বর্তমান সরকারের হাত রক্তে রঞ্জিত বলে মন্তব্য করেছেন গনসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ককারী জোনায়েদ সাকি। তিনি বলেছেন, এই সরকারের হাত রক্তে রঞ্জিত। ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে গত কয়েক মাসে সরকার ২০ জন ব্যাক্তিকে হত্যা করেছে। মিছিলে গুলি করে হত্যা করা শুরু করেছে। যে সরকার মিছিলে গুলি করা শুরু করে, তাদের আয়ু বেশিদিন থাকে না। আমরা পরিষ্কার করে বলতে চাই, শেখ হাসিনার সরকারের আর আয়ু নেই। তার লক্ষণ এখন পরিষ্কার। শুক্রবার দমন, নিপীড়ন, গ্রেপ্তার ও রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের প্রতিবাদে এবং অবৈধ সরকারের পদত্যাগ ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দাবিতে গণমিছিল পূর্ব সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এই সমাবেশের আয়োজন করে ছয়টি রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে গঠিত জোট গণতন্ত্র মঞ্চ। সমাবেশে জোনায়েদ সাকি আরো বলেন, দেশ আজ ঐতিহাসিক সন্ধিঃক্ষণে অবস্থান করছে। সরকার ক্ষমতা বজায় রাখার জন্য নাগরিকদের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। বিদেশিদের চাপে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পরিবর্তন করেছে। মূলত সাইবার নিরাপত্তা আইনের নামে পুরোনো আইনটাই ফের চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন, সরকার বিদেশি সংস্থা দিয়ে জরিপ করিয়েছে, ৭০ ভাগ লোক নাকি শেখ হাসিনার সরকারে খুশি। ভালো কথা, তাহলে তারা অন্তবর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন দিক। ৭০ ভাগ কেন, ৮০ ভাগ জনগণের সমর্থনে নির্বাচিত হলে আমরা স্যালুট দিয়ে মেনে নেবো। তবে এইসব রিপোর্ট যে ভূয়া, তা আওয়ামী লীগও ভালোভাবে জানে। এইজন্য সংবিধানের দোহাই দিয়ে নিজের অধীনে নির্বাচন জায়েজ করতে চায়। বেআইনি সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে কোনো নির্বাচন বৈধ হতে পারে না। আর সে কারণেই বর্তমান সরকার আইনের দিক থেকে অবৈধ সরকার। গণতন্ত্র মঞ্চের এই নেতা আরো বলেন, ওঁরা (সরকার) বলছে, বিরোধী দল নাকি বিদেশি হস্তক্ষেপ ডেকে আনছে। আমরা এখন দেখলাম, থলের বিড়াল বেরিয়ে গেছে। আওয়ামী লীগই যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতকে নিজেদের কার্যালয়ে আমন্ত্রণ করে। আরো দেখলাম, আওয়ামী লীগের একটি দল ভারতে গিয়ে বিজেপির সাথে মিটিং করে। রাষ্ট্রদূতদের এখন নানাভাবে খুশি করার চেষ্টা করা হচ্ছে। যেন পুরো দেশ উজাড় করে দিয়ে এই ক্ষমতা তারা রাখতে পারেন। এ সময় নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, বিজয়ের যে গণমিছিল শুরু হয়েছে, তাতে সরকার যতই নির্যাতন করুক না কেন আমাদের আন্দোলন থামাতে পারবে না। তিনি আরও বলেছেন, সরকার বারবার বলছে তারা অতীতের মতো ভালো ভোট দেবে। আমরাও বলে দিতে চাই, অতীতের মতো ভালো ভোট দিলে সরকার অতীত হয়ে যাবে। তোমাকে (সরকার) ক্ষমতায় থাকতে দেব না। সমাবেশে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, গত ২৯ জুলাই সরকার গুণ্ডামি করেছে। নিরীহভাবে আমরা রাজধানীতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছিলাম। পুলিশ ও আওয়ামী লীগের গুণ্ডাপাণ্ডারা লাঠিসোটা নিয়ে আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর কি বেদম মারধর করেছে তা আপনারা সবাই দেখেছেন। আমাদের নেতাকর্মীদের জেলের মধ্যে আটকে রেখে আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে সরকার জোর করে বন্দী করে রেখেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, একটি ভুয়া মামলায় সরকার তাকে বন্দী করে রেখেছে। ২০ বছরের সাজা দিয়েছে। অথচ, সরকারের পেয়ারের লোক এস আলম গ্রুপ এক মিলিয়ন ডলার বিদেশে বিনিয়োগ করেছে। এত টাকা তারা কোথায় পেল কোনো জবাব নেই। যদি ২ কোটি টাকার জন্য বেগম খালেদা জিয়ার ২০ বছর সাজা হতে পারে, তাহলে এক মিলিয়ন ডলারের জন্য এস আলম গ্রুপের কত দিনের সাজা হবে? পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভারত ও আমেরিকায় গিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতায় রাখার অনুরোধ জানিয়েছেন। কিছু বাম নেতারা দেখলাম চীন সরকারকে বোঝাতে চীনে গিয়েছেন। তারা বলে জনগণের নাকি ৭০ ভাগ সমর্থন রয়েছে সরকারের ওপর। তাহলে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন দিয়ে প্রমাণ করুন আপনাদের জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্যতা আছে! এ সময় তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে ক্ষমতা দিয়ে সরকারকে বিদায় নিতে এবং নির্বাচনের মাঠে প্রতিযোগিতা করার আহ্বান জানান। সরকার ক্ষমতায় থাকতে সংবিধানের দোহাই দিচ্ছে মন্তব্য করে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি আরও বলেন, সরকার বারবার সংবিধানের কথা বলছে। সংবিধান কি কোরআনের আয়াত যে বদলানো যাবে না? সরকার তো কতবার সংবিধান সংশোধন করেছে। পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে কত আইন যুক্ত হয়েছে, তাতে কি সংবিধান থাকেনি? এই সংশোধনের মাধ্যমে সংসদ আদালত থেকে জোর করে আইন পাস করিয়ে নিয়েছে। সরকার আমাদের নেতাকর্মী এবং তারেক রহমান ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে অবৈধ সাজা দিয়ে আন্দোলন দমাতে পারেনি। মান্না আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের এক কর্মকর্তা বলেছেন- যারা দুর্নীতি করে বিদেশে টাকা জমিয়েছে প্রমাণ পেলে তা বাজেয়াপ্ত করা হবে। নাম প্রকাশ করা হয়নি, কিন্তু আমেরিকা যাদের বিরুদ্ধে ভিসানীতি প্রয়োগ করেছে তাদেরকে কি রক্ষা করতে পেরেছে শেখ হাসিনা? জনগণের এখন একটাই দাবি সরকারের পতন, সরকার কবে বিদায় নেবে। এ সময় সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত তারা রাজপথে থাকবেন আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হকের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, গণমিছিল পূর্ব সমাবেশে, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সহ-সভাপতি তানিয়া হক প্রমুখ। সমাবেশ শেষে তারা একটি গণমিছিল করেন। মিছিলটি প্রেসক্লাব থেকে শুরু হয়ে গুলিস্তান জিরো পয়েন্ট ঘুরে পল্টন গিয়ে শেষ হয়।