বরিশালের বাজারে রূপালী ইলিশের চরম সংকট দেখা দিয়েছে। সামান্য কিছু ইলিশ পাওয়া গেলেও তা মধ্যবিত্ত পরিবারের ধরাছোঁয়ার বাহিরে। আর নিন্মবিত্ত বা হতদরিদ্র মানুষের মাছের বাজার থেকে দূরে থাকার গল্প আরো আগেই চালু হয়েছে। দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির সাথে পাল্লা দিয়ে কমেছে শ্রমজীবী মানুষের উপার্জন সক্ষমতা। এমন পরিস্থিতিতে ইলিশতো দূরের কথা মাছ ও মাংসের দোকানেও যাওয়া বন্ধ অনেক পরিবারের।
রোববার সকালে নগরীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে ইলিশের এই আকাল চোখে পরেছে। নগরীর চৌমাথা, নতুনবাজার ও বাংলা বাজারে তেমন একটা ইলিশ নেই। সাগরদী বাজারে এক ঝুড়িতে ১০/১২টি ইলিশ ছিলো কিন্তু দাম অনেক চড়া। নগরীর পোর্ট রোড বাজারেও ইলিশের দাম অনেক চড়া। ১২শ’ টাকার নীচে কোনো ইলিশ নেই। জাটকা ইলিশ বিক্রি হচ্ছে আটশ’ টাকা কেজি দরে।
বরিশালের ইলিশ মোকামখ্যাত পোর্ট রোড বাজারে রোববার সকালে হাতেগোনা ছয়-সাতজন মাছ বিক্রেতার ঝুড়িতে সামান্য কিছু ইলিশ দেখা গেলেও দাম চড়ার কারণে সকাল ১০ টা থেকে বেলা ১২ টা পর্যন্ত মাত্র তিনটি ইলিশ বিক্রি হয়েছে। মাছ বিক্রেতা আলী আকবর তার সামনের দুটি ঝুড়িতে রাখা মিডিয়াম ও ছোট সাইজের ইলিশ দেখিয়ে বলেন, মাছের দেশের সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে এখন ইলিশ। কেননা মাঝারিটা ১৬শ’ টাকা আর ছোটটি ১২৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। মাছের আড়তদার আবুল কালাম বলেন, তার এখানে সর্বনিন্ম ১৫শ’ টাকা ও সর্বোচ্চ ২৩৫০ টাকা কেজি দরে ইলিশ বিক্রি হচ্ছে। ২৩৫০ টাকার ইলিশের সাইজ সোয়া দুই কেজি। আর ১৯শ’ টাকার ইলিশ দেড় কেজি ওজনের। ১৫শ’ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে সাতশ’ গ্রাম ওজনের ইলিশ। আর জাটকা ইলিশ বিক্রি হচ্ছে আটশ’ টাকা কেজি দরে। তিনি আরো বলেন, পোর্ট রোড বাজারে এখন পর্যন্ত ইলিশের আমদানি খুবই কম। জেলেরা নদী ও সাগরে মাছ পায় না। তাই বাজারে ইলিশ মাছের দাম অনেক চড়া।
পোর্ট রোড বাজারের আড়ৎদার মেসার্স মনু এ- ব্রাদার্সের স্বত্তাধীকারি অঞ্জন দাস বলেন, যেখানে একটি আড়তের সর্বনিন্ম চাহিদা পাঁচ মন ইলিশ। সেখানে নিয়মিত একমন ইলিশও আসছেনা। তিনি আরও বলেন, ইলিশ মাছ সবসময় স্রােতের বিপরীতে উজানের দিকে চলে। চলতি বছর পর্যাপ্ত উজান হচ্ছে তারপরেও নদীতে ইলিশের দেখা মিলছেনা। সাগরে যাও কিছুটা পাওয়া যাচ্ছে তা বরগুনা, পাথরঘাটা, গলাচিপা থেকেই রপ্তানি হয়ে যাচ্ছে। ফলে সাগরের ইলিশ বরিশালে আসেনা।
অঞ্জন দাস আরো বলেন, এ বছর নিষেধাজ্ঞা চলাকালে প্রচুর পরিমানে ইলিশের পোনা ধরে চাপলি মাছের নামে চালিয়ে দেয়া হয়েছে। পোর্ট রোড বাজারেই কয়েক হাজার টন চাপলি নামে ইলিশের পোনা বেচাকেনা হয়েছে। যা প্রশাসন হয়তো বুঝতেই পারেনি। এছাড়াও নিষেধাজ্ঞা চলাকালে ভারতের জেলেদের মাছ ধরাটাও একটা বড় সমস্যা বলে তিনি দাবি করেন।
তবে ইলিশ ধরা পড়বে এবং ভালো ও বড় জাতের ইলিশ পাবে বরিশালের জেলেরা দাবী করে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা (ইলিশ ) বিমল চন্দ্র দাস বলেন, বরিশালের মোকামে ইলিশ কম সত্যি। কিন্তু যা আছে তার আকৃতি খুবই সুন্দর ও বড় জাতের। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে জেলেরা সাগরে যেতে পারছেন না। তাই এই অঞ্চলে মাছ কিছুটা কম। পানি নামার যে ঢল তা ইলিশের জন্য উজান ঠেলার উপযোগী নয়। তবে মনপুরা, কক্সবাজার এলাকায় প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে জানিয়ে বিমল চন্দ্র দাস আরও বলেন, চাপলি নামে ইলিশের বাচ্চা সব সময়ই কিছু না কিছু ধরা হয়েছে। ওটা চাপলি ধরা জালে ফেঁসে গেলে আর কিছু করার থাকেনা। তবে সেটা কারণ নয়, ইলিশ এখন বরিশালের মোকামে এমনিতেই কমই আসবে। কারণ, মোকামে মাছের নৌকা আসা কমে গেছে। অনেকস্থানেই সড়ক যোগাযোগ সহজ হয়েছে। এটাই পদ্মা ও পায়রা সেতুর সুফল। এ দুই সেতুর বদৌলতে গলাচিপা, বামনা, পাথরঘাটা অঞ্চলের জেলেরা এখন আর বরিশালের ইলিশ মোকাম নির্ভর নয়। তারা এখন সরাসরি ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ইলিশ নিয়ে যাচ্ছে।