রাঙামাটিস্থ কাপ্তাই হ্রদের পানি অস্বাভাবিকভাবে শুকিয়ে গেছে। তীব্র তাবদাহের কারণে পানি শুকিয়ে হ্রদের বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য চর জেগে উঠেছে। এতে নদীকেন্দ্রিক যোগাযোগ, ব্যবসা-বাণিজ্য, মৎস্য উৎপাদন ও পর্যটনে ক্ষতির পাশাপাশি জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের উৎপাদন কমেছে। পানি শুকিয়ে যাওয়ায় দূষণের সঙ্গে বেড়েছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের পানি পরিশোধন খরচও। ইতিমধ্যেই রাঙামাটি সদরের সঙ্গে পাঁচ উপজেলা বাঘাইছড়ি, লংগদু, জুরাছড়ি, বিলাইছড়ি ও বরকল উপজেলা সদরের যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে যাত্রী ও পণ্য পরিবহন কষ্টকর হয়ে পড়েছে। মার্চের মাঝামাঝি সময়ে চর জেগে উঠেছে রাঙামাটির আসামবস্তির সেতু এলাকায়। প্রতিবছর এপ্রিলের দিকে এই এলাকার পানি শুকিয়ে যায়। তবে এবার প্রচণ্ড দাবদাহে এক মাস আগেই পানি শুকিয়ে গেছে। এখন সেতুর নিচের অংশে বিশাল এলাকাজুড়ে চর পড়েছে। গজিয়েছে লম্বা ঘাস। নৌযানে লোকজনের যাতায়াত ও পণ্য পরিবহন কষ্টসাধ্য হওয়ার ফলে বেড়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম। জৈষ্ঠ্যের খরতাপে দীর্ঘ পথ পায়ে হেঁটে মানুষকে গন্তব্যে পৌছাতে হচ্ছে। তীব্র তাপদাহের এই শুষ্ক মৌসুমে পাহাড়ি এলাকাগুলোতে দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট। সুপেয় পানির জন্য কয়েক মাইল হেঁটে তাদের খাবার পানি সংগ্রহ করতে হচ্ছে। চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে হ্রদ নির্ভর বাসিন্দাদের। হ্রদ ভরাট হয়ে যাওয়ার প্রভাব পড়েছে মৎস্য উৎপাদনে। মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র সূত্র মতে, ২০১৯-২০ সালে রাঙামাটির মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে হ্রদ থেকে মোট মাছ পাওয়া যায় ৮ হাজার ৫৬৩ মেট্রিক টন। ২০২১-২২ সালে পাওয়া যায় ৬ হাজার ৫২৩ টন। হ্রদের পানি শুকিয়ে যাওয়ায় কমে গেছে কাপ্তাই জল বিদ্যুতের উৎপাদনও। পাকিস্তান সরকারের আমলে জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে কাপ্তাইয়ের কর্ণফুলী নদীতে বাঁধ দিয়ে সৃষ্টি হয় সাতশ’ বর্গকিলোমিটার আয়তনের বিশ্বের দীর্ঘতম কৃত্রিম কাপ্তাই হ্রদ। ১৯৬২ সালে কাপ্তাইয়ে নির্মিত কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বর্তমানে ৫টি ইউনিটের উৎপাদন সক্ষমতা মোট ২৪২ মেগাওয়াট। উজানে পর্যাপ্ত পানি থাকলে সবগুলো ইউনিট চালু থাকে। কিন্তু এখন মাত্র একটি ইউনিট চালু আছে, যা থেকে বিদ্যুৎ মিলছে দিনে ২৫ মেগাওয়াট। উজান থেকে নেমে আসা পলিমাটি এবং পাহাড় হতে ধসে পড়া মাটি কাপ্তাই হ্রদের তলদেশে জমা হচ্ছে। এ কারণে হ্রদের তলদেশ ইতোমধ্যে অনেকটা ভরাট হয়ে গেছে এবং হ্রদের সার্বিক জল ধারণক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে। এছাড়াও অনাবৃষ্টি, বন উজার হওয়া, কাপ্তাই হ্রদে নব্যতা সংকটের কারণে পানি তলানিতে চলে যাওয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদনের এই বিপর্যয়। তাই বনাঞ্চলে গাছপালা রক্ষা করতে হবে। সরকারকে এ বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। কাপ্তাই হ্রদ কেন্দ্রিক অর্থনৈতিক কার্যক্রম ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে সচল রাখতে হলে অনতিবিলম্বে হ্রদের তলদেশে জমাটবদ্ধ পলিমাটি অপসারণে জরুরি ভিত্তিতে ড্রেজিংয়ের ব্যবস্থা করা দরকার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।