ব্যাক ডেট অর্থাৎ পেছনের তারিখ দেখিয়ে বরিশাল মহানগরের বিভিন্ন ইউনিটের কমিটি গঠণ করার অভিযোগ উঠেছে সদ্য বিলুপ্ত মহানগর ছাত্রলীগের কমিটির নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে।
এ ঘটনার পর পাল্টাপাল্টি কমিটি দেওয়া শুরু হয়েছে। এসব নিয়ে হাসিঠাট্টা করে একের পর এক ফেসবুকে পোস্ট দিতেও দেখা গেছে বরিশালের বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষকে। সূত্রমতে, সদ্য বিলুপ্ত মহানগর ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দরা সবাই বর্তমান সিটি মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহর অনুসারী। আর যাদের পদবঞ্চিত করা হচ্ছে তারা সবাই বরিশাল সদর আসনের সংসদ সদস্য প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীম এবং সদ্য শপথগ্রহণ করা নির্বাচিত সিটি মেয়র খোকন সেরনিয়াবাতের অনুসারী।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত তিনদিন থেকে হঠ্যাৎ করে বরিশাল মহানগর ছাত্রলীগের আওতাধীন বিভিন্ন ওয়ার্ড ও কলেজ শাখা ছাত্রলীগের কমিটির আহবায়ক, যুগ্ম আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবসহ বিভিন্ন পদ প্রাপ্তির দাবি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দিচ্ছেন সাদিক আব্দুল্লাহ অনুসারী ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। আর ফেসবুকে এসব পোষ্ট দেওয়ার পরপরই বিভিন্ন ইউনিটের পদপ্রত্যাশী প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীম ও মেয়র খোকন সেরনিয়াবাতের অনুসারী ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাও পাল্টাপাল্টি পোস্ট দিতে শুরু করেন। যা নিয়ে ঘটে তুলকালাম কান্ড। এনিয়ে যেকোন সময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন নগরবাসী।
সূত্রমতে, বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রচার প্রচারণার সময় নৌকার কর্মীকে মারধরের অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে যান সাদিক আব্দুল্লাহর ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত তৎকালীন মহানগর ছাত্রলীগের আহ্বায়ক রইজ আহম্মেদ মান্না। এর পরপরই মহানগর ছাত্রলীগের ওই কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দরা। সিটি নির্বাচনের পর রইজ আহম্মেদ মান্না কারামুক্ত হন।
সূত্রে আরও জানা গেছে, গত বছরের ২৩ জুলাই তিন মাস মেয়াদের মহানগর ছাত্রলীগের আহ্বায়ক কমিটি গঠণ করা হলেও ওইসময় কোনো ইউনিটে কমিটি গঠণ করতে পারেনি নেতৃবৃন্দরা। কিন্তু কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণার পর এখন পেছনের তারিখে কলেজ এবং ওয়ার্ড কমিটি ঘোষণা করছেন মান্না।
মহানগর ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশী নেতা আবিদ হাসান রানা বলেন, এটা অবৈধ। ব্যাক ডেট দিয়ে কমিটি করার পায়তারা নির্বাচনের পর থেকেই চলছে। তারা সময় সুযোগ পাঁচ্ছেনা। শুনেছি খুব দ্রুত নাকি অবাস্তব এসব কমিটি ঘোষণা করবে মহানগর ছাত্রলীগের সদ্য সাবেক বিতর্কিত কমিটির নেতৃবৃন্দরা। আবিদ রানা আরও বলেন, এ ধরণের কমিটি গঠণের জন্য যারা পাঁয়তারা করছে, তাদের মধ্যে ছাত্রলীগের রাজনীতির কোন জ্ঞানই নেই।
মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য অসীম দেওয়ান বলেন, বেশ কয়েকদিন ধরেই নগরীতে গুঞ্জন চলছে মহানগর ছাত্রলীগের অধীনস্থ ইউনিটগুলোর কমিটি গঠণ করা হবে। তবে আশ্চর্যজনক বিষয় হচ্ছে মহানগর ছাত্রলীগেরইতো কমিটি নেই। যে কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে, সেই কমিটি কিভাবে ইউনিট কমিটি গঠণ করে। তারা খুব তোড়জোর করছে পেছনের তারিখ দিয়ে কমিটিগুলো ঘোষণা করার জন্য। এটা যদি হয়েই যায় তাহলে ঐতিহ্যবাহী ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে তারা হেয় করবে।
সরকারি ব্রজমোহন কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ও ছাত্র সংসদের ভিপি মঈন তুষার বলেন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগেরতো বিধি বিধান রয়েছে। যাদের ছাত্রলীগ থেকে বিতারিত করা হয়েছে, তারা আবার ছাত্রলীগের কমিটি করে কিভাবে। আমাদের কাছে খবর রয়েছে অবৈধভাবে কমিটিগুলো ঘোষণা করে প্রকাশ্যে আনা হবে। তিনি আরও বলেন, ছাত্রলীগের ইজ্জ্বত নিয়ে ছিনিমিনি খেলা এসব লোকগুলো এবং এদের পেছনে যারা রয়েছে, তাদের বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ থেকে আজীবন বহিস্কার করা হলে কলঙ্কমুক্ত হবে আমাদের প্রাণের সংগঠন।
এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে বরিশাল মহানগর ছাত্রলীগের সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সাবেক আহ্বায়ক রইজ আহম্মেদ মান্নার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে একাধিকার যোগাযোগের চেষ্ঠা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে ওই বিলুপ্ত কমিটির সাবেক সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মাইনুল হাসান বলেন, এসব বিষয়ে আমি কিছুই জানিনা।
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান বলেন, এভাবে কমিটি গঠণ করাটা অসম্ভব। বাংলাদেশে ছাত্রলীগের এমন কোনো নজির নেই যে বিলুপ্ত হওয়া কমিটি ব্যাক ডেট দিয়ে তাদের অন্তর্ভূক্ত কমিটি ঘোষণা করে। তিনি আরও বলেন, এরকমটা যদি বরিশালে হয়ে থাকে তাহলে তদন্ত করে যাদের জড়িত পাওয়া যাবে, তাদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।