সেই ছোট বেলা থেকেই বঙ্গবন্ধুকে ভালোবেসে আওয়ামী লীগের একজন কর্মী হিসেবে প্রতিটি মিছিল মিটিংয়ে অংশগ্রহণ করে আসছি। জীবনে যতোদিন বেঁচে আছি আওয়ামী লীগের লোক হয়েই বেঁচে থাকতে চাই। জীবিকার তাগিদে পরিবার নিয়ে ঢাকার মিরপুরে অবস্থান করলেও আওয়ামী লীগের প্রতিটি মিছিল ও মিটিংয়ে আমি অংশগ্রহণ করেছি।
তারই ধারাবাহিকতায় সেদিনও (২০০৪ সালের ২১ আগস্ট) আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ের সামনে জনসভায় যোগদান করেছিলাম। কিন্তু সেইদিন বুঝিনি আমার সুন্দর জীবনটা তছনছ হয়ে যাবে। সেই ভয়ঙ্কর দুঃসহ স্মৃতি আজও আমাকে তাড়িয়ে বেড়ায়। গ্রেনেডের স্পিøন্টারের সেইদিন আমার একটি চোখ হারিয়ে যায়। ভেঙ্গে যায় একটি পা। টানা ১৯ বছর ধরে দুঃসহ্য যন্ত্রনার মাঝে মানবেতর জীবন যাপন করলেও কেউ আমার খোঁজ নেয়নি।
রোববার দুপুরে নিজ বাড়িতে বসে আক্ষেপকরে কথাগুলো বলছিলেন, বরিশালের গৌরনদী উপজেলার খাঞ্জাপুর ইউনিয়নের পূর্ব বাকাই গ্রামের মৃত কালাচান সরদারের ছেলে মো. সালাম সরদার (৫০)। গ্রেনেডের স্পিøন্টারে চিরদিনের জন্য একচোখ ও এক পা হারিয়ে জীবিকার তাগিদে আজ ব্যাটারিচালিত ভ্যান চালাতে হচ্ছে সালাম সরদারকে। বতর্মানে স্ত্রী ও এক কন্যা সন্তানকে নিয়ে চরম মানবেতর জীবন যাপন করা সালাম সরদার সরকারি সহযোগিতা পেতে স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর বরাবরে একাধিকবার আবেদন করেও কোন সুফল পাননি।
সালাম সরদার বলেন, সেইদিন বিএনপি-জামায়াতের চারদলীয় জোট সরকারের আমলে (২০০৪ সালের ২১ আগস্ট) বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের দলীয় কার্যালয়ের সামনে আওয়ামী লীগের সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় আমার বাম চোখ চিরদিনের জন্য অন্ধ হয়ে যায়। ওইসময় আমার বাম পা ভেঙ্গে যায়। তিনি আরও বলেন, সহকর্মীরা সেদিন মুমূর্ষ অবস্থায় আমাকে উদ্ধার করে প্রথমে ফার্মগেট চক্ষু হাসপাতালে নিয়ে আসলে সেখানে আমাকে ভর্তি করা হয়নি। পরবর্তীতে পরিবারের সদস্যদের কাছে আমাকে পৌঁছে দেওয়া হয়। আমার স্ত্রী ও স্বজনরা আমাকে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানেও আমাকে ভর্তি করা হয়নি। শুধু আওয়ামী লীগের কর্মী বলে আমাকে কোন হাসপাতালেই ভর্তি করতে চায়নি। পরে ঘুষের বিনিময়ে আমাকে শ্যামলীর গোল্ডেন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই চলে আমার চিকিৎসা কিন্তু গ্রেনেডের স্পিøন্টারে চিরদিনের জন্য আমার একটি চোখ অন্ধ হয়ে যায়।
১৯ বছর আগের সেই ভয়াল গ্রেনেড হামলায় আহত সালাম সরদার বলেন, একচোখ ও এক পা পঙ্গু হওয়ার পর গ্রামের বাড়িতে এসে কোনমতে ব্যাটারিচালিত ভ্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছি। স্ত্রী ও এক কন্যা সন্তানকে নিয়ে চরম মানবেতর জীবন যাপন করা সালাম সরদার সরকারি সহযোগিতা পেতে স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর বরাবরে একাধিকবার আবেদন করেও কোন সুফল পাননি বলেও উল্লেখ করেছেন।
আওয়ামী লীগ কর্মী সালাম সরদারের স্ত্রী রাশিদা বেগম বলেন, ওইদিন অপরিচিত দুইজন লোক গুরুত্বর অবস্থায় আমার স্বামীকে বাসায় পৌঁছে দিয়েছিলো। এরপর পাঁচটি হাসপাতালে তাকে ভর্তি করানোর জন্য গিয়েছি। কিন্তু আওয়ামী লীগ কর্মী এবং গ্রেনেড হামলায় আহত হয়েছে যেনে কোন হাসপাতালেই তাকে (সালাম) ভর্তি করা হয়নি। পরে শ্যামলীর গোল্ডেন হাসপাতালে ঘুষ দিয়ে স্বামীকে ভর্তি করে চিকিৎসা করিয়েছি। কিন্তু ঘটনার প্রায় ১৯ বছর পার হয়ে গেলেও এ বিষয়ে আজ পর্যন্ত কারো সহযোগিতা পাইনি। তিনি (রাশিদা) ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির দাবী করেন।
গৌরনদী উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি প্রদীপ কুমার দত্ত বলেন, বিএনপিও জামায়াত সন্ত্রাসীদের গ্রেনেড হামলায় সেদিন গুরুত্বর আহত হয়েছিলো আওয়ামী লীগ কর্মী সালাম সরদার। এরপর সে দীর্ঘদিন চিকিৎসা নিয়েছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রধানমন্ত্রীর বরাবরে আবেদনও করেছেন। বর্তমানে চিকিৎসার অভাবে সালামের অন্য চোখটিও অন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। তিনি (প্রদীপ কুমার দত্ত) গ্রেনেড হামলায় আহত অসহায় সালাম সরদারের সুচিকিৎসার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।