দেশে মাদকের প্রভাব কমানো যাচ্ছে না, বরং এর প্রভাব সামাজিক বিপত্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে মাদকের উপকরণে বদল ঘটছে। সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে সর্বনাশা মাদক। বাড়ছে মাদকসেবীর সংখ্যা। কিশোর-তরুণদের কাছে মাদক সহজলভ্য হয়ে উঠছে। মাদকের বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স ও মাদকবিরোধী অভিযানেও কোনো ফল হচ্ছে বলে মনে হয় না। শুধু শহর নয়, প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলেও হাত বাড়ালেই মাদক পাওয়া যায়। মাদকের অপব্যবহার শুধু মাদকেই সীমিত থাকে না, আরো বহু অপরাধের কারণ হয়। জানা যায়, বর্তমানে দেশে মাদকাসক্ত মানুষের সংখ্যা ৮০ লাখের বেশি। অন্যদিকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের হিসাব মতে, বর্তমানে দেশে মাদকাসক্তের সংখ্যা ৭৫ থেকে ৮০ লাখ। এর মধ্যে ৮০ শতাংশই যুবক। মোট মাদকাসক্তের মধ্যে ৪৮ শতাংশ শিক্ষিত। মাদকের অবশ্যম্ভাবী অনুসর্গ হিসেবে তারা নানা অপরাধকর্মে জড়িয়ে পড়ছে। মাদকাসক্তদের মধ্যে ৫৭ শতাংশ যৌন অপরাধী। মাদকসেবীরা যেমন পরিবারের জন্য, তেমনি সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য বোঝা। মাদকের কারণে সন্তানদের নিয়ে অসহায় অভিভাবকরা। মাদকাসক্তরা যেমন নিজেদের ধ্বংস করছে, তেমনি পরিবারকেও ঠেলে দিচ্ছে বিপর্যয়ের দিকে। দ্রুত এর গতি রোধ না করা গেলে সামাজিক-অর্থনৈতিক সব ধরনের স্থিতিই বিঘ্নিত হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাদকাসক্তদের মধ্যে ৯০ শতাংশ কিশোর-তরুণ। এদের ৮৫ শতাংশ ইয়াবাসেবী। এদের অনেকে আবার ইয়াবা কারবারে জড়িত। এভাবে চলতে থাকলে সমাজ ক্রমেই পঙ্গু হয়ে যাবে, সব উন্নয়ন প্রচেষ্টা মুখ থুবড়ে পড়বে। বাংলাদেশ যে ক্রমেই ভয়ংকর পথে এগিয়ে যাচ্ছে, সে ব্যাপারে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকেও সতর্ক করা হয়েছে। জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন বিষয়ক সংস্থা আংকটাডের গত ৮ জুনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মাদকের কারণে প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে ৪৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (প্রায় পাঁচ হাজার ১৪৭ কোটি টাকা) পাঁচার হয়ে যাচ্ছে। মাদকের বিস্তার রোধে কারবারিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। নতুন করে শুরু করতে হবে অভিযান। মাদকের প্রায় সবটাই আসে বাইরে থেকে অবৈধ পথে। মাদক নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রথমেই কঠোরভাবে মাদক চোরাচালান বন্ধ করতে হবে। মাদকসংক্রান্ত মামলাগুলো ঝুলে থাকে, অপরাধীরা পার পেয়ে যায়। সীমান্ত এলাকা থেকে পালিয়ে ঢাকায় চলে আসা ইয়াবার গডফাদারদের আইনের মুখোমুখি করে উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করতে না পারলে মাদকের বিস্তার রোধ করা যাবে না। সব ধরনের মাদক প্রতিরোধে সরকারকে কঠোর ও কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে, তবে সবার আগে পরিবারকে সচেতন হতে হবে। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে মাদকের ধ্বংসাত্মক প্রভাব থেকে রক্ষা করতে হবে।