দীর্ঘ ৮০ ঘন্টার টানা বর্ষণের ফলে রাঙ্গামাটির বিভিন্ন এলাকায় পাহাড়ের মাটি নরম হয়ে যাওয়ায় যে কোন সময় দূর্ঘটনায় প্রাণহানির আশঙ্কা করছে প্রশাসন। আর বৃষ্টির পরিমান বেড়ে যাওয়ায় যে কোন বড় ধরণের ঝুঁকি এড়াতে লোকজনকে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে যেতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে জোর তৎপরতা চালানো হচ্ছে।
শনিবার (৫ আগষ্ট) রাত সাড়ে ৮ টা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসনের ৩টি টিম সেনাবাহিনী, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের লোকজনের সহযোগিতায় লোকজনকে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসা হয়েছে। তবে এখনো ঝুঁকি নিয়ে অনেক লোকজন পাহাড়ের পাদদেশে বসবাস করছে। রাঙ্গামাটি শহর ও উপজেলায় মোট ১৮২ আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। ইতোমধ্যে পাহাড়ের ধ্বসের আশংকায় রাঙ্গামাটি শহরের বেতার ভবন, বিএম ইনস্টিটিউট স্কুল ও লোকনাথ মন্দির আশ্রমে আশ্রয় কেন্দ্রে লোকজন আশ্রয় নিয়েছে। ৩টি আশ্রয় কেন্দ্রে বর্তমানে ১৬২ জন আশ্রয় গ্রহণ করেছে। আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রিতদের শুকনো খাবার ও ভাতের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রাঙ্গামাটি সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমা বিনতে আমিন।
এদিকে রাঙ্গামাটি জেলা বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করেছে রাঙ্গামাটি নবাগত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন খান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ মারুফ হাসান, ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা।
ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক মোঃ দিদারুল আলম বলেন, ২০১৭ সালের কথা চিন্তা করে রাঙ্গামাটি ফায়ার সার্ভিস সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। যে কোন দূর্যোগ হলেই উদ্ধার তৎপরতা চালানো সম্ভব হবে বলে তিনি জানান।
এদিকে রাঙ্গামাটি জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে রেসকিউ টিম গঠন করা হয়েছে জানিয়ে রাঙ্গামাটির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ মারুফ হাসান বলেন, রাঙ্গামাটি পুলিশ সুপারের নির্দেশনায় রাঙ্গামাটি জেলা ও প্রতিটি উপজেলায় রেসকিউ টিম গঠন করা হয়েছে। এছাড়াও রাঙ্গামাটি জেলা পুলিশের সকল সদস্যকে যে কোন দূর্যোগ মোকাবেলায় প্রশাসনের সাথে থাকার নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।
শনিবার রাত পর্যন্ত রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন খান রাঙ্গামাটির বিভিন্ন দূর্যোগপূর্ণ এলাকায় লোকজনকে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার জন্য কাজ করেছেন। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, একটি প্রাণও যাতে ঝুঁকির মধ্যে না পড়ে তার জন্য বৃষ্টির মধ্যে সেনাবাহিনীকে সাথে নিয়ে প্রশাসন উদ্ধার তৎপরতায় মাঠে কাজ করছেন। তিনি বলেন, রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সকল উপজেলা গুলোকেও ঝুঁকি মোকাবেলায় কাজ করার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। রাঙ্গামাটি জেলায় ঝুঁকিপূর্ণ প্রতিটি এলাকায় আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রিতদের খাবার ব্যবস্থাও করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে ১৩ জুন রাঙ্গামাটিতে ভয়াবহ পাহাড় ধসের ঘটনায় ৫ সেনাসদস্যসহ ১২০ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। ২০১৮ সালে জেলায় নানিয়ারচর উপজেলায় ১২ জুন পাহাড় ধসে আরো ১১ জনের প্রাণহানীর ঘটনা ঘটে। এবছর যাতে সে দিনের পুনরাবৃত্তি না ঘাটে তার জন্য প্রশাসনের জোর তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে।