একজন সেনা সদস্য স্ত্রী তানিয়া সুলতানা (২১) অন্ত:সত্তা থাকাকালীন সময়ে প্রসব ব্যাথা নিয়ে মঙ্গলবার চলতি এইচএসসি পরীক্ষায় দিতে বসেন। পরে সন্ধ্যায় পৌর এলাকার অবস্থিত গফরগাঁও আধুনিক হাসপাতালে কন্যাসন্তান জন্ম দেন। একদিনের নবজাতক কন্যাকে রেখেই গতকাল বৃহষ্পতিবার সকালে ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষায় দিতে বসলেন।
জানা গেছে, চলতি এইচএসসি পরীক্ষায় আলতাফ হোসেন গোলন্দাজ ডিগ্রী কলেজ থেকে তানিয়া সুলতানা বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। মঙ্গলবার ইংরেজি ১ম পত্র পরীক্ষা চলাকালে তাঁর প্রসব ব্যথা শুরু হলে পরীক্ষা শেষে তাঁকে নেওয়া হয় গফরগাঁও আধুনিক হাসপাতালে। সেখানে সন্ধ্যায় সিজারিয়ানে নবজাতকের জন্ম হয়। এদিকে নবজাতক কন্যাকে রেখে বৃস্পতিবার ইংরেজি দ্বিতীয় পত্র পরীক্ষায় অংশ নিতে তানিয়া সুলতানা কেন্দ্রে এসে উপস্থিত হন। কেন্দ্রে বিশেষ যতেœ নেওয়া হয় তাঁর পরীক্ষা। একদিনের নবজাতক কন্যা রেখে বৃহষ্পতিবার গফরগাঁও সরকারী ডিগ্রী কলেজ কেন্দ্রে ইংরেজি দ্বিতীয় পত্র পরীক্ষায় অংশ নেন তানিয়া সুলতানা। তিনি সেনা সদস্য ও উপজেলার চরআলগী ইউনিয়নের আরিফুল ইসলামের স্ত্রী এবং চরআলগী ইউনিয়নের বোরাখালী চরের সেনা সদস্য আবু সাহিদের মেয়ে। গত বছরের ফেব্ররুয়ারীতে তাদের বিয়ে হয়।
তানিয়ার মা লিপি বেগম বলেন, আমার মেয়ে অন্ত:সত্তা হয়েও পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তবে এভাবে পরীক্ষার মধ্যে মাতৃত্বের আরেক পরীক্ষা দিতে হবে তা ভাবতে পারেননি। মেয়ের অদম্য মেধা আর ইচ্ছাশক্তি দেখে আমরা তাকে পড়াশোনায় আরো উৎসাহ দেই। মনের জোড় আর পারিবারিক সহযোগিতাই তানিয়াকে উচ্চ শিক্ষার পথ করে দিয়েছে।
এইচএসসি পরীক্ষা কেন্দ্র সচিব ও গফরগাঁও সরকারি কলেজের অধ্যাপক ড. ইমরান হোসাইন বলেন, এই শিক্ষার্থীকে আমরা নিয়ম মোতাবেক বিশেষ যতেœ পরীক্ষায় অংশ গ্রহণের সুযোগ করে দিয়েছি। সার্বক্ষণিক তার শারীরিক খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। সেই সাথে পরীক্ষা কেন্দ্রে দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক এই পরীক্ষার্থীর দেখভাল করছেন।
পরীক্ষা শেষ করে কলেজ রোডের গফরগাঁও আধুনিক হাসপাতালে সন্তানের কাছে ফিরে আসেন তানিয়া। বৃহস্পতিবার দুপুরে আধুনিক হাসপাতালে তাঁর সঙ্গে কথা হলে সে জানান, গত মঙ্গলবার ইংরেজি ১ম পত্র পরীক্ষা চলাকালে তাঁর প্রসব ব্যথা শুরু হলে পরীক্ষা শেষে তাঁকে গফরগাঁও আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে নরমাল ডেলিভারীর জন্য দীর্ঘ সময় চেষ্টা করে নবজাতকের কথা ভেবে চিকিৎসকেরা সিজারিয়ান অপারেশনের সিদ্ধান্ত নেন। এরপর সন্ধ্যায় সিজারিয়ানের মাধ্যমে আমার একটি মেয়ে সন্তানের জন্ম হয়। এক দিনের নবজাতককে নিজ মায়ের কাছে রেখে পরীক্ষা দিতে যাওয়ার আগে তানিয়া বলেন, এই অনুভূতির কথা কোনদিন ভুলতে পারবনা। আমি কৃতজ্ঞতা জানাই গফরগাঁও আধুনিক হাসপাতাল কতৃপক্ষের প্রতি। তারা আমাকে প্রসব পরবর্তী সময়ে বিশেষ যতœ নিয়েছেন ও হাসপাতালেই পাশের একটি কক্ষে পরবর্তী দিনের পরীক্ষার প্রস্তুতি গ্রহণের সুযোগ করে দিয়েছেন। সন্তান জন্ম দেওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই পরীক্ষা দিতে পেরে আমি অনেক আনন্দিত।
সিজারিয়ান অপারেশনের দায়িত্বরত চিকিৎসক গাইনী, প্রসূতিবিদ্যা বিশেষজ্ঞ ও সার্জন ডা. শারমিন আক্তার পপি বলেন, ‘আমরা প্রসূতির স্বাস্থ্যের অবস্থার ওপর নির্ভর করে তাকে পরীক্ষা দেওয়ার অনুমতি দেই। সবচেয়ে বড় কথা হলো, প্রসূতি নিজেই পরীক্ষা দেওয়ার জন্য মানসিকভাবে তৈরি ছিল। প্রসবকালীন জটিলতা উপেক্ষা করে মেয়েটি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ায় এটি অন্যান্য মেয়েদের জন্য একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।