দেশের গণপরিবহনব্যবস্থা নিয়ে মানুষের ক্ষোভ, দুর্ভোগ, অভিযোগের কোনো শেষ নেই। এসব নিয়ে অনেক কথা হয়, অনেক পরিকল্পনা হয়, অনেক প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়; কিন্তু বাস্তবে তার কোনো সুফল পাওয়া যায় না। প্রতিদিন কতসংখ্যক ফিটনেসবিহীন যানবাহন রাস্তায় চলাচল করে তার কোনো সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান কারো কাছে আছে বলে মনে হয় না। সম্প্রতি দেশের সড়কগুলোতে চলাচল অনুপযোগী, অচল ঘোষিত বা মেয়াদ শেষ হওয়া মোটরযান বিনষ্ট করে ফেলতে একটি নীতিমালার খসড়া চূড়ান্ত করেছে সরকার। নীতিমালার খসড়ায় বলা হচ্ছে, কোনো যানের মেয়াদ শেষ হলে ওই যান স্ক্র্যাপ করতে হবে। স্ক্র্যাপ করার মতো গাড়ি থাকতে ওই যানের মালিক অন্য কোনো যানের নিবন্ধন পাবেন না। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অধীন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ থেকে খসড়াটি মতামতের জন্য প্রকাশ করা হয়েছে। নীতিমালা পাস হলে আনফিট বা অচল গাড়ি স্ক্র্যাপ করা যাবে। অর্থাৎ পুনর্ব্যবহারযোগ্য যন্ত্রাংশ আলাদা করে মোটরযানটি ধ্বংস করা যাবে। প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) এরইমধ্যে স্ক্র্যাপযোগ্য গাড়ির সংখ্যা নির্ধারণ করেছে। বিআরটিএর হিসাব অনুযায়ী সারা দেশে স্ক্র্যাপযোগ্য বাস ও মিনিবাসের সংখ্যা ৩৩ হাজার ১৭৪। অথচ সর্বশেষ গত মে মাসের এক হিসাবে দেখা যায়, ওই মাস পর্যন্ত দেশে নিবন্ধিত বাস ছিল ৫৩ হাজার ৪৮৫টি। কারো কাছে সুনির্দিষ্ট তথ্য না থাকলেও, এটা সবাই মেনে নিচ্ছে যে যেসব গাড়ির মান ভালো না সেগুলোর কারণেই দুর্ঘটনা বেশি হচ্ছে। দুর্ঘটনার জন্য বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আনফিট গাড়ি দায়ী। একটি অচল গাড়ির কারণে তৈরি হয় অতিরিক্ত কালো ধোঁয়া, যা পরিবেশের জন্য ব্যাপক ক্ষতিকর। এক গবেষণায় দেখা যায়, বর্তমানে ঢাকার মোট বায়ুদূষণের ১৫ শতাংশ হচ্ছে যানবাহনের কারণে। ফিটনেসবিহীন যানবাহনের কারণে কালো ধোঁয়া সৃষ্টি হয়। বিআরটিএ আইন বলছে, মোটরযান স্ক্র্যাপ মানে মোটরযান থেকে পুনর্ব্যবহারযোগ্য যন্ত্রাংশ আলাদা করার পর বিনষ্ট বা ধ্বংস করা। সড়ক পরিবহন আইনের মাধ্যমে গাড়ির মেয়াদ নির্ধারণ করা হয়েছে। নীতিমালার খসড়ায় বলা হচ্ছে, কোনো যানের মেয়াদ শেষ হলে ওই যান স্ক্র্যাপ করতে হবে। স্ক্র্যাপ করার মতো গাড়ি থাকতে ওই যানের মালিক অন্য কোনো যানের নিবন্ধন পাবেন না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু নিবন্ধনের সময় ধরে একটি গাড়িকে চলাচল অনুপযোগী ঘোষণা করা ঠিক হবে না। কম বছরেও গাড়িটি বেশি সময় চলতে পারে। এতে গাড়ির অবস্থা দ্রুত খারাপ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। আমরা আশা করি ফিটনেসবিহীন যানবাহন সড়কে থাকবে না। সেটা নিশ্চিত করতে দেশের সড়কগুলোতে চলাচল অনুপযোগী, অচল ঘোষিত বা মেয়াদ শেষ হওয়া মোটরযান বিনষ্ট করার নীতিমালাটি দ্রুত পাস হবে।