এক পদ্মা সেতু বিএনপির গত ১৪ বছরের আন্দোলন ম্লান করে দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের সক্ষমতার প্রতীক পদ্মা সেতু সম্প্রসারিত করেছে দেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনার দিগন্ত।
রোববার সেতু ভবনে পদ্মা সেতুর একবছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এ কথা বলেন। এ সময় তিনি বলেন, পদ্মা সেতুতে চলাচলের জন্য রাষ্ট্রপতি ছাড়া সব নাগরিককে টোল দিতে হবে। উদ্বোধনের দিন প্রধানমন্ত্রী নিজেও ৫৯ হাজার ৬০০ টাকা টোল দিয়ে সেতু পার হয়েছেন।তিনি জানান, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও অন্যান্য সংস্থা এখন পর্যন্ত ৯১ লাখ ৭০ টাকা টোল দিয়েছে। মন্ত্রী বলেন, এখন পর্যন্ত পদ্মা সেতুর সংশোধিত ব্যয় ৩২ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা। আর গত শনিবার রাত পর্যন্ত টোল আদায় হয়েছে ৭০০ কোটি ৯৮ লাখ ২৩ লাখ ৯৬ হাজার টাকা। যা বিকেলে ৮০০ কোটিতে উন্নীত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। সেতুতে প্রতিদিন গড়ে ২ কোটি ১৮ লাখ টাকা টোল আদায় হচ্ছে। ওবায়দুল কাদের বলেন, ২৫ জুন ২০২২ থেকে ২৪ জুন রাত ১২টা পর্যন্ত এ সেতু দিয়ে পারাপার হয়েছে সর্বমোট ৫৬ লাখ ৭৫ হাজার যানবাহন। দৈনিক গড়ে সাড়ে ১৫ হাজার যানবাহন পারাপার হচ্ছে এ সেতু দিয়ে। যা পূর্বানুমানের চেয়েও বেশি। পদ্মা সেতু জনগণের সম্পদ উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, কোনো সরকার চিরস্থায়ী নয়। কিন্তু সেতু থাকবে। সেতু কোনো সরকারের সম্পদ নয়। এটি জনগণের সম্পদ। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ বা বিবিএ একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। সরকারের কাছ থেকে সেতু নির্মাণ ব্যয়ের অর্থ বিবিএ ঋণ হিসেবে নিয়েছে। এ ঋণের টাকা ধাপে ধাপে সরকারি কোষাগারে ফেরত দেবে বিবিএ। এরইমধ্যে সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে চারটি কিস্তি পরিশোধ করা হয়েছে। প্রথম দুটি কিস্তি বাবদ প্রায় ৩১৬ কোটি ৯১ লাখ এবং তৃতীয় ও চতুর্থ কিস্তি বাবদ প্রায় ৩১৬ কোটি ৩ লাখ টাকাসহ সর্বমোট প্রায় ৬৩২ কোটি ৯৪ লাখ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দিয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী ৩৫ বছরের মধ্যেই বিবিএ সম্পূর্ণ অর্থ সরকারকে ফেরত দেওয়ার কথা রয়েছে। এদিকে জাতীয় পার্টির সরকারের বিরোধিতার প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, তারা (জাতীয় পার্টি) নিজেরাই বলে সরকারের দালাল হয়ে গেছে। তারা সেই অপবাদ থেকে নিজেদের রক্ষা করতে চায়, এজন্য সমালোচনা করছে। বাংলাদেশ পরাশক্তির ওপর নির্ভরশীল হয়ে যাচ্ছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে গিয়ে সেতুমন্ত্রী বলেন, আমরা বৈশ্বিক পরিস্থিতির দিক নজর রাখছি। সেখান থেকে উপকৃতও হতে পারি। চীনা দূতাবাস খালেদা জিয়ার বাসায় উপহারের প্যাকেট পাঠিয়েছে, এমন প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমার বাসায়ও বড় প্যাকেট এসেছে। প্রধানমন্ত্রীর বাসায়ও এসেছে। এটা বড় কোনো ইস্যু নয়। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচন নিয়মমতো হবে। নির্বাচনের নিয়ম সংবিধানে সন্নিবেশিত রয়েছে। সে অনুযায়ীই নির্বাচন হবে। জাতীয় পার্টি সরকারের অতিরিক্ত বিরোধিতা করছে, এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল বলেন, তারা (জাতীয় পার্টি) নিজেরাই বলে সরকারের দালাল হয়ে গেছে। তারা সেই অপবাদ থেকে নিজেদের রক্ষা করতে চায়, এজন্য সমালোচনা করেছে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, নেতিবাচক রাজনীতির জন্য বিএনপির জনসমর্থন ১০ শতাংশে নেমে এসেছে কিনা তা ভেবে দেখা উচিত। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, সময় ও ব্যয় সাশ্রয়ী পদ্মা সেতু চালুর পর দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে যোগাযোগের নবদুয়ার খুলে গিয়েছে। তিনি আরও বলেন, গত ১৪ বছরে বিএনপির আন্দোলনকে ম্লান করে দিয়েছে এক পদ্মা সেতু। বাংলাদেশের সক্ষমতার প্রতীক পদ্মা সেতু সম্প্রসারিত করেছে দেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনার দিগন্ত। প্রেসব্রিফংয়ে উপস্থিত ছিলেন সেতু বিভাগের সচিব মনজুর হোসেন, পদ্মা সেতু প্রকল্পের পরিচালক সফিকুল ইসলামসহ সেতু বিভাগ, সেতু কর্তৃপক্ষ ও সেতু নির্মাণ প্রকল্পের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।