পত্রিকার পাতা খুললেই কিশোর গ্যাংয়ের হাতে খুন-জখমের ঘটনা খবরের শিরোনাম হিসাবে দেখতে পাওয়া যায়। খবরের শিরোনাম হওয়া এসব ঘটনার সিসি ক্যামেরার বীভৎস ফুটেজ কখনো কখনো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও দেখতে পাওয়া যায়। দীর্ঘদিন ধরে রাজধানীসহ সারা দেশে কিশোর গ্যাংয়ের তৎপরতা বৃদ্ধি পেলেও এদের বিরুদ্ধে কার্যত তেমন কোনো শক্ত আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। ফলে এদের তৎপরতা এখন অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে। ঘটনাপ্রবাহ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, রাজধানীতে কিশোর গ্যাংয়ের হাতে কয়েকটি এলাকার বাসিন্দারা রীতিমতো জিম্মি। ঘটেছে একাধিক হত্যাকাণ্ড। অনেক ভুক্তভোগী জানিয়েছেন, এদের পেছনে আসল গডফাদার হিসাবে রয়েছে ‘বুড়ো গ্যাং’। মূলত তাদের কারণে এদের বিরুদ্ধে কেউ কিছু বলতে পারে না। রাজনৈতিক দলের মিছিল-মিটিংয়ে লোক জোগান দেওয়াসহ এলাকায় দলীয় আধিপত্য বিস্তারে ‘কিশোর গ্যাং’কে ব্যবহার করে এই ‘বুড়ো গ্যাং। অনেক এলাকায় ‘বড়ভাই’ হিসাবে পরিচিত এসব ‘বুড়ো গ্যাং’য়ের দৌরাত্ম্য বন্ধ না হলে কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্যও বন্ধ হবে না। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কিশোর অপরাধ দমনে পুলিশের উদ্যোগ প্রশ্নবিদ্ধ। অনেক ক্ষেত্রে শুধু তালিকা করেই দায় সারছে পুলিশ। পুলিশের কর্তাব্যক্তিরা সরাসরি না হলেও পরোক্ষভাবে বলছেন, তালিকা থাকলেও তাদের বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। রাজনৈতিক কারণেও অনেক এলাকায় কিশোর অপরাধীদের তৎপরতা নিয়ন্ত্রণে পুলিশকে বেগ পেতে হয়। মূলত গ্যাং সংস্কৃতি পাশ্চাত্য সমাজে দেখা গেলেও আমাদের দেশে কিশোর গ্যাং বৃদ্ধির অন্যতম কারণ দারিদ্র্য। রাজনীতিতে থাকা বড়ভাই-ছোটভাই সংস্কৃতিকে ব্যবহারের মাধ্যমে নিজেদের ধরাছোঁয়ার বাইরে রেখে ক্ষমতা আর আধিপত্য বজায় রাখছেন স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা। ফলে পুলিশ আইন প্রয়োগ করতে গেলেই আসছে তাদের অদৃশ্য বাধা। এগুলো তাই আইন বা পুলিশি ব্যবস্থা দিয়ে বন্ধ করা কঠিন। সেক্ষেত্রে সমাজের ভেতর থেকেই বিপথগামী কিশোরদের সংশোধনের উদ্যোগ নিতে হবে। প্রত্যেক অভিভাবককে তাদের সন্তানের বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে। খেলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে কিশোরদের যুক্ত রাখলে অপরাধে জড়ানো থেকে তাদের বিরত রাখা যাবে। কিশোর অপরাধ নির্মূলে সবার আগে প্রয়োজন নজরদারি। এ ক্ষেত্রে পরিবার, সমাজ তথা রাষ্ট্রকেই ভূমিকা রাখতে হবে। বিশেষ করে কিশোর গ্যাংকে যারা পুষছে, বিভিন্নভাবে উস্কানি দিচ্ছে অস্ত্র ও আইনের হাত থেকে ছাড়িয়ে আনছে সেসব পৃষ্ঠপোষকদের রুখতে হবে।