৩০ আগস্ট আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস। প্রতি বছর গুমের শিকার ব্যক্তিদের স্মরণে করে সারা পৃথিবীতে নানা আয়োজনে আন্তর্জাতিক এই দিবসটি পালন করা হয়। এখনো গুম হওয়া ব্যক্তিদের পথ চেয়ে আছেন তাদেও পরিবারের স্বজনেরা। সাদা পোশাকে তুলে নেয়ার পর এখনো অনেকের খোঁজ মেলেনি। রাজনীতিক, সাবেক সরকারি কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী ছাড়াও সমাজের উচ্চ স্তরের ব্যক্তিও রয়েছেন এ তালিকায়। নিখোঁজ হওয়ার পর কেউ কেউ ফিরেও এসেছেন। তবে এ সংখ্যা খুবই কম। নিখোঁজ ব্যক্তিকে ফিরে পেয়ে স্বজনেরা খুশি হলেও কেন বা কিভাবে কারা এ ঘটনা ঘটালো তা অজানাই থেকে যায়। তবে নিখোঁজ হওয়া ব্যক্তির স্বজনদের অভিযোগ- গুম হওয়া অনেকেই আর ফিরে আসেনি। স্ত্রী, সন্তান-বাবা-মা এবং স্বজনেরা এখনো পথ চেয়ে আছেন প্রিয় মানুষটির ফিরে আসার অপেক্ষায়। এভাবেই দিন থেকে মাস, বছর চলে গেলেও প্রিয় মানুষটি আর বাড়ি ফিরে আসছে না। এরইমধ্যে প্রতিবছর ৩০ আগস্ট অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস। ২০১১ সাল থেকে প্রতি বছর ৩০ আগস্ট গুম হওয়া মানুষগুলোকে স্মরণ এবং সেই সঙ্গে তাদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানানোর জন্য দিবসটি পালন করা হচ্ছে বিশ্বব্যাপী। সাম্প্রতিক সময়ে দেশে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা বন্ধ না হলেও অনেকটাই কমেছে।
বিশ্বের দেশে দেশে গুম হওয়া থেকে সব ব্যক্তির সুক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক সনদ জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ‘দিবস’টি গৃহীত হয় ২০০৬ সালের ২০ ডিসেম্বর। ২০১০ সালের ডিসেম্বরে ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন ফর প্রটেকশন অব অল পারসন্স এ্যাগেইনস্ট এনফোর্সড ডিসএ্যাপিয়্যারেন্স এই আন্তর্জাতিক সনদ কার্যকর হয় তাতে ৩০ আগস্টকে আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস ঘোষণা করা হয়। ২০১১ সাল থেকে প্রতি বছর ৩০ আগস্ট গুম হওয়া মানুষগুলোর প্রতি সমবেদনা জানানোর জন্য দিবসটি বিশ্বব্যাপী পালন করা হচ্ছে। আর গুমের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে রাজনৈতিক নেতাকর্মীর পাশাপাশি আছে সাধারণ লোকজনও। যার ফলে গুমের হাত থেকে সুরক্ষা পাওয়ার অধিকারটি আন্তর্জাতিক আইনে পরিণত হয় এবং অপরাধ হিসেবে আন্তর্জাতিক আইনে স্বীকৃৃতি পায়। বাংলাদেশে গুম হওয়া ইস্যুতে মানবাধিকার লংঘনের অভিযোগে ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর র্যাবের সাবেক ও বর্তমান ৬ কর্মকর্তার উপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট থেকে নিষেধাজ্ঞা জারী করা হয়। এবং ২০১১ সালে গৃহযুদ্ধ শুরুর পর সিরিয়ায় এ পর্যন্ত প্রায় ৮৫ হাজার মানুষ গুম হয়েছে। এদের মধ্যে বিরোধী দলীয় রাজনীতিবিদ ও মানবাধিকার কর্মীর পাশাপাশি আছে বেসামরিক লোকজনও রয়েছে। বাংলাদেশে ২০০৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত গুম ও অপহরণের শিকার হয়েছেন ৬১৪ জন নাগরিক। অবিলম্বে গুম হওয়া সব মানুষকে খুঁজে বের করতে হবে। এবং দ্রুত ও নিরপেক্ষভাবে গুমের ঘটনাগুলোর তদন্ত করতে হবে। সেই সঙ্গে গুমের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া এবং নিখোঁজ ব্যক্তি ও তাঁদের পরিবারের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করারও দাবি জানাচ্ছি। যদিও দেশের নাগরিকের জীবন, নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের প্রধানতম দায়িত্ব।
গুম ও নিখোঁজের ঘটনাগুলো আন্তর্জাতিক মহলে বাংলাদেশের গ্রহণযোগ্যতা ও ভাবমূর্তি বিপদগ্রস্ত করছে। তাই গুম ও নিখোঁজ হওয়া মানুষ ফিরে আসবেন, গুমের একটি ঘটনাও আর ঘটবে না, সেটাই সবার কাম্য। যদি কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকে, তা যতই গুরুতর হোক, বিভিন্ন অভিযোগ তুলে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী অভিযুক্ত ব্যক্তিকে তুলে নিয়ে গেছে। তাঁকে অবশ্যই আইনের কাছে সোপর্দ করতে হবে। কারণ, প্রত্যেক ব্যক্তির আইনের আশ্রয় পাওয়ার অধিকার তার সাংবিধানিক অধিকার। গুম, খুনের এ পরিবেশ সমাজকে একটা ভয়ের চাদরে ঢেকে ফেলেছে। বাংলাদেশে গত বেশ কয়েক দশক ধরে একের পর এক গুমের ঘটনা ঘটছে, কিন্তু সরকারের তরফ থেকে এটি বন্ধ করার জন্য কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। বরং গত এক দশক ধরে বিষয়টি নিয়ে জাতিসংঘের বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু কখনো বিষয়টিকে সেভাবে গুরুত্ব দেয়া হয়নি। এই ধারা বয়ে চললে বাংলাদেশ আদিম অরণ্যের অন্ধকারে ডুবে যাবে। তাই সকল গুমের তদন্তের দাবি জানাই। গুমের শিকার সকল নিখোঁজ ব্যক্তিকে অনতিবিলম্বে খুঁজে বের করে তাদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হোক। প্রতিটি গুমের অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিতে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ কমিশন গঠন করা ও গুম সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সনদ স্বাক্ষর করতে হবে। গুমের মতো গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগগুলোকে অস্বীকার না করে এ ধরনের ঘটনার বিচার নিশ্চিতে বিদ্যমান আইন কাঠামোতে পরিবর্তন করতে হবে।