সংবাদ করার জেরে জামালপুরের বকশিগঞ্জ উপজেলার পানহাটি এলাকায় সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিমকে নৃশংসভাবে খুন করেছে ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা বাবুর সন্ত্রাসী বাহিনী। নাদিম দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার বকশিগঞ্জ উপজেলা প্রতিনিধি ছিলেন। এছাড়াও তিনি ৭১ টিভি ও বাংলানিউজ২৪ডটকমের জামালপুর জেলা প্রতিনিধি ছিলেন। এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন নাদিমের সহযোগি ও পরিবারের লোকজন। এই হত্যা কান্ডের প্রতিবাদে গতকাল সন্ধ্যায় প্রতিবাদ সভা করেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল প্রেসক্লাব। সভায় নির্মম এই ঘটনার প্রতি তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে ঘটনার মূল হোতা আ.লীগ নেতা মাহমুদ আলম বাবু সহ জড়িত সকলকে দ্রƒত গ্রেপ্তার করে আইনি প্রক্রিয়ায় সর্বোচ্চ বিচারের দাবি জানিয়েছেন সাংবাদিকরা। প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মাহবুব খানের সঞ্চালনায় ও সভাপতি মো. আইয়ুব খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য রাখেন প্রেসক্লাবের সহসভাপতি এম.এ মুসা, মো. জুলকার নাঈন, যুগ্ম সম্পাদক সৈয়দ কামরূজ্জামান, অর্থ সম্পাদক আবদুল করিম, দপ্তর সম্পাদক মোহাম্মদ মাসুদ, সদস্য সামছুল আরেফিন, মো. মুরাদ খান, ত্রিতাল সংগীত নিকেতনের অধ্যক্ষ সঞ্জীব কুমার দেবনাথ, উদীচীর সভাপতি মো. মোজাম্মেল পাঠান, ত্রিতালের শিক্ষক মো. আলমাছ প্রমূখ। বক্তারা বলেন, গণমাধ্যম ও নিহত নাদিমের স্বজনদের সূত্রে জানা যায়, সাধুরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও একই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ আলম বাবুর প্রথম স্ত্রী স্বামীর বিরূদ্ধে প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেছিলেন। আর এই সংবাদ প্রকাশ করেছিলেন নাদিম। এর জেরে নাদিমের উপর ক্ষুদ্ধ হন আ.লীগ নেতা বাবু। গত ১৪ জুন নাদিমসহ আরো দুই সাংবাদিকের বিরূদ্ধে ময়মনসিংহের সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলা করেছিলেন বাবু। গত ১৪ জুন বুধবার ওই মামলাটি খারিজ করে দেন আদালত। আর বুধবার রাত রাত ১০টার দিকে পানহাট এলাকায় নাদিমের উপর হামলা চালিয়ে খুন করে বাবুর পালিত সন্ত্রাসী বাহিনী। আওয়ামী লীগ নেতার বাহিনীর হামলায় সাংবাদিক নাদিম খুনের খবরটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমে দ্রƒত ছড়িয়ে পড়লে সারা দেশের সাংবাদিকরা ক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠেন। নিজেদের আখের ঘুচানোর জন্য আ.লীগে এখন কিছু হাইব্রিড ও রাজাকারের উত্তরসূরী প্রবেশ করেছে। তাদের নিয়ন্ত্রণহীন অনিয়ম দূর্নীতি লাম্পট্য ও লুটপাট অব্যাহত রাখতে পাগল হয়ে গেছে। আর এরাই কিছু রাজাকারের উত্তরসূরি ও কথিত সাংবাদিকের কাঁদে ভর করে প্রকৃত স্বচ্ছ সাংবাদিকতার গলা টিপে ধরে লিখনির স্বাধীনতাকে হত্যা করতে এখন মরিয়া। মাহমুদুল আলম ওই দলেরই সদস্য। নতুবা নাদিম বারবার কেন আ.লীগ নেতা বাবুর টার্গেটের শিকার হবে। বাবুর মত নেতারা বর্তমান সরকার তথা আওয়ামী লীগের ভেতরে কৌশলে প্রবেশ করে নীল নকশা বাস্তবায়নের মাধ্যমে ধ্বংসের চক্রান্তে লিপ্ত। মুখে বলবেন সাংবাদিকরা রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। জাতীর বিবেক। আর বাস্তবে সত্য কথা লিখলেই সাংবাদিককে খুন করে ফেলবেন? সাংবাদিকের স্ত্রীকে পড়াবেন বিধবার শাড়ি। আর সন্তানদের চিরতরে করবেন এতিম। এ কেমন গণতন্ত্র? সংবাদ কর্মীদের জীবন রক্ষায় সরকারের কী কোন দায়িত্ব নেই? এখনো স্বচ্ছ সাংবাদিকতা আছে বলেই দেশ, দেশের মানুষ কিছুটা হলেও স্বস্তিতে আছেন। টিকে আছে গণতন্ত্র। সাংবাদিক নির্যাতন ও হত্যাকারী দেশ, গণতন্ত্র ও দেশের মানুষের শত্রƒ। আমরা সাংবাদিক হত্যাকারীদের দ্রƒত গ্রেপ্তার ও সর্বোচ্চ বিচার দাবি করছি। নতুবা সারা বাংলাদেশের সাংবাদিক সমাজ ঐক্যবদ্ধ হয়ে কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে।
প্রসঙ্গত. গত বুধবার পেশাগত দায়িত্ব পালন বুধবার রাতে বাড়ি ফিরছিলেন নাদিম। রাত ১০টার দিকে পানহাট এলাকায় নাদিমের উপর হামলা চালায় বাবুর সন্ত্রাসী বাহিনী। মারধর করে গুরূতর জখম করে পালিয়ে যায় বাবুর লোকজন। নাদিমকে প্রথমে জামালপুর হাসপাতালে পরে অবস্থার অবনতি দেখে গভীর রাতে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত বৃহস্পতিবার সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৩ সন্তানের জনক নাদিম মারা যায়। নাদিমের স্ত্রী মনিরা বেগম জানিয়েছেন সংবাদ প্রকাশকে কেন্দ্র করে নাদিমের উপর অসস্তুষ্ট ছিলেন ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম। এর আগে সংবাদ প্রকাশকে কেন্দ্র করেই গত ১১ এপ্রিল নাদিমের উপর হামলার ঘটনা ঘটেছিল। আওয়ামী লীগ নেতার সমর্থকদের হামলায় সাংবাদিক নাদিম খুনের খবরটি দ্রƒত ছড়িয়ে সারা দেশের সাংবাদিকরা ক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠেন।