নিষিদ্ধ জিনিসে বরাবরই মানুষের আগ্রহ একটু বেশি। সমাজের সার্বিক অবক্ষয়ের পেছনে যে বিষয়গুলো দায়ী সেগুলোতেই মানুষের তীব্র আসক্তি, যা মানুষের সহজাত প্রবৃত্তির মধ্যেই পড়ে। বর্তমানে মাদকাসক্তির মতো ভয়াবহ আরেকটি আসক্তি হলো নিষিদ্ধ ভিডিও বা পর্ন ভিডিওতে আসক্তি। পর্নোগ্রাফি এখন অনলাইনের কল্যাণে মানুষের হাতের মুঠোয়। আর এ কারণে এই আসক্তি যুবক থেকে শুরু করে মধ্যবয়স্ক মানুষের ভিতর দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ছে। বর্তমানে ভয়াবহ একটি সামাজিক ব্যাধির নাম নাম পর্ন আসক্তি। এক গবেষণায় দেখা যায় স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের প্রায় ৭৭ ভাগ কোন না কোনভাবে পর্নোগ্রাফি দেখছে। একজন মানুষ নানা কারণে পর্নোগ্রাফিতে আসক্তি হতে পারে। কয়েক বার পর্নো দেখার পর মস্তিষ্কের তৃপ্তি কেন্দ্র, বিষয়টির সঙ্গে একটি শর্তাধীন অবস্থা তৈরি করে, যা ক্রমে অভ্যাসে পরিণত হয়, অভ্যাস থেকে তৈরি হয় আসক্তি। অন্যান্য আসক্তির মতো, পর্ন আসক্তিও পুরস্কার প্রদানের জন্য দায়ী মস্তিষ্কের অংশের উপর নির্ভর করে। পর্নোগ্রাফির মতো উদ্দীপনা ব্যবহার করে মস্তিষ্ককে ডোপামিনের অস্বাভাবিক মাত্রা মুক্ত করার ফাঁদে ফেলে। এই প্রতিক্রিয়া ওষুধের ব্যবহার, অ্যালকোহলে আসক্ত হওয়া এবং জুয়া খেলার সাথে অনেকটাই সাদৃশ্যপূর্ণ। এই আসক্তির কারণে মস্তিষ্কে বিরূপ প্রভাব ফেলার সাথেসাথে শারীরিক ভাবে আসক্ত ব্যক্তির উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এতে আসক্ত হয়ে পড়লে ব্যক্তি দিনের একটা বড় সময় এ বিষয় নিয়ে চিন্তা করে, চর্চা করে। ফলে পড়ালেখার মান খারাপ হয়, কর্মক্ষেত্রে কাজের মান কমে যায়। উৎপাদনশীলতা হ্রাস পায়। অনেক সময় নিজের প্রতি নিজের ঘৃণা বোধ জন্মে, তৈরি হয় বিষণ্ণতা পাশাপাশি আসক্ত ব্যক্তির মেজাজ হয়ে যায় খিটখিটে। দেশে ইভটিজিং বাড়ার অন্যতম কারণ হলো এই পর্ন আসক্তি। এক গবেষণায় দেখা যায় বাংলাদেশে স্কুলগামী কিশোরদের মধ্যে যারা পর্নে আসক্ত তাদের ৭০.৫৫% শারীরিকভাবে মেয়েদের উত্ত্যক্ত করতে চায়। ইভটিজিং্যের পাশাপাশি আসক্তদের ভিতর বৃদ্ধি পায় ধর্ষণের প্রবণতা। সমাজে এটি এতটাই তীব্র আকার ধারণ করছে যেটিতে লাগাম টানা অতীব জরুরি নতুবা এই ভয়াবহ ব্যাধি একদিন গোটা সমাজের ধ্বংসের কারণ হবে। এর জন্য সবাইকেই সমান ভাবে এগিয়ে আসতে হবে। যেহেতু এই আসক্তির বীজ কিশোর বয়স থেকেই বপন শুরু হয় তাই প্রথমে অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে। সন্তানদের মোবাইল, ল্যাপটপ, ইন্টারনেট ব্যবহারে নজর রাখতে হবে। যেহেতু বর্তমানে ইন্টারনেটের কল্যাণে সব কিছুই হাতের মুঠোয় পাওয়া যায় তাই দেখতে হবে সন্তান তার নাগালের ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস দিয়ে কি কি করছে। সন্তান একা বদ্ধ ঘরে ডিভাইস ব্যবহার করে থাকলে তাদের দিকে খেয়াল রাখার পাশাপাশি ও নিরুৎসাহিত করতে হবে। সন্তান পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত হয়ে গেলে তাকে বকাবকি না করে এর ক্ষতিকর দিকগুলো বুঝিয়ে বলতে হবে। কিশোর-কিশোরীদের ইন্টারনেটের অবাধ ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সরকারকে দেশে যাতে এইসব পর্ন সাইট বেবহার করা না যায় সেই ব্যবস্থা করতে হবে। সাথেসাথে দেশের পর্নোগ্রাফি আইনের সঠিক বেবহার করতে হবে। আর তাহলেই আমরা আগামীতে সুস্থ একটা ভবিষ্যৎ পাবো।