‘দুর্নীতি’ শব্দটি নেতিবাচক শব্দ। এটি ইতিবাচক শব্দ ‘নীতি’ থেকে উদ্ভূত হয়েছে। আভিধানিক অর্থে ‘দুর্নীতি’ হলো নীতিবিরুদ্ধ ও অসদাচরণ। দুর্নীতি বলতে সাধারণত ঘুষ, বল প্রয়োগ বা ভীতি প্রদর্শন, প্রভাব বা ব্যক্তি বিশেষকে বিশেষ সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে অফিস-আদালতকে ব্যক্তিগত স্বার্থ লাভের জন্য অপব্যবহার করাকে বুঝায়। বর্তমানে সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়েছে দুর্নীতি। সর্বগ্রাসী এই সামাজিক ব্যাধির মরণ ছোবলে বর্তমান সমাজ জর্জরিত। দুর্নীতি আজ রাজনীতি, প্রশাসন, অর্থনীতি, সামাজিক, ধর্মীয় ও ব্যক্তি জীবনের সব ক্ষেত্রে বিরাজ করছে। এমনকি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও তা থেকে বাদ যায়নি। দুর্নীতির কারণে সবচাইতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় দেশের সুবিধাবঞ্চিত, দরিদ্র ও ক্ষমতাবলয়ের বাইরের জনগোষ্ঠী। দুর্নীতি উন্নয়নকে ব্যাহত করে এবং মানুষের মৌলিক অধিকারকে হরণ করে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা হলো দুর্নীতি। দুর্নীতি সমাজে অর্থনৈতিক ও সামাজিক বৈষম্য বৃদ্ধি করে; গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও গণতান্ত্রিক প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তিকে দুর্বল করে দুর্নীতি। উন্নত দেশগুলোর তুলনায় আর্থিক অবস্থা কিছুটা নগণ্য হলেও ধীরে ধীরে দেশ আর্থিক সচ্ছলতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। শিক্ষার মান বেড়েছে। দেশে-বিদেশে বাংলাদেশের ছাত্রছাত্রীরা লেখা পড়া করছে। কিন্তু দুর্নীতির ক্রমশ বেড়েই চলছে। সমাজ, রাষ্ট্র তথা জাতিকে সমৃদ্ধশালী করতে প্রথমেই দেশ থেকে দুর্নীতিকে নির্মূল করতে হবে। দেশ ও জাতির উন্নতির জন্য সরকারকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি প্রয়োগ করতে হবে। আইনের কার্যকর প্রয়োগ বাড়াতে হবে। দুর্নীতিবাজদের রাজনৈতিক পরিচয় বাদ দিয়ে শুধু দুর্নীতিবাজ হিসেবে চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করতে হবে। দুর্নীতি দমন কমিশনের ক্ষমতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি করে প্রতিষ্ঠানটির কার্যকারিতা আরও বাড়ানো হবে। ঘুষ, অনুপার্জিত আয়, কালো টাকা, চাঁদাবাজি, ঋণখেলাপি, টেন্ডারবাজি ও পেশিশক্তি প্রতিরোধ এবং দুর্নীতি-দুর্বৃত্তায়ন নির্মূলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। নিজেদের সম্পদ, আয়-রোজগার সম্পর্কে সর্বস্তরের নাগরিকদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হবে। শুধু দুর্নীতিবাজদের শাস্তি দিয়ে সম্ভব নয়, এজন্য প্রয়োজন গণসচেতনতা ও দেশপ্রেম। সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে আন্দোলনের মাধ্যমে দুর্নীতি প্রতিরোধ করতে হবে। দুর্নীতিতে বাংলাদেশের অবস্থান বরাবরই এগিয়ে। যা কিনা দেশের জন্য বড় হুমকি। দুর্নীতি কোনো নতুন কিংবা দরিদ্র দেশের সমস্যা নয়। সমগ্র মানবজাতির জন্যই এটি একটি কঠিন সমস্যা। সমূলে দুর্নীতি উচ্ছেদ করা সম্ভব নয় তাই দুর্নীতিকে নিয়ন্ত্রণ করে সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসতে হবে। দুর্নীতি দমনে রাজনৈতিক অঙ্গীকার ও আইনের প্রয়োগ মুখ্য হলেও তা শুধু সরকারের দায় নয়, জনগণেরও দায় রয়েছে। জনগণ দুর্নীতি সম্পর্কে যত সচেতন হবে ততই অসাধু ব্যক্তিরা দুর্নীতি করতে ভয় পাবে। পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি সকল প্রতিষ্ঠানকে আন্তরিকভাবে দুনীতি দমনে এগিয়ে আসতে হবে। তাই দুর্নীতি দমনে প্রয়োজন সরকার ও জনগণের সমন্বিত পদক্ষেপ। আর তাহলেই দুর্নীতিমুক্ত একটি দেশ গঠন করা সম্ভব হবে।