চিকিৎসাশাস্ত্র বলে, প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ ভালো। অর্থাৎ রোগ হলে তার প্রতিকার করার চেয়ে রোগ যেন না হয় সেভাবে চলাই ভালো। প্রায় সব রোগের ক্ষেত্রেই এটি সত্য। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই আমাদের সেই সচেতনতা কিংবা প্রতিরোধ প্রচেষ্টা থাকে না। যেমন নেই হেপাটাইটিস বি এবং সি ভাইরাসের ক্ষেত্রে। অথচ এসব ভাইরাসে আক্রান্ত হলে লিভার সিরোসিস ও লিভার ক্যান্সারের আশঙ্কা বেড়ে যায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে হেপাটাইটিস বি এবং সি ভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা প্রায় এক কোটি। আর প্রতিবছর মৃত্যু হয় ২২ হাজারের বেশি মানুষের। অন্য অনেক রোগের মতো হেপাটাইটিস-বি সম্পর্কেও আমাদের যেমন অসচেতনতা রয়েছে, তেমনি রয়েছে অনেক ভুল ধারণা। অনেকের মধ্যেই এই রোগীদের এড়িয়ে চলার প্রবণতা রয়েছে। সাধারণ মেলামেশায়ও অনেকের আপত্তি রয়েছে। ফলে চাকরি বা কর্মস্থলে কিংবা সামাজিক নানা পরিবেশে অনেকেই বৈষম্যের শিকার হন। তাই অনেকেই ভাইরাস বহন করছেন জেনেও তা গোপন রাখেন। এতে বরং সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে। অথচ হেপাটাইটিস বি এবং সির যথেষ্ট ভালো চিকিৎসা রয়েছে বাংলাদেশে। হেপাটাইটিস-বি এর টিকাও বেশ সহজলভ্য। হেপাটাইটিস পাঁচ ধরনের। এর মধ্যে বি এবং সি সবচেয়ে ক্ষতিকারক। এই দুটি ভাইরাস সাধারণত রক্তের উপাদান ও বডি ফ্লুইডসের (বীর্যরস, অশ্রু, মুখের লালা ইত্যাদি) মাধ্যমে একজন থেকে অন্যজনের শরীরে সংক্রমিত হয়ে থাকে। তাই রক্ত পরিভরণ, অস্ত্রোপচার, দাঁতের চিকিৎসায় যন্ত্রপাতির ব্যবহারে যথেষ্ট সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়। এ ছাড়া একই সিরিঞ্জ ব্যবহার না করা, ক্ষৌরকাজে একই ব্লেড ব্যবহার না করাসহ অন্য কারো রক্ত ও লালার সংস্পর্শে আসতে পারে-এমন কাজে বিরত থাকতে হবে। কারো শরীরে যদি ভাইরাস সংক্রমিত হয়ে থাকে, তাহলে সঙ্গী বা সঙ্গিনীকে পরীক্ষা করাতে হবে। তিনি ভাইরাসমুক্ত থাকলে টিকা নিতে হবে। আর সংক্রমিত হলে নিয়মিত চিকিৎসকের ফলোআপ চিকিৎসায় থাকতে হবে। এই রোগ নিয়ে ভয় বা আতঙ্ক পোষণ করার কোনো কারণ নেই। ১৭ কোটি মানুষের দেশে এক কোটি রোগী থাকা অনেক বড় বিষয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের হেপাটাইটিস বি এবং সি সম্পর্কে সচেতনতা তৈরির ক্ষেত্রে যথেষ্ট ভূমিকা রাখতে হবে। হেপাটাইটিস স্ক্রিনিংয়ের ব্যবস্থা রাখতে হবে। পরীক্ষা, টিকা, চিকিৎসা ও ওষুধপত্র সহজলভ্য রাখতে হবে।