সম্প্রতি মৌলভীবাজারে গ্রেপ্তার ১৩ জন জঙ্গির একজন বগুড়া সারিয়াকান্দির সানজিদা (১৮)। সানজিদা তার আপন সৎ ভাইকে বিয়ে করে তার সংস্পর্শে জঙ্গি হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
গ্রেফতার সানজিদা উপজেলার হাটশেরপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ নিজ বলাইল গ্রামের লতিফ সরদারের (৫৫) সৎ মেয়ে। সরেজমিনে গিয়ে কথা হয় লতিফ সরদারের সাথে। তিনি জানান, একই ইউনিয়নের শেরপুর গ্রামে তার জন্ম। যমুনা নদী ভাঙনের শিকার হয়ে তিনি বাড়ি করেছেন নিজ বলাইল গ্রামের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধে। তিনি এখন বগুড়া সাবগ্রাম ইউনিয়নের ছাতিয়ানতলায় একটি ইট ভাটায় কাজ করেন এবং বিয়ের ঘটকালির কাজ করেন। তার ২ ছেলে ১ মেয়ে। বড় ছেলে রাসেদুর রহমান (রাসেল) ওরফে সুমন। সুমনের জন্ম ১৯৯২ সালের ৩১ ডিসেম্বর। ছোট ছেলে রাসেল মিয়া (২৫)। সে এখন বাড়িতেই ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা চালিয়ে জীবীকা নির্বাহ করছে। সে বিবাহিত এবং এক পুত্র সন্তানের জনক। লতিফ সরদারের বড় মেয়ে মিতা আক্তারের নারচী গোদাগাড়ী গ্রামে বিয়ে হয়েছে। তার স্বামী আনছারের চাকরি করে।
লতিফের বড় ছেলে সুমন শেরপুর উচ্চবিদ্যালয় থেকে এস এস সি এবং বয়রা কারিগরি কলেজ থেকে এইচ এস সি পাশ করেন। এইচ এস সি পাশ করার পর সুমন চাকরি করার উদ্দেশ্য ঢাকায় পাড়ি জমান। সেখানে তিনি তার ফুফুদের বাসায় থাকতেন। এমতাবস্থায় সুমন গত ২০১৬ সালের ২১ নভেম্বর ঢাকা যাত্রাবাড়ী থানার কাজলা এলাকার বাঁশপট্টি খোলামাঠ থেকে গ্রেপ্তার হয় জঙ্গি হিসেবে। সেদিন সর্বমোট ৮ জন জঙ্গি সেখানে গ্রেপ্তার হয়েছিল। জেলে থাকাকালীন জঙ্গি সুমনের সাথে ঘটে একটি লোমহর্ষক ঘটনা। সুমনের সাথে থাকা অন্য সহচররা সুমনের বউকে জেলখানায় সুমনের সাথে দেখা করানোর কথা বলে ডেকে নিয়ে এসে তার বউকে মেরে ফেলে। তার বউয়ের কাছে জঙ্গিদের তথ্য আছে বলে তাকে মেরে ফেলা হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। ৬ মাস কারাভোগ করার পর সুমন জামিনে মুক্ত হয়। এরপর সে নিজ বাড়ি নিজবলাইল চলে আসে। নিজ বাড়িতে কয়েকদিন থাকার পর সে নওগাঁ বদলগাছি নামক এলাকায় একটি ইটভাটায় চাকুরীতে যোগ দেন। সেখানেই তিনি দীর্ঘদিন চাকুরীরত ছিলেন। এদিকে গত ৫ বছর আগে সুমনের মা রাসেদা বেগম সাপের কামড়ে মারা যান। মারা যাওয়ার ৬ মাস পর সুমনের বাবা লতিফ সরদার তার বিধবা মামাতো বোন আঞ্জুয়ারাকে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। আঞ্জুয়ারার প্রথম স্বামী মারা গেছেন। তার সেই পক্ষের ১ ছেলে ১ মেয়ে। তার মধ্যে সম্প্রতি গ্রেপ্তার সানজিদা বড় এবং ছোট ছেলে সাজু (৮) এখন বগুড়া একটি হোটেলে কাজ করে। সানজিদা বগুড়া বিসিক এলাকার শিশু পরিবার নামক একটি এতিমখানায় থাকতো। সেখান থেকেই সে এস এস সি পাশ করেছে। সুমন বাড়িতে এসে সানজিদার সাথে পরিচয় হয়। পরিচয় থেকেই সৎ ভাইবোনের সম্পর্ক থেকে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এরপর গত ২০২২ সালের ৩০ জানুয়ারি তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের পর সানজিদা নিজবলাইল তাদের নিজের বাড়ীতেই থাকতো। আর সুমন ইটভাটায় কাজ করতো এবং বাড়িতে যাতায়াত করতো। সর্বশেষ বাসায় নিয়ে যাওয়ার কথা বলে গত ১১ দিন আগে সুমন সানজিদাকে বাড়ি থেকে নিয়ে যায়। এরপর গত শনিবার মৌলভীবাজার থেকে জঙ্গি হিসেবে সানজিদা গ্রেপ্তার হয়।
সানজিদার সাথে গ্রেপ্তার অন্য আসামিরা হলো, সাতক্ষীরা দক্ষিণ নলতা গ্রামের ওমর আলীর ছেলে শরিফুল ইসলাম (৪০), কিশোরগঞ্জ ইটনা থানার কালনার আবুল কাসেমের ছেলে হাফিজ উল্লাহ (২৫), নারায়ণগঞ্জ ফতুল্লা রসুলপুর গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে খায়রুল ইসলাম (২২), তার স্ত্রী মেঘনা (১৭), মেয়ে আবিদা (১), সিরাজগঞ্জ কাজিপুর মাইজবাড়ী সাইফুল ইসলামের ছেলে রাফিউল ইসলাম (২২), পাবনা আটঘরিয়া শ্রীপুর মজনু মল্লিকের মেয়ে শাপলা বেগম (২২), আঃ ছাত্তারের মেয়ে জুবেদা (১৮) হুজাইফা (০৬), নাটোর চাদপুর গ্রামের সাইদুল ইসলামের মেয়ে মাইশা ইসলাম (২০), সাতক্ষীরা তালা থানার দক্ষিণ নলতা গ্রামের জলমত খাঁর মেয়ে আমিনা বেগম (৪০) এবং একই গ্রামের শফিকুল ইসলামের মেয়ে হাবিবা বিনতে শফিকুল। গ্রেপ্তার সানজিদার সৎ বাবা এবং বর্তমান শশুর লতিফ সরদার বলেন, সুমন এখন কোথায় আছে তা আমরা জানি না। আগে থেকেই তার সাথে আমার সম্পর্ক খারাপ। সানজিদা গ্রেপ্তার হওয়ার পর নওগাঁর ইটভাটায় আমি খোঁজ নিয়েছি। তারা বলেছে সুমন বেশ কয়েকদিন আগে সেখানে চাকুরী রিজাইন দিয়েছে।
সারিয়াকান্দি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাজেশ কুমার চক্রবর্তী বলেন, সানজিদা গ্রেপ্তারের পর পরই তার বাড়ি সনাক্ত করা হয়েছে। তার বাড়ি এবং পরিবারের অন্য সদস্যরা এখন সারিয়াকান্দি থানার নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছে।