বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে পা দিয়েই শিক্ষার্থীদের সম্মুখীন হতে হয় ‘র্যাগিং’ নামের এই অপসংস্কৃতির। নতুন আশা নিয়ে নবীন শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে আসা যেন মানসিক বিপর্যয়ের দিকে যায়, এই র্যাগিং। র্যাগিংয়ের মাধ্যমে নাকি নবীন শিক্ষার্থীদের আদব-কায়দা শেখানো হয়! কিন্তু বর্তমানে র্যাগিংয়ের নামে নবীন শিক্ষার্থীদের কান ধরে ওঠবোস করানো, মারধর করা, পানিতে দাঁড় করিয়ে রাখা, আগুনে ছ্যাঁকা দেওয়া ইত্যাদী অত্যাচার করে থাকে। ফলে র্যাগিংয়ের শিকার শিক্ষার্থীরা মানসিক দিক থেকেও নির্যাতিত। অনেকেই র্যাগিংয়ের ভয়ে ক্যাম্পাস অবধি ছেড়ে দেয়। আবার অনেকেই আত্মহত্যার মতো সিদ্ধান্তও নেয়। মোটকথা, ক্যাম্পাসে আসা নবীনরা সবসময়ই র্যাগিংয়ের ভয়ে ভীত থাকে। ক্যাম্পাসে র্যাগিংয়ের মাত্রা দিন দিন বেড়েই চলছে। নতুন শিক্ষার্থীরা র্যাগিংয়ের শিকার হয়ে তারাও পরবর্তী সময়ে একই কাজ করে। তাই, বিশ্ববিদ্যালয়ের শুরু ও শেষ দিনগুলো সুন্দর-সাবলীল করার জন্য র্যাগিং বন্ধ করতে হবে। র্যাগিং আগে হতো শুধু ছাত্রদের মধ্যে, বর্তমানে ছাত্রীরাও আক্রান্ত। র্যাগিংয়ের নামে অত্যাচার কমবেশি সব বিশ্ববিদ্যালয়েই প্রচলিত আছে। র্যাগিংয়ের শাস্তির বিষয়েও বিশ্ববিদ্যালয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো বিধান নেই। এমনকি অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন র্যাগিংয়ের বিচার করতে পারে না বিভিন্ন সংগঠনের চাপে বা লেজুড়বৃত্তির রাজনীতির কারণে। এমনি সম্প্রতি একটি ঘটনা ঘটে, বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজে। সেখানে এক ছাত্রীকে দুই দফায় হলের একটি কক্ষে ডেকে নিয়ে শারীরিক নির্যাতন, গালাগাল, হুমকি ও মুঠোফোন তল্লাশি করেন সেই হলেরই দুই জ্যেষ্ঠ আবাসিক ছাত্রী, যাঁরা নিজেদের ছাত্রলীগের নেত্রী বলে দাবি করেন। প্রথমবার দুই ছাত্রীকে নিয়ে এক ছাত্রলীগ নেত্রীর কক্ষে নিয়ে নির্যাতন করা হয়। এরপর ওই দুই ছাত্রী আরেক আবাসিক ছাত্রীকে বিষয়টি জানালে ফের একজনকে ডেকে নিয়ে তাঁর ওপর মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন চালানো হয়। একপর্যায়ে অচেতন হয়ে পড়লে তাঁকে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ইতোমধ্যে সংবাদমাধ্যমে এসেছে মেডিকেল কলেজ প্রশাসন নাকি ওই ভুক্তভোগী ছাত্রীর কাছে জানতে চেয়েছে, তিনি বিচার চান, না চিকিৎসা চান? এর অর্থ বিচার চাইলে তাঁকে চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করা হবে আর চিকিৎসা চাইলে বিচার পাবেন না। কলেজের উপাধ্যক্ষ বিষয়টিকে ‘সামান্য ঘটনা’ বলে উড়িয়ে দিতে চেয়েছেন এবং সাংবাদিকেরা ঘটনার খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে সেখানে নিগ্রহের শিকার হয়েছেন। কলেজের শিক্ষক ও একশ্রেণির শিক্ষার্থী সাংবাদিকদের ওপর চড়াও হয়েছেন। তাঁরা একজন সাংবাদিকের ক্যামেরা ভেঙেছেন। এভাবে একের পর এক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, আবাসিক হলে ছাত্র বা ছাত্রীরা নির্যাতনের শিকার হবে, সেটা চলতে পারে না। শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজের ওই আবাসিক হলের প্রশাসন কী করেছে? ছাত্রীদের নিরাপত্তা দেওয়া কি তাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না? আমরা মনে করি, ভুক্তভোগী ছাত্রীর সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। সেই সঙ্গে তাঁর নিরাপত্তাও নিশ্চিত করতে হবে। ছাত্রলীগের স্বঘোষিত নেত্রী বা যে-ই হোক না কেন, যারা উল্লিখিত ছাত্রীর ওপর মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন চালিয়েছে, তাদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। উচ্চ আদালতের নির্দেশনা মেনে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজসহ সব উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে র্যাগিং বা নির্যাতনবিরোধী কমিটি গঠন করতে হবে এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যেন র্যাগিংয়ের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়।