সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের আওতাধীন খুলনা ও সাতক্ষীরা রেঞ্জের ৯ টি স্টেশনে জেলে বাওয়ালিদের সুন্দরবনে প্রবেশের জন্য ১ জুলাই থেকে অনুমতিপত্র বোট লাইসেন্স সার্টিফিকেট (বিএলসি) নবায়ন শুরু হয়েছে। পুরো জুলাই মাসে এ কার্যক্রম চলবে। এরপর অনুমোদিত নৌকা নিয়ে আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে জেলেরা সুন্দরবনে প্রবেশ করবে জেলেরা মাছ ও কাঁকড়া ধরতে। তবে এবার অনুমতিপত্রের সঙ্গে নৌকার দুই মাথায় কাঠের গায়ে লাল রঙের প্রলেপ ও সাদা রং দিয়ে নৌকার পাশে ডিজিট হিসাবে বিএলসি নম্বর লিখে দিয়ে সুন্দরবনে প্রবেশের জন্য অনুমোদিত নৌকা চিহ্নিত করার উদ্যোগ নিয়েছে বন বিভাগের খুলনা রেঞ্জের স্টেশনের বনরক্ষীরা। যে নৌকাগুলোতে লাল রং দেওয়া ও নম্বর লেখা থাকবে, শুধু সেই নৌকাগুলো নিয়ে জেলেরা মাছ ও কাঁকড়া ধরতে সুন্দরবনে যেতে পারবেন বলেন জানান নলিযান স্টেশন কর্মকর্তা মোঃ তানজিলুর রহমান। তিনি বলেন, বনজীবীরা সুন্দরবনে প্রবেশের অনুমতিপত্র (বিএলসি) নবায়ন করার সময় তাঁদের ব্যবহৃত নৌকার পরিমাপ অনুযায়ী সরকারি রাজস্বের টাকা দিচ্ছেন। এ কারণে অনুমতিপত্র নবায়নের সঙ্গে সঙ্গে নির্দিষ্ট নৌকার গায়ে লাল রং দেওয়ার পাশাপাশি খুলনা রেঞ্জের ডিজিট সহ নম্বর দেওয়া হচ্ছে, যাতে যে নৌকার মাপে রাজস্ব দেওয়া হচ্ছে, তার বাইরে অন্য কোনো নৌকা সুন্দরবনে যেতে না পারে। আর এ ধরনের উদ্যোগকে সচেতন মহল সাধুবাদ জানিয়েছে। বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, প্রতিবছর জুলাই মাসে সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল জেলে বাওয়ালিদের বনে প্রবেশের অনুমতিপত্র বিএলসি নবায়ন করা হয়। প্রায় ১২ হাজার বনজীবীকে সুন্দরবন থেকে সম্পদ আহরণের অনুমতি দেয় বন বিভাগ। এ বছর সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী, ২৫ মণ ধারণক্ষমতার একটি নৌকার জন্য ১৫ টাকা হারে রাজস্ব দিতে হচ্ছে বনজীবীদের। এই অনুমতিপত্রের মেয়াদ আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে। তবে অনুমতিপত্রধারীদের মধ্যে সুন্দরবনকেন্দ্রিক অপরাধের সঙ্গে জড়িত, এমন পাঁচ শতাধিক বনজীবীর তালিকা করে তাদের অনুমতিপত্র নবায়ন না করে বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বন বিভাগ। সরেজমিনে সুন্দরবনের খুলনা রেঞ্জের বিভিন্ন স্টেশনে গিয়ে দেখা গেছে, অনেক বনজীবী প্রতিনিয়ত তাঁদের নৌকা নিয়ে ফরেস্ট স্টেশনের সামনের ঘাটে অপেক্ষা করছেন। স্ব স্ব স্টেশনের বনরক্ষীরা প্রতিটি নৌকার মাপ নিয়ে সেটি আবার খাতায় লিপিবদ্ধ করছেন। বনরক্ষীদের একজন লাল রঙের পাত্র নিয়ে পরিমাপ করা নৌকার দুই মাথায় রং লাগিয়ে দিচ্ছেন। আবার আর একজন ডিজিট হিসাবে সাদা রং দিয়ে নম্বর লিখে দিচ্ছেন। নলিযান এলাকার আশিক মীর বলেন, ‘জুন থেকে তিন মাস আমাদের বনে ঢোকার অনুমতি নাই। আমার নৌকাণ্ডজাল মেরামত করে ফেলিছি। আজ নৌকা নিয়ে অনুমতিপত্র নবায়ন করতে আইছি। নবায়ন হলি আগামী সেপ্টেম্বর থেকে বনে যাইতে পারব।’ বানিয়াখালী স্টেশনে অনুমতিপত্র নবায়ন করতে আসা আরেক জেলে কয়রার আমান হাওলাদার বলেন, ‘আমাগের বন-বাদা করে খেতে হয়। বর্তমানে সুন্দরবনে যাওয়া বন্ধ থাকার কারণে খেয়ে না খেয়ে ঋণে জর্জরিত হয়ে গেছি। আগেভাগে অনুমতি নিতি পারলি সুন্দরবনে ঢোকার অনুমতি দিলেই বনে ঢুকতি পরবো। এবার নৌকায় লাল রং দিয়ে দিচ্ছে। আবার নম্বর লিখে দেওয়া হচ্ছে। নৌকা আর বদলানোরও সুযোগ নেই। এ একটি ভাল উদ্যোগ। সুন্দরবনের নলিয়ান স্টেশন কর্মকর্তা মোঃ তানজিলুর রহমান বলেন, কোন ঝামেলা ছাড়াই জেলেদের বিএলসি নবায়ন করার সুযোগ রয়েছে। ইতোমধ্যে ২ শতাধিক জেলে তার স্টেশন হতে বিএলসি নবায়ন করে নিয়েছে। কাশিয়াবাদ স্টেশন কর্মকর্তা শ্যামা প্রসাদ রায় বলেন, এ বছর জেলেদের অনুমতিপত্র নবায়নের জন্য কারও মাধ্যম না ধরে সরাসরি নৌকা নিয়ে ফরেস্ট স্টেশনে আসতে নির্দেশ দিয়েছি। এতে জেলেদের প্রতারিত হওয়ার সুযোগ থাকবে না।’বানিয়াখালী স্টেশন কর্মকর্তা আবু সাঈদ ও কালাবগী স্টেশন কর্মকর্তা মোঃ আঃ হাকিম বলেন, প্রকৃতি জেলে যে, সেই উপস্থিত থেকে নৌকা স্টেশনে হাজির করে নিয়ম মেনেই বিএলসি নাবয়ন করার নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। সেই অনুযায়ী বিএলসি নবায়ন করা হচ্ছে। সুতারখালী স্টেশন কর্মকর্তা মোঃ সমশের আলী বলেন, বিএলসি নবায়নের ক্ষেত্রে বিভিন্ন নিয়ম কানুনের ব্যাপারে মাইকিং করা হয়েছে। সুন্দরবন খুলনা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) এ জেড এম হাসানুর রহমান বলেন, আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে সুন্দরবনে প্রবেশের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হবে। তবে পুরো সুন্দরবন এলাকা সংরক্ষিত। যে কেউ চাইলে বনে ঢুকতে পারেন না। প্রবেশের আগে সরকারি রাজস্ব পরিশোধ করে বিএলসির অনুমতি নিতে হয়। বিভিন্ন ফরেস্ট স্টেশন থেকে জেলে নৌকা চিহ্নিত করতে নম্বর ও রং লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে, এটা ভালো উদ্যোগ। এটি চলমান রাখা হবে। সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের (ডিএফও) ড. আবু নাসের মোহসীন হোসেন বলেন, সুন্দরবনের মাছ ও কাঁকড়া ধরার বিএলসি নবায়ন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। জেলেরা যাতে অপরাধ কর্মকাান্ড করতে না পারে তার জন্য রং ও নম্বর লিখে দেওয়ার পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়েছে। অপরাধ কর্মকাণ্ড করলে তার বিএলসির অনুমতি বাতিল করা হবে।