সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বর্তমান গণমুখী সরকারের জনকল্যাণমূলক কর্মসূচির মধ্যে এটি একটি। আপাতত প্রগতি, সুরক্ষা, সমতা ও প্রবাস- এই চার নামে এটি চালু করা হয়েছে। বেসরকারি চাকরিজীবী, স্বকর্মে নিয়োজিত, অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের কর্মী, প্রবাসী বাংলাদেশী এবং অসচ্ছল ব্যক্তিদের আনা হচ্ছে সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচির আওতায়। এর প্রধান উদ্দেশ্য হলো- সমাজের বয়স্ক নাগরিকদের জন্য একটি টেকসই সামাজিক নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা করা। দেশের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের আর্থিক ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই এর উদ্দেশ্য। চীন তার সব নাগরিককে পেনশন সুবিধা দিচ্ছে তিন ধরনের এবং ভারত সাত ধরনের স্কিম চালু করেছে। ১৮-৫০ বছর বয়সী সব বাংলাদেশী নাগরিক যুক্ত হতে পারবেন পেনশন ব্যবস্থার সঙ্গে। ৬০ বছর বয়স থেকে তিনি পাবেন পেনশন সুবিধা। পেনশন ভোগী যদি ৭৫ বছরের আগে মারা যান, তবে তার নমিনি ৭৫ বছর বয়স পর্যন্ত পাবেন এই সুবিধা। ইতোমধ্যে পেনশনারদের জন্য চাঁদাও নির্ধারিত হয়েছে। প্রগতি ও সুরক্ষা স্কিমের আওতায় অন্তর্ভুক্ত প্রত্যেক পেনশনারের জন্য সর্বনিম্ন ১ হাজার এবং সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা। প্রবাসী স্কিমের অন্তর্ভুক্ত প্রবাসী বাংলাদেশীদের জন্য সর্বনিম্ন চাঁদা ৫ হাজার টাকা। তবে এর বেশি অর্থ জমা রাখার সুযোগও আছে। প্রবাসীদের নির্ধারিত চাঁদা পরিশোধ করতে হবে বৈদেশিক মুদ্রায়। সমতা স্কিমের অন্তর্ভুক্তদের চাঁদার হার ৫ শত টাকা। এই স্কিমে সরকার দেবে সমপরিমাণ চাঁদা। অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর স্কিম পরিবর্তনসহ চাঁদার হার বৃদ্ধির সুযোগ রয়েছে। কোনো চাঁদাদাতা ১০ বছর চাঁদা প্রদানের পর মারা গেলে জমাকৃত অর্থ মুনাফাসহ ফেরত দেওয়া হবে তার নমিনিকে। দেশের ষাটোর্ধ্ব সব নাগরিককে পেনশন সুবিধার আওতায় আনার পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সাধুবাদ জানাই। দেশের কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর মাত্র ৫ শতাংশ সরকারি চাকরিতে নিয়োজিত। তারাই পেনশন সুবিধা পান। বাকি ৯৫ শতাংশের মধ্যে প্রায় ৮ শতাংশ গ্রাচ্যুইটি সুবিধা পেলেও অন্যান্যের জন্য সে সুবিধাও নেই। অবসরবিষয়ক সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও ব্যবস্থা এখনো আমাদের দেশে অনুপস্থিত। ফলে, সর্বজনীন পেনশন চালুর বিষয়টি যুগান্তকারী। বাংলাদেশে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা ধারণাটি নতুন এবং বাস্তবায়নেও যথেষ্ট চ্যালেঞ্জ রয়েছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। সরকার এ-সংক্রান্ত বিশেষ কর্তৃপক্ষ গঠন, তহবিল ব্যবস্থাপনা এবং পেনশন ব্যবস্থার যেসব শর্ত দিয়েছে, তা প্রশংসনীয়। তবে এটি সব শ্রেণির মানুষের কাছে যথাযথভাবে তুলে ধরা জরুরি। পুরো ব্যবস্থাকে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করার আবশ্যকতাও রয়েছে। সর্বোপরি সর্বস্তরে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতকরণে জোর দিতে হবে। আমরা এ কর্মসূচির সাফল্য কামনা করি।