জেলার বানারীপাড়া উপজেলার বিশারকান্দি ইউনিয়নের কলাভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১৩ বছর ধরে নেই প্রধানশিক্ষক। সাতটি পদের অনুকূলে মাত্র তিনজন সহকারী শিক্ষক রয়েছেন।
তাদের মধ্যে একজন সহকারী শিক্ষক শারমিন পারভীনকে প্রধানশিক্ষকের চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ফলে তাকে প্রশাসনিক কাজেই বেশি ব্যস্ত থাকতে হয়। মাঝেমধ্যে তাকে প্রত্যন্ত জনপদের এ বিদ্যালয় থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরত্বেও সন্ধ্যা নদী পাড় হয়ে উপজেলা সদরের শিক্ষা কার্যালয়ে দাপ্তরিক কাজে যেতে হয়। অংশ নিতে হয় প্রশিক্ষন ও ক্লাস্টারসহ বিভিন্ন সভায়। তখন তিনি ক্লাস নিতে পারেন না। ওইসময় বাকি দুইজন সহকারী শিক্ষককে সামলাতে হয় পুরো বিদ্যালয়। ফলে পাঠদানসহ শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
একই চিত্র বানারীপাড়া উপজেলার ৩৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। এসব বিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন থেকে প্রধানশিক্ষক নেই। ফলে ভারপ্রাপ্ত প্রধানশিক্ষকে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভারাক্রান্ত হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া উপজেলার ১২৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৬২ সহকারী শিক্ষকের পদও রয়েছে শূন্য।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বছরের পর বছর ধরে প্রধানশিক্ষক নেই উপজেলার পশ্চিম বিশারকান্দি, পূর্ব বিশারকান্দি, মধ্য বিশারকান্দি, উত্তর বিশারকান্দি, উত্তর বিশারকান্দি বটতলা, দক্ষিণ বিশারকান্দি, কলাভিটা, দক্ষিণ পশ্চিম উমারেরপাড়, বলদিয়া ইলুহার, দক্ষিণ ইলুহার, মলুহার, মধ্য মলুহার, মলুহার বালীবাড়ী আদর্শ, পশ্চিম মলুহার, বড় করফাকর, নলশ্রী, তালাপ্রসাধ, পূর্ব সৈয়দকাঠী, পশ্চিম সৈয়দকাঠী, বাওয়ালিয়া, চাখার, সলিয়াবাকপুর এ রব, খোদাবকসা, দক্ষিণ বাইশারী, নাটুয়ারপাড়, কচুয়া রাঢ়ীপাড়া, পশ্চিম বাইশারী, গঙ্গামণি, তেঁতলা মধুরভিটা, উত্তর তেঁতলা, উদয়কাঠী ইউনিয়ন প্রগতি, ত্রিমুখী কদমবাড়ী মন্ডলপাড়া, দিদিহার শেরেবাংলা, মধ্য সৈয়দকাঠী-১, উত্তর সৈয়দকাঠী ও পূর্ব উদয়কাঠী মোহাম্মদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা সদরের স্কুলগুলোতে অবসরের কারণে পদ শূন্য হলে অন্য এলাকা থেকে বদলি হয়ে পদ পূরণ হয়। কিন্তু প্রত্যন্ত এলাকার স্কুলগুলোতে অবসরে যাওয়ার পর পদ শূন্যই থেকে যাচ্ছে। কারণ এসব প্রত্যন্ত এলাকার স্কুলগুলোতে কোন শিক্ষক বদলী হয়ে আসতে চাচ্ছেন না। যেকারণে প্রতিবছরই বাড়ছে প্রধানশিক্ষকের পদশূন্য স্কুলের সংখ্যা।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রধানশিক্ষকের পদগুলো ৬৫ ভাগ পদোন্নতির মাধ্যমে এবং ৩৫ ভাগ সরাসরি নিয়োগের মাধ্যমে পূরণের বিধান রয়েছে। তবে দীর্ঘদিন থেকে সরাসরি প্রধানশিক্ষক পদে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছেনা। আবার সহকারী শিক্ষকদের প্রধানশিক্ষক পদে পদোন্নতি দেওয়াও বন্ধ রয়েছে। তাই প্রধানশিক্ষকের শূন্য পদ পূরণ করা যাচ্ছেনা।
এ ব্যাপারে বানারীপাড়া উপজেলা শিক্ষা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম ফারুক বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়েই শিশুদের শিক্ষার ভিত তৈরি হয়। তাই সেখানে পাঠদান সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য পদোন্নতি ও নিয়োগ সংক্রান্ত সব জটিলতার অবসান হওয়া জরুরি হয়ে পরেছে। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম তালুকদার বলেন, দীর্ঘদিন থেকে পদোন্নতি ও নিয়োগ বন্ধ থাকায় প্রধানশিক্ষক পদে শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে শুধু পাঠদানই নয়; শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি ও অফিসিয়াল তথ্য দেওয়াসহ বিদ্যালয়ের সার্বিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, মামলাসহ যেসব জটিলতা রয়েছে, তা দূর করে প্রধানশিক্ষক নিয়োগ দেওয়া এখন অতি জরুরি হয়ে পড়েছে।