যানজট হচ্ছে যানবাহনের জট। রাস্তায় যানবাহন স্বাভাবিক গতিতে চলতে না পেরে অস্বাভাবিক যে জটের সৃষ্টি হয় তাকেই সাধারণত যানজট বলা হয়ে থাকে। যানজট খুব পরিচিত একটা শব্দ। প্রতিদিন সবাই এ যানজটের সম্মুখীন হচ্ছে। বর্তমানে নগরবাসীর প্রধান সমস্যা এ যানজট। নগরজীবন যেন থমকে গেছে এ যানজটে। দিন যত যাচ্ছে, যানজট যেন তত বৃদ্ধি পাঁচ্ছে। বর্তমানে বিশেষ করে অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, হাসপাতাল, বিপণি বিতান প্রভৃতি জায়গায় যাতায়াত করা এক দুঃস্বপ্নের যন্ত্রণার মতো। যানজটের কারণে প্রতিদিন যে কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে, তার আর্থিক মূল্য প্রায় ১৪০ কোটি টাকা। ২০২২ সালে ঢাকার সড়কে প্রতিদিন ৮০ লাখের বেশি কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়েছে, যা ২০১৭ সালে ছিল দিনে ৫০ লাখ কর্মঘণ্টা। বিশ্বের সবচেয়ে যানজটপূর্ণ শহরের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে ঢাকা। এই যানজট সৃষ্টি হওয়ার পেছনে অনেকগুলো কারণ আছে। এর মাঝে নগরীতে রিকশার সংখ্যা বেশি হওয়া একটি প্রধান কারণ। এই রিক্সার কারণে সড়কে অন্য দ্রুতগতির যানবাহনগুলো ধীর হয়ে পড়ে, পাশাপাশি এই রিক্সাচালকদের নেই কোন লাইসেন্স অথবা সড়কের আইন সম্পর্কে কোন ধারনা ফলে তাদের অদক্ষতার কারণে সড়কে সৃষ্টি হয় দীর্ঘ যানজটের। একটি আধুনিক নগরীতে মোট আয়তনের ২০ থেকে ২৫ শতাংশ রাস্তা বা সড়ক থাকা প্রয়োজন। কিন্তু ঢাকায় আছে মাত্র সাত থেকে আট ভাগ। এক গবেষণায় দেখা যায় ঢাকায় ১৫ ভাগ যাত্রী দখল করে আছেন মোট সড়কের ৭০ ভাগ। বর্তমানে ঢাকায় কমবেশি ১৫ ভাগ যাত্রী প্রাইভেট গাড়িতে যাতায়াত করেন। এই প্রাইভেট কারের দখলে থাকে ৭০ ভাগেরও বেশি রাস্তা। বাকি ৮৫ ভাগ যাত্রী অন্য কোনো ধরনের গণপরিবহন ব্যবহার করেন। অর্থাৎ তারা গণপরিবহন সড়কের মাত্র ৩০ ভাগ এলাকা ব্যবহারের সুযোগ পায়। এর পাশাপাশি অবৈধ পার্কিং এবং নানা ধরনের দখলদারদের হাতে রাজধানীর বেশিরভাগ সড়ক। এ ছাড়া ফুটপাথ হকারদের দখলে থাকায় প্রধান সড়কেই পায়ে হেঁটে চলেন নগরবাসী। ফলে যানজটের সঙ্গে তৈরি হয় জনজট। রাজধানীর গণপরিবহনের ৮০ শতাংশই যন্ত্রচালিত এবং দ্রুত গতিসম্পন্ন। অথচ বিগত ১০ বছরে ঢাকার যান চলাচলের গতিবেগ ঘণ্টায় ২১ কিলোমিটার থেকে ৭ কিলোমিটারে নেমে এসেছে যা ২০২৭ সালের মধ্যে ঘণ্টায় ৪ কিলোমিটারে নেমে আসতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। প্রতিদিন যে পরিমাণ শ্রমঘণ্টা অপচয় হয় তাতে বছরে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় ৩৭ হাজার কোটি টাকা। শুধু মাত্র ঢাকার যানজট ৬০ শতাংশ কমানো গেলে বছরে ২২ হাজার কোটি টাকা বাঁচানো সম্ভব। তাই সরকারকে এখনি নিতে হবে স্থায়ী পরিকল্পনা। রাজধানীতে রিক্সার চলাচল সীমিত করতে হবে, দরকারে রিক্সার জন্য সড়কে আলাদা লেন করে দিতে হবে। সড়ক ও ফুটপাত থেকে অবৈধ দোকানপাট উঠিয়ে ফুটপাতগুলো দখল মুক্ত করতে হবে। কঠোরভাবে ট্রাফিক আইনের বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। যানবাহন চলাচলে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব হলে যানজটের লাগাম টেনে ধরা সম্ভব হবে। রাজধানী ঢাকার প্রাইভেট কারের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। যত্রতত্র গাড়ি পার্ক করা ও গাড়ি ঘোরানো থেকে বিরত রাখতে হবে। পর্জাপ্ত পরিমাণ ট্রাফিক পুলিশ নিয়োগ দিতে হবে। যানজটের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে বেরিয়ে আসা এখন সময়ের দাবি। ঢাকার যানজট সমস্যা রাতারাতি সমাধান সম্ভব নয় তাই সরকারকে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।