একজন এসকর্ট-সঙ্গী বকুল আর তাঁকে কোনো এক গোপন স্থানে নিয়ে যাবে রাত্রিযাপনের জন্য। কিন্তু গুলিস্তানে নির্দিষ্ট লোকটির দেখা না পেয়ে তিনি চলে আসেন বকশীবাজারে। সেখানে আলিয়া মাদ্রাসার পাশেই ছিল আলবদর আর আলশামস বাহিনীর হেডকোয়ার্টার। বকশীবাজার মাঠের উল্টো পাশেই নবকুমার ইনস্টিটিউশন। কিছুটা সামনে রয়েছে কেন্দ্রীয় কারাগার। সেই সময় কারাগারের পেছনে ৮ নম্বর উমেশ দত্ত রোডের ছোট্ট বাড়িটিতেই বসবাস ছিল জাফরুল্লাহ চৌধুরীর পরিবারের। সামনে রাস্তায় পুলিশ দেখে রিকশা থেকে দ্রুত লাফ দিয়ে নেমে দেয়াল টপকিয়ে গেট পার হয়ে বাড়ির দরজায় কড়া নাড়েন তিনি। দরজায় শব্দ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘরের বাতিগুলো নিভে যায়। আবারও দরজার কড়া নেড়ে মাকে ডাকেন।
স্মৃতি হাতড়ে কথা বলছিলেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী আর আমরা শুনছিলাম। আমাদের চোখের সামনে যেন ভেসে উঠছিল সেই রক্তাক্ত একাত্তর। জাফরুল্লাহ চৌধুরী আবার শুরু করেন, ‘আমার মা তাঁর ছোট মেয়ে মানে আমার ছোট বোন মিলিকে বলেন, “কচি এসেছে, দরজা খুলেদে।” (জাফরুল্লাহ চৌধুরীর ডাকনাম ছিল কচি)। উত্তরে মিলি মাকে বলে, “বড় ভাই তো বিলাতে।” এ সময় মা আবারও বলেন, “বলেছি তো দরজা খুলে দে। না হলে আমিই যাচ্ছি।”’
মায়ের কথা শুনে জাফরুল্লাহ চৌধুরীর ছোট বোন দরজা খুলে দেন। অন্ধকারে বড় ভাই কচিকে দেখতে পেয়ে আশ্চর্য হয়ে ভাইকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করেন।
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী পাকিস্তানি পাসপোর্ট ছিঁড়ে ফেলে বিলাত থেকে দামেস্ক হয়ে ভারতের নয়াদিল্লিতে এসেছিলেন ১৯৭১ সালে। সঙ্গী ছিলেন ডা. এম এ মোবিন। ওষুধপথ্য, শরণার্থী বাংলাদেশিদের জন্য কাপড় আর কিছু যন্ত্রপাতি এনেছিলেন।
জাফরুল্লাহর ভাষ্যে জানা যায়, সেদিন হাসিনা বেগম বলছিলেন, ‘যুদ্ধকালে যাঁরা মারা যাবেন, তাঁরা শহীদের মর্যাদা পাবেন। যাঁরা বেঁচে থাকবেন, তাঁরা যুদ্ধ জিতে এসে আমাদের মুক্ত করবেন; কিন্তু আমরা যারা দেশের ভেতরে আছি, প্রায় বন্দিজীবন যাপন করছি, তাদের কী হবে? আমি তো জানি না, আমার বড় পাঁচটি মেয়ে নিয়ে আজকের রাতটা নিরাপদে কাটাতে পারব কি না?’
যুদ্ধকালে কোনো এক দিন জাফরুল্লাহ চৌধুরী প্রবাসী সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদকে জিজ্ঞাসা করেন তাঁর মায়ের করা ওই প্রশ্ন। উত্তরে তাজউদ্দীন আহমদ তাঁকে বলেছিলেন, ‘আপনার মা মুক্তিযোদ্ধার মা, আপনার মা একজন মুক্তিযোদ্ধা।’ জাফরুল্লাহ চৌধুরীর ভাষ্যমতে, ‘আমার জীবনে যা কিছু হয়েছে, তা আমার মায়ের জন্য। মা সিদ্ধান্ত নিতেন তাঁর ছেলেমেয়েরা কে কী হবে। মা-ই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, তাঁর বড় ছেলে জাফরুল্লাহ খুব দরদি। তাই এ ছেলে ডাক্তার হবে, মানুষের সেবা করবে। আমি এখন পর্যন্ত যা বলছি, তা আমার মায়ের শেখানো কথাই বলছি।
‘আমার মা হাসিনা বেগম ছিলেন মৌলভি সাহেবের মেয়ে। মামা-খালারা ছিলেন পাঁচজন। মা কখনো স্কুলে যাননি, কিন্তু তাঁর একমাত্র ভাই মেট্রিকে বোর্ডে স্ট্যান্ড করে পরবর্তী সময়ে জজ হয়েছিলেন। মামা বলতেন, আমার বোনটা যদি স্কুলে যেতে পারত, তবে আমাকেও হার মানাত। আমার নানা মেয়েকে স্কুলে পাঠাননি, কিন্তু বছরের শেষে স্কুল পরিদর্শনে যখন ইন্সপেক্টর আসতেন, তখন স্কুল কর্তৃপক্ষ মা হাসিনা বেগমকে ধরে নিয়ে যেতে। মা ইন্সপেক্টরের সব প্রশ্নের উত্তর দিতেন।’
জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মা হাসিনা বেগমের বিয়ে হয়েছিল অল্প বয়সে। বিয়ের ৯ বছর পর তাঁর প্রথম সন্তানের জন্ম হয়। জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বাবা হুমায়ুন মোর্শেদ পেশায় ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা। তিনি কর্মজীবনে লালবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। আদর্শবান হুমায়ুন মোর্শেদ ঐশ্বর্যময় জীবন যাপন না করে সন্তানদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত করতে চেয়েছেন। হাসিনা বেগমও সাধারণ জীবন যাপন করতেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় বিলাত থেকে জাফরুল্লাহ চৌধুরীর দেশে ফিরে আসা এবং দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বিলাতে ফিরে না যাওয়ায় তিনি কখনো আফসোস করেননি; বরং সাভারে গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল করায় তিনি খুব উৎসাহ দিয়েছিলেন।
খালেদ মোশাররফের দেওয়া সেই দুই অ্যাসাইনমেন্ট প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘আমার বন্ধু ছিল জাকারিয়া। তাদের পারিবারিক মালিকানায় ছিল স্পেশালাইজড শিপিং কোম্পানি এবং তেলবাহী জাহাজ-সপ্তডিঙ্গা ও ময়ূরপক্সখী। ক্রুড অয়েল পরিবহন করত জাহাজ দুটি। জাহাজের গতিবিধি সম্পর্কে কোনো চিন্তাভাবনা না করে হঠাৎই কথা প্রসঙ্গে জাকারিয়া বলেন, তোমাদের জাহাজ আক্রমণ করতে হবে চাঁদপুর থেকে খুলনা যাওয়ার পথে। তেলভর্তি জাহাজে সারাক্ষণ আগুন জ্বলতে থাকবে। মাসব্যাপী জাহাজ জ্বলতে থাকলে সেটা সারা বিশ্বে মুক্তিযুদ্ধের বিরাট সফলতার প্রতীক হবে।’
জাফরুল্লাহ চৌধুরীর কথা থেকে জানা যায়, খুলনায় নোঙর করা অবস্থায় মুক্তিযোদ্ধা ডুবুরিরা সপ্তডিঙ্গায় আগুন ধরিয়ে দিয়েছিলেন। পাকিস্তানি বিমা কোম্পানি তেলবাহী জাহাজ জ্বালিয়ে দেওয়ার জন্য কোনোরূপ ক্ষতিপূরণ দেয়নি জাহাজমালিককে। জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বন্ধু জাকারিয়ার মতো লাখ লাখ মানুষের অবদান রয়েছে আমাদের অর্জিত স্বাধীনতায়।
জনস্বাস্থ্য চিন্তাবিদ, ভাস্কুলার সার্জন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী নাগরিক অধিকার আন্দোলনেও বরাবর সোচ্চার ছিলেন। মাঝেমধ্যেই জনসংশ্লিষ্ট নানা বিষয়ে যুক্ত হয়ে সংবাদ শিরোনাম হতেন। অসুস্থ শরীরেও তিনি দেশের মানুষের বাক্স্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের অধিকারের পক্ষে নিয়মিত লড়াই করেছেন। শুধু স্বপ্ন দেখা নয়, স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তিনি আজীবন নিবেদিত ছিলেন। আমৃত্যু সংগ্রামী অপরিমেয় শৌর্য-বীর্যের প্রতীক জাফরুল্লাহ চৌধুরী নিশ্চিতভাবেই স্মৃতির মানসপটে জাগরুক থাকবেন।
লেখক: মো. হায়দার আলী, প্রধান শিক্ষক, মহিশালবাড়ী মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, গোদাগাড়ী, রাজশাহী। ও সহঃ সাধারন সম্পদক, জাতীয় সাংবাদিক সংস্থা, রাজশাহী জেলা শাখা। গোদাগাড়ী, রাজশাহী।