‘আমার যেটুকু ভিটেমাটি আছিল,রোববার (২৭আগষ্ট) তিস্তার পেটোত চলি গেইছে। কোন রকমে ঘরের চাল বেড়া খুলি নিচলোং। নিজের জায়গা জমিন বলতে আর নাই। সব শ্যাষ হইছে গতকাল থাকি।’ কান্নাজড়িত কন্ঠে কথাগুলো বলছিলেন, কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের খিতাব খাঁ বড়দরগা এলাকার সামছুল ইসলাম (৫৫)। তিনি আরও বলেন, রোববার থেকে বউ বাচ্চা নিয়ে মানষের বাড়িতে আছি। মানুষ আর কতদিন থাকতে দিবে কন। আমি কৃষি কাজ করে খাই। জায়গা জমিন কিনে বাড়ি করার মত সামর্থ্য নাই। খ্বু একটা চিন্তাত আছি, বাঁচমো কেমন করি। প্রায় ৮০ শতক বাপ দাদার জমিন ছিল ভাঙতে ভাঙতে সব শ্যাষ হইলো। এলা কি যে হইবে আল্লাহ পাক ছাড়া কেউ জানে না।
রাজারহাটে তিস্তা নদীতে পানি কমতে শুরু করায় দেখা দিয়েছে তীব্র নদী ভাঙন। তিস্তার ভাঙনে নির্ঘুম রাত কাটছে তিস্তা পাড়ের মানুষের। তবে তিস্তার পানি কমলেও এখনো বিপদসীমার ২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে তিস্তার পানি কমে যাওয়ার ফলে রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের গতিয়াসাম, চর খিতাব খাঁ, বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের চতুরা, রামহরি ও কালিরহাট এলাকায় দেখা দিয়েছে তিস্তা নদীর ভাঙ্গন।
রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের বড়দরগা গ্রামের রফিকুল ইসলাম বলেন, তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেলেও ভাঙে, পানি কমলেও ভাঙে। আমাদের সুপারির বাগান ছিল সেখানে প্রায় ২০০টার মতো গাছ ছিল। সেই বাগানের সুপারি বিক্রি করে সংসার চলতো। এখন মাত্র আর ২০-২৫টা সুপারির গাছ আছে। ভিটেমাটিসহ সব সুপারির গাছ নদীতে চলে গেছে। এখন সব শেষ, মাথা গোঁজারও ঠাঁই নেই কোথায় যাবো। এ পর্যন্ত ৩-৪ বার বাড়ি ভাঙছি।
রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের খিতাব খাঁ এলাকার ইউপি সদস্য (মেম্বার) মামুন মিয়া জানান, তিস্তা নদীর পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে দেখা দিয়েছে তীব্র নদী ভাঙন। আমার এখানে গত ৫-৬ দিনে প্রায় ৫০টি মত পরিবার ভিটেমাটি হারিয়েছে। এর মধ্যে অনেকের জায়গা জমি না থাকায় অন্যের বাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিয়ে কোনরকমে রাত কাটাচ্ছেন। এমন একটা অবস্থা তিস্তার পানি কমলেও নদী ভাঙনে, পানি বৃদ্ধি পেলেও নদী ভাঙে।
কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপণ্ডপরিচালক বিপ্ল¬ব কুমার মোহন্ত জানান, বন্যার পানিতে ২ হাজার ৪০ হেক্টর জমির আমন ধান, ৯৮ হেক্টর জমির সবজি ও ১৬ হেক্টর জমির বীজতলা পানিতে তলিয়ে গেছে। পানি শুকিয়ে গেলে এসব ফসলের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা যাবে।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, রাত থেকে তিস্তা নদীর পানি কিছুটা কমতে শুরু করেছে। আমরা ভাঙন কবলিত এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধের কাজ করছি।