জন্মগতভাবে রোগাক্রান্ত, দুর্ঘটনা, অপচিকিৎসা বা অন্য কোনো কারণে দৈহিকভাবে বিকলাঙ্গ বা মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন এবং বৈকল্য বা ভারসাম্যহীনতার ফলে স্থায়ীভাবে আংশিক বা সম্পূর্ণ কর্মক্ষমতাহীন এবং স্বাভাবিক জীবনযাপনে অক্ষমদেরই প্রতিবন্ধী হিসেবে অভিহিত করা হয়। এটি কোন রোগ নয়। তাই যাদের স্বাভাবিক কাজের ক্ষমতা নাই তাদের প্রতি করুণা নয়, প্রয়োজন সহযোগিতার মনোভাব পোষণ। দেশের জনসংখ্যার একটি বড়ো অংশ হলো এই প্রতিবন্ধীরা। দেশের প্রতিবন্ধীদের পরিবার থেকে শুরু করে আত্মীয়-পরিজন, প্রতিবেশী, সবাই খাটো করে দেখে। সমাজের বাকি সদস্যদের মতো স্বাভাবিক জীবনযাপনের কথা থাকলেও, তারা হয় সব অধিকার থেকে বঞ্চিত। শিক্ষাক্ষেত্র, কর্মক্ষেত্র, পারিবারিক অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে সর্বক্ষেত্রেই তারা বৈষম্যের শিকার হয়ে থাকে। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী দেশে বর্তমানে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির সংখ্যা ১৫ লাখের বেশি। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশে শতকরা ১৫ জন প্রতিবন্ধী। এই বৃহৎ সংখ্যক প্রতিবন্ধীদের কর্মসংস্থানের জন্য বিভিন্ন আইন, নীতি ও কর্মসূচি রয়েছে। তবে এসব বাস্তবায়নে সংস্থাগুলোর উদাসীনতা ও অবহেলার কারণে তাদের জন্য কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়ছে। আবার দেখা যায় সচেতনতার অভাবে অনেক দরিদ্র পরিবার তাদের প্রতিবন্ধী সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে নানা অজুহাত দেখিয়ে ভিক্ষাবৃত্তি করে বেড়ায়। তাই আমাদের প্রতিবন্ধীদের নিয়ে এখনি দীর্ঘস্থায়ী পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। কোনো মানুষ একা থাকতে পারে না। তাই মানুষ সমাজ গঠন করে। সেই কারণে সমাজের প্রতি মানুষের নির্দিষ্ট দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। সমাজে প্রতিটি মানুষের অধিকার আছে। প্রতিবন্ধীরাও সেই অধিকার থেকে বঞ্চিত হতে পারে না। তাই প্রতিবন্ধীদের অক্ষমতা না দেখে তাদের সুপ্ত প্রতিভাকে খুঁজে বের করে কাজে লাগাতে হবে। তারা বোঝা নয় বরং সহযোগিতা পেলে তারাও দেশের সম্পদে রূপান্তরিত হতে পারে। এজন্য ব্যক্তি ও সামাজিক মনোভাবের পরিবর্তন করতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও চাকরি উভয় জায়গায় প্রতিবন্ধীদের জন্য অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। তাদের জন্য উপযুক্ত কর্মক্ষেত্র ও কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। তাদের প্রতি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন এবং পারিবারিক ও সামাজিকভাবে সমর্থন ও সহায়তা দিতে হবে। প্রতিবন্ধীরা এখন প্রতি মাসে ৮৫০ টাকা করে ভাতা পান, এই ভাতার পরিমাণ আরো বাড়াতে হবে। শিক্ষা একটি বড় অন্তরায় প্রতিবন্ধীদের জন্য। বর্তমানে দেশে প্রতিবন্ধীদের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে মাত্র ১৩২টি। যা প্রতিবন্ধীদের সংখ্যার তুলনায় খুবই অপ্রতুল। তাই দেশের প্রতিবন্ধীদের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা আরো বাড়াতে হবে। যেসব হতদরিদ্র পরিবারে প্রতিবন্ধী রয়েছে এমন পরিবারগুলোয় আয়বর্ধনমূলক সহযোগিতা দেয়া প্রয়োজন, যাতে তারা দরিদ্রতা থেকে বেরিয়ে আসতে পারেন। প্রতিবন্ধীরা দেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ। সমাজের একটি অংশ বাদ রেখে কখনো ওই দেশের উন্নয়ন করা সম্ভপর হয় না তাই সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়তে হলে প্রতিবন্ধী ও প্রতিবন্ধীতার ঝুঁকিতে রয়েছে এমন ব্যক্তির জন্য সবাই মিলে কাজ করতে হবে।