সরাইলের উত্তর কালীকচ্ছ মডেল স্কুলে যাত্রা শুরূ হয়েছে ‘সততা ষ্টোর’ এর। দুদক কর্তৃক বরাদ্ধ দেয়া ওই ষ্টোরটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়েছে গত বৃহস্পতিবারে। শিক্ষক শিক্ষিকা শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে ষ্টোরটির উদ্বোধন করেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সরাইল প্রেসক্লাবের সভাপতি মো. আইয়ুব খান, সহকারি প্রধান শিক্ষক মো. বিলাত খাঁ, সুহৃদ সোসাইটির সভাপতি মো. আমির আলী, সরাইল মহিলা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ, প্রেসক্লাবের সম্পাদক মোহাম্মদ মাহবুব খান ও ডাচবাংলা ব্যাংক কালীকচ্ছ শাখার ব্যবস্থাপক মো. আফজাল হোসেন রানা। ষ্টোরটির পর্দা উঠার পরই আনন্দে ভাসতে থাকে বিদ্যালয়ের তিন শতাধিক শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা। টাকা নিয়ে ছুটাছুটি শুরূ করে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। ষ্টোরের সামনে এসে দাঁড়ায়। ভাল করে তাকিয়ে দেখে মূল্য তালিকা। তারপর নির্ধারিত বক্সের ছিদ্র দিয়ে টাকা প্রবেশ করায়। পছন্দের মজা/খাবারটি নিয়ে চলে যাচ্ছে। কারণ কর্তৃপক্ষ আগেই ঘোষণা দিয়েছেন এটির নাম সততা ষ্টোর। এই ষ্টোরে কোন বিক্রেতা নেই। কেউ টাকা চাইবে না। টাকা না দিলেও কিছু বলার লোক থাকবে না। ক্রেতারা মাল পছন্দ করবে। মূল্য তালিকা অনুযায়ী টাকা দোকানে সংযুক্ত বক্সের ছিদ্রে রাখবে। মাল নিয়ে চলে যাবে। দিন শেষে অর্থাৎ স্কুল ছুটির পর ষ্টকের সাথে মিলিয়ে হিসাব করা হবে। মালের সাথে বিক্রির টাকার হিসাব পুরোপুরি মিলে গেলে বুঝতে হবে আজকের সকল ক্রেতা (শিক্ষার্থীরা) অবশ্যই সততার স্বাক্ষর রেখেছে। বিক্রেতা বিহীন ষ্টোরে সুযোগ থাকা সত্বেও কেউ টাকা কম দেয়নি। জীবনে সততা অর্জন করা বা সৎ হওয়ার বড় একটি প্রশিক্ষণ এটি। নার্সারী শ্রেণির শিক্ষার্থী সাদ, তুষা, প্রথম শ্রেণির আরাছ, পঞ্চম শ্রেণির লুবাবা, ৬ষ্ট শ্রেণির শেখ সাদমান, মোকাররমা, আশিক, মারিয়া ও অষ্টম শ্রেণির রায়দা, পরশি ও রাজন বলে, আমাদের বিদ্যালয়টির এক/দেড় কিলোমিটারের মধ্যে মজা বা হালকা খাবারের কোন দোকান নেই। সকাল গড়িয়ে দুপুর হলেই ক্ষুধায় ছটফট করি। টাকা থাকলেও খাবারের কোন ব্যবস্থা ছিল না। খুবই কষ্ট হয়েছে। ২০ টাকার খাতার জন্য ভাড়া গুণতে হয়েছে ২০/৪০ টাকা। দীর্ঘদিন পর বিদ্যালয়ের ভেতরে এমন একটি ষ্টোর পেয়ে আমরা খুবই আনন্দিত। এখন কষ্টের দিন শেষ। তিন বছর পর সততা ষ্টোরটি আমাদের দূর্ভোগ লাঘব করেছে। মূহুর্তের মধ্যে হাতের কাছে দোকানের মূল্যেই পাচ্ছি মজা/খাবার ও খাতা কলম। অভিভাবক জনাব আলী, আবদুল মোতালিব ও মুক্তা বেগম বলেন, সততা ষ্টোর আমাদের টেনশন দূর করেছে। বাচ্চাদের খাবার ও খাতা কলম নিয়ে সর্বক্ষণ ভাবতে হতো। এখন থেকে আর ভাবতে হবে না। সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি সততা ষ্টোরের ক্যাশ বাক্সে মালের টাকা জমা করে বাচ্চারা সততার প্রশিক্ষণ পাবে। তাই খুবই ভাল লাগছে। আমরা দুদক ও বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে কৃতজ্ঞ। সততা ষ্টোরটি যেন কোন ভাবেই বন্ধ না হয়। সূত্র জানায়, বিদ্যালয়ের পাঠদান শুরূ থেকে ছুটি পর্যন্ত খোলা থাকবে ষ্টোর। প্রয়োজনে শিক্ষার্থীদের মালামাল গ্রহনে সহযোগিতার জন্য সর্বক্ষণ প্রস্তুত থাকবেন- শিক্ষক মো. কামরূল ইসলাম, নাজমুল হোসেন ইকবাল ইসমোনাক, জসিম রেজা, আল আমিন, মো. মোবারক, শিক্ষিকা নাঈমা জান্নাত, হাজেরা বেগম, শামসুন্নাহার, তাহমিনা আক্তার, সাথী বেগম, নাছরিন আক্তার, তারিন বেগম, সাঈমা আক্তার, হেপি আক্তার, ময়না বেগম।