মোখার আঘাতে বাংলাদেশের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত জনপদ সেন্ট মার্টিন। ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্র বাংলাদেশে শুধু সেন্ট মার্টিনের ওপর দিয়েই গেছে, বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৪৭ কিলোমিটার। বাকিটা গেছে মিয়ানমারের ওপর দিয়ে। আট বর্গকিলোমিটার আয়তনের দ্বীপ সেন্ট মার্টিন বঙ্গোপসাগরের উত্তর-পূর্বাংশে অবস্থিত। এটি বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন। দ্বীপটিতে ১১ হাজারের মতো মানুষের বাস। ঘূর্ণিঝড়ের তা-বে ঝুপড়ি-ঘরগুলো মাটির সঙ্গে মিশে গেছে, আধা পাকা ঘর ভেঙে পড়েছে, কোনো কোনো ভবনের টিনের ছাউনি উড়ে গেছে, নারকেল-গাছগুলোর মাথা ভাঙা। নারিকেল জিনজিরা নামে খ্যাত দ্বীপটির নারকেল গাছগুলো মোখার আঘাতে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেন্ট মার্টিনের বেশির ভাগ মানুষের জীবন চলে মাছ ধরে। পরিবারের সদস্যদের কেউ কেউ শীত মৌসুমে পর্যটন ঘিরে কাজ করেন, ক্ষুদ্র ব্যবসা করেন। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে বেশ কিছুদিন ধরে মাছ ধরা বন্ধ। ২০ মে থেকে আবার প্রজনন মৌসুমের কারণে সাগরে ৬৫ দিনের জন্য মাছ ধরা নিষিদ্ধ হয়ে যাবে। এখন পর্যটন মৌসুমও নয়। এমন সময়ে বেশির ভাগ মানুষের জন্য মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে এসেছে ঘূর্ণিঝড় মোখা। ঝড়ে দ্বীপের অধিকাংশ ঘরবাড়ি, হোটেল ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রচুর গাছপালা ও বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে যাওয়ায় দেখা দিয়েছে অনেক কিছুর সংকট। খাবার সংকট ও সুপেয় পানির সংকট তীব্র হারে দেখা দিয়েছে। সেই সাথে বিদ্যুৎ না থাকায় আরও সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। দ্বীপের বিভিন্ন জায়গায় খাওয়ার পানির সংকট। টিউবওয়েলের পানি লবণাক্ত। এখন সেই লবণাক্ততা আরও বেড়েছে। সরকারি-বেসরকারি ত্রাণ ও নগদ সহায়তার দিকে ক্ষুদার যন্ত্রণা নিয়ে তাকিয়ে আছে বিধ্বস্ত সেন্টমার্টিনের এসব বাসিন্দা। সেন্টমার্টিন দ্বীপে ৮০ ভাগ মানুষের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। এই ঘূর্ণিঝড়ে মানুষের প্রাণহানি না হলেও আর্থিকভাবে প্রায় পঙ্গু হয়ে গেছে। বিশেষ করে যারা দরিদ্র তাদের কিছুই নেই। এক জাতীয় দৈনিক পত্রিকা থেকে জানা গেছে, ঢেউটিন সহায়তা দেওয়া হলে টিনগুলো ব্যবহার করার জন্য ঘরের খুঁটিও নেই তাদের। অনেকে ত্রিপল প্লাস্টিকের বেড়া-ছাউনিতে বসবাস করেন। ঝড়ে বাতাসের বেগে সেই শেষ সম্বলও হারিয়েছেন অনেকে। তাই দ্রুততম সময়ের মধ্যে তাদের বসবাসের জন্য ব্যবস্থা করা জরুরি। দ্বীপটিতে জীবিকা নির্বাহের জন্য হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়েছে অধিকাংশ মানুষ। তাই থাকার স্থানের পাশাপাশি কর্মব্যবস্থা তৈরী করাও জরুরী। এ ক্ষেত্রে ত্রাণ বিতরণই শুধু বিবেচ্য বিষয় নয়। দ্বীপে খাবার ও সুপেয় পানির ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে এবং ক্ষতিগ্রস্থদের বাড়ি-ঘর ও জীবিকা নির্বাহের জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে সরকার ও সংশ্লিষ্টদের।