অর্থের বিনিময়ে যোদ্ধা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ওয়াগনার গ্রুপের প্রধান ইয়েভজেনি প্রিগোশিন রাশিয়ার সামরিক নেতৃত্বকে উৎখাতের হুমকি দেওয়ার পর রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন প্রথমবারের মতো ভাষণ দিয়েছেন। শনিবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে পুতিন সব বাহিনীকে সংহতি বজায় রাখার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “যা কিছু ঘটছে, তা ‘বিশ্বাসঘাতকতা'। এটি ‘দেশের জনগণের পিঠে ছুরি চালানোর শামিল'।” ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, টেলিভিশনে প্রচারিত সংক্ষিপ্ত ভাষণে একবারও প্রিগোশিনের নাম উচ্চারণ করেননি পুতিন। তিনি শুধু ওয়াগনার গ্রুপের নাম উল্লেখ করেছেন এবং রাশিয়ার জন্য লড়াই করায় বাহিনীর যোদ্ধাদের প্রশংসা করেছেন। একইসঙ্গে রাশিয়ার সুরক্ষা দেওয়ার অঙ্গীকার করেন পুতিন। জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, “সংকট মোকাবিলায় সব ধরনের প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”পুতিন বলেন, কারও কারও প্রচণ্ড উচ্চাকাক্সক্ষার কারণে ‘বিশ্বাসঘাতকতা'র মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়ে যায়। যারা রাশিয়ার সমাজে বিভক্তি তৈরি করবেন, তাদের অনিবার্যভাবে সাজার মুখোমুখি হতে হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি। ওয়াগনার এর প্রধান ইয়েভজিন প্রিগোজিন শুক্রবার এক অডিও বার্তায় রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহের ঘোষণায় বলেন, “তারা (রুশ বাহিনী) আমাদের বিভিন্ন সেনা শিবিরের ওপর ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। এসব হামলায় আমাদের অনেক সহযোদ্ধা সেনাসদস্যের মৃত্যুও হয়েছে।” ওয়াগনার প্রধান জানিয়েছেন, তার দলের যোদ্ধারা রাশিয়ার সীমান্ত এলাকায় ঢুকেছে এবং মস্কোর সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করতে প্রস্তুত। হঠাৎ কেন এমন পরিস্থিতি, তা এখনও অস্পষ্ট। তবে, সম্প্রতি নানা কারণে পুতিনের প্রশাসনের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হয়েছে তা বলায় যায়। নতুন করে উত্তেজনা নিয়ে শনিবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের প্রতিবেদনে এসেছে, রাশিয়ার সশস্ত্র ভাড়াটে বাহিনীটির প্রতিষ্ঠাতা প্রিগোজিন পুতিনের সশস্ত্র বাহিনীর নেতৃত্বের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ দাঁড় করিয়েছেন। তার দাবি, একটি ক্যাম্পে হামলা চালিয়ে তার অনেক যোদ্ধা হত্যা করেছে। এদিকে রাশিয়ার ফেডারেল সিকিউরিটি সার্ভিস (এফএসবি) সশস্ত্র বিদ্রোহের জন্য তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি অভিযোগ এনেছে বলে রুশ সংবাদ সংস্থা তাস। ২০২২ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযান শুরু করে রুশ বাহিনী। এই অভিযান শুরুর কয়েক মাস পর রুশ বাহিনীর সঙ্গে যোগ দেয় রুশভিত্তিক বেসরকারি সামরিক কোম্পানি পিএমসি ওয়াগনার। ইউক্রেন ছাড়াও সিরিয়া, লিবিয়া, মালিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অর্থের বিনিময়ে সরকারি বাহিনীর সহযোগী হিসেবে যুদ্ধ করছেন ওয়াগনারের সেনাসদস্যরা। রুশ কমান্ডের নেতৃত্বে রাশিয়ার সরকারি সেনাসদস্যদের সঙ্গে এতদিন বেশ ভালোভাবেই মিলেমিশে ইউক্রেনে যুদ্ধ করছিল পিএমসি ওয়াগনার। তবে গত কয়েক মাস ধরেই ভাসা ভাসা ভাবে ইউক্রেনের বিভিন্ন অঞ্চলে রুশ বাহিনীর সঙ্গে ওয়াগনার গ্রুপের যোদ্ধাদের দ্বন্দ্ব-সংঘাতের খবরও আসছিল।