দিন দিন বাড়তে শুরু করেছে ডিভাইস আসক্তি। সারাদেশেই স্মার্টফোনের বিভিন্ন অনলাইন গেইমে প্রচন্ডভাবে আসক্ত হয়ে পড়ছে কোমলমতি শিশু তরুণ এমনকি যুবকরা। মূলত করোনাকালীন সময়ে দীর্ঘদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার সময় থেকেই শিশু কিশোরদের মধ্যে অনলাইন মোবাইল গেইমের প্রতি আগ্রহ তৈরী হয় আর সেই আগ্রহই এখন শিশু কিশোরদের মধ্যে ভয়ানকভাবে আসক্তি তৈরি করেছে। মোবাইল এবং মোবাইল বা ট্যাবে গেম এখন প্রধান মাধ্যম শিশুদের খেলার। বিভিন্ন ধরনের ডিভাইসে ডিজিটাল গেমে শিশুরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় ব্যয়ে কোনো ক্লান্তি নেই। ইউনিসেফের তথ্য অনুসারে, বিশ্বে প্রতি তিন জন ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর একজন শিশু। প্রতিদিন ১ লাখ ৭৫ হাজার অর্থাৎ প্রতি আধা সেকেন্ডে একজন শিশু নতুন করে ইন্টারনেটের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের তথ্য মতে, দেশের ৪ থেকে ১৭ বছর বয়সী প্রায় ৬০ লাখ শিশু-কিশোর ডিজিটাল ডিভাইসে আসক্তির কারণে নানা জটিলতায় ভুগছে। শারীরিক সমস্যার পাশাপাশি মানসিক সমস্যায় ভুগছে তারা। পর্যাপ্ত খোলা জায়গা না থাকা এবং খেলার মাঠ না থাকার কারণে ডিভাইস আসক্তি বাড়ছে। শিশুকে ডিভাইস আসক্তি থেকে দুরে রাখতে হলে ঘরের বড়দের ভুমিকা ও করনীয় কিছু বিষয় রয়েছে। শিশুকে শান্ত করতে গিয়ে অনেক বাবা-মা শিশুর হাতে স্মার্টফোন তুলে দেন। অনেক সময় শিশু খেতে না চাইলে মোবাইল ফোনে কার্টুন চালিয়ে খাওয়াতে থাকেন। এতে হয়তো শিশু শান্ত হয় কিংবা খাবারটা খেয়ে নেয়, কিন্তু অন্য ধরনের ক্ষতি হয়ে যায়। তাই শিশুর হাতে মোবাইলফোন তুলে দেয়া একেবারেই উচিত নয়। এছাড়াও শিশুরা অনুকরণপ্রিয়। বড়দের হাতে স্মার্টফোন দেখলে সে-ও স্মার্টফোন নিতে আগ্রহ পায়। তাই শিশুর সামনে স্মার্টফোনে চ্যাট করা, গান শোনা, গেম খেলা, ইউটিউবে ভিডিও দেখা ইত্যাদি এড়িয়ে চলতে হবে। খুব বেশি প্রয়োজন হলে আলাদা রুমে গিয়ে স্মার্টফোন ব্যবহার করতে হবে। কারও হাতে স্মার্টফোন না দেখলে শিশুও এটার কথা ভুলে যাবে। শিশুকে ঘরের বাইরে পাঠানো খুব জরুরি। সে জন্য শিশুদের হাতে এমন খেলনা তুলে দিতে হবে, যেগুলো বাইরে গিয়ে খেলতে হয়। যেমন ফুটবল, সাইকেল, ক্রিকেট ব্যাট ইত্যাদি। প্রতিবেশী শিশুদের সঙ্গে তাকে পরিচয় করিয়ে দিতে হবে এবং তাদের সঙ্গে খেলতে উৎসাহ প্রদান করতে হবে। আরেকটি বিষয়ে লক্ষ্য দিতে হবে সেটা হলো শিশুকে সৃজনশীল কাজে উৎসাহ দেয়া। গাছ লাগানো, কবুতর পোষা, পাখিকে খাবার দেয়া, কাগজ কেটে এটা-সেটা বানানো ইত্যাদি কাজে মজা পেয়ে গেলে শিশু মোবাইল ফোনে উৎসাহ হারিয়ে ফেলবে। তখন সে ওদিকে ফিরে তাকাবে না।