রাজধানীবাসীর জন্য আজ রোববার থেকে উন্মুক্ত হয়েছে নতুন এক পথ, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। দেশের প্রথম উড়াল সড়কপথ এটি। এই পথ ধরে নির্ঝঞ্ঝাটে, ভোগান্তিহীনভাবে, দ্রুততম সময়ে চলাচল করতে পারছেন নগরবাসী। সব অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে গত শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাওলা থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত অংশ উদ্বোধন করেন। কাওলা প্রান্তের টোল প্লাজায় গাড়ি প্রতি ৮০ টাকা করে টোল দিয়ে নতুন এই পথের প্রথম যাত্রী হন সরকারপ্রধান। আর আজ তা উন্মুক্ত হলো সর্বসাধারণের জন্য। রোববার সকাল ৬টা থেকে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে যানবাহন চলাচল শুরু হয়। সরেজমিনে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাওলা প্রান্তে গিয়ে দেখা যায়, ব্যক্তিগত গাড়ি (প্রাইভেট কার) ও কয়েকটি ছোট পিকআপ ভ্যান এর ওপর দিয়ে চলাচল করছে। সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ কোনো প্রকার বাস চলাচল করতে দেখা যায়নি। তবে কয়েকটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও কিছু মোটরসাইকেল সাইকেলচালক এক্সপ্রেসওয়ে উঠতে চাইলে পুলিশ তাদের নিচের পথ দিয়ে চলাচল করার কথা জানান। গত ১৪ আগস্ট রাজধানীর সেতু ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত এই উড়ালসড়ক পথে আসতে সময় লাগবে ১০ মিনিট। তবে পথচারী, বাইসাইকেল, মোটরসাইকেল আপাতত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ওপর চলবে না। মোটরসাইকেলে রাইড শেয়ার করেন শেখ কাওসার। তিনি উঠতে চেয়েছিলেন এক্সপ্রেসওয়েতে, তবে মোটরসাইকেল না চলার অনুমতি থাকায় পুলিশি বাধায় তিনি যেতে পারেননি। তিনি বলেন, আমার মনে হয় মোটরসাইকেল না যেতে দেওয়ার সিদ্ধান্তটি উপযুক্ত। পদ্মা সেতুতে যেহেতু দুর্ঘটনা ঘটেছে তাই এখানেও মোটরসাইকেল চলাচল না করতে দেওয়ার সিদ্ধান্তকে আমি সাধুবাদ জানাই। উল্লেখ্য, বর্তমানে প্রকল্পটির সার্বিক অগ্রগতি ৬৫ শতাংশ উল্লেখ করে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, প্রকল্পটি ২০২৪ সালের জুনে শেষ হবে। ফলে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের পুরো সুফল পেতে আরও প্রায় একবছর অপেক্ষা করতে হচ্ছে নগরবাসীকে। দেশের প্রথম পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপে তৈরি হয়েছে এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। মূল এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের দৈর্ঘ্য ১৯ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার। প্রকল্পে ওঠানামার জন্য মোট ৩১টি র্যাম্প রয়েছে যার দৈর্ঘ্য ২৭ কিলোমিটার। র্যাম্পসহ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মোট দৈর্ঘ্য ৪৬ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার। ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দক্ষিণে কাওলা থেকে কুড়িল-বনানী-মহাখালী-তেজগাঁও-মগবাজার-কমলাপুর-সায়েদাবাদণ্ডযাত্রাবাড়ী হয়ে ঢাকাণ্ডচট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী এলাকা পর্যন্ত যাবে। প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা। বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত অংশের দৈর্ঘ্য ১১ দশমিক ৫ কিলোমিটার। ১১ কিলোমিটার র্যাম্পসহ এই অংশটির মোট দৈর্ঘ্য ২২ দশমিক ৫ কিলোমিটার। প্রাথমিকভাবে এই অংশের ১৫টির মধ্যে ১৩টি র্যাম্প খুলে দেওয়া হয়েছে। বনানী ও মহাখালীর র্যাম্প নির্মাণ শেষ হলেই খুলে দেওয়া হবে। প্রাথমিকভাবে এক্সপ্রেসওয়েতে গতিসীমা হবে ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার এবং এইচএসআইএ থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত ১১ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করতে যানবাহনের সময় লাগবে ১০ মিনিট। যানবাহন ওঠানামার স্থান:
উত্তরা থেকে দক্ষিণ অভিমুখী যানবাহন ওঠার স্থান- ১. হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দক্ষিণে কাওলা, ২. প্রগতি সরণি এবং বিমানবন্দর সড়কের আর্মি গলফ ক্লাব। নামার স্থান- ১. বনানী কামাল আতার্তুক অ্যাভিনিউ; ২. মহাখালী বাস টার্মিনালের সামনে ও ৩. ফার্মগেট প্রান্তে ইন্দিরা রোডের পাশে।
দক্ষিণ দিক থেকে উত্তর অভিমুখী যানবাহন ওঠার স্থান- ১. বিজয় সরণি ওভারপাসের উত্তর এবং দক্ষিণ লেন; ২. বনানী রেলস্টেশনের সামনে। নামার স্থান- ১. মহাখালী বাস টার্মিনালের সামনে; ২. বনানী কামাল আতার্তুক অ্যাভিনিউ’র সামনে বিমানবন্দর সড়ক; ৩. কুড়িল বিশ্বরোড ও ৪. বিমানবন্দর তৃতীয় টার্মিনালের সামনে।
তবু যানজট: বিমানবন্দর ও ফার্মগেট এলাকার সড়কে বরাবরের মতই যানজট লেগে রয়েছে। অফিস সময়ে ফার্মগেটের যানজট মৌচাক, মালিবাগ, শাহবাগ ছাড়িয়ে যেতে দেখা গেছে। রাজধানীর মতিঝিল, গুলিস্তান, প্রেসক্লাব, শাহাবাগ, ফার্মগেট, বাংলামোটর, মৌচাক, মালিবাগ, কাকরাইল এলাকাতেও সকাল ১১টা পর্যন্ত প্রচণ্ড যানজট ছিলো। শান্তিনগর মোড়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত ট্রাফিক পুলিশ কর্মকর্তা নাজমুল হোসেন জানান, সকাল নয়টা থেকে প্রচণ্ড জ্যাম। সপ্তাহের প্রথম দিন এমনিতেই একটু জ্যাম থাকে। একসঙ্গে স্কুল, অফিসগামী মানুষের যাতায়াতের কারণে জ্যাম হয়। ফার্মগেট এলাকায় বিকল্প বাসের চালক নুরুজ্জামান বলেন, ‘শুনেছি উড়াল সড়কের কারণে জ্যাম নাকি কমবে কিন্তু আজকে তো মনে হয় আরও বাড়ছে। এক ফার্মগেটেই কেটে গেলো ৩০ মিনিট।’ বিমানবন্দর এলাকার কাওলা থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত উড়াল সড়কের যে অংশ চালু করা হয়েছে সেটিতে বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে গাড়ির চাপ বাড়তে থাকে। টোল বক্সের কর্মী আশিকুর জানান, সকাল থেকে প্রায় দেড় ঘণ্টায় সরকারি বাস ছাড়া কোনো প্রাইভেট কোম্পানির বাস সড়কে দেখতে পাইনি। বেশি ছিলো প্রাইভেট কার। তবে দশটার পর কিছু বাস সড়ক পাস করেছে। তবে দুর্ঘটনা এড়াতে এলিভেটেড এক্সপ্রসওয়েতে মোটরসাইকেল ও সিএনজি অটোরিকশা চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এর আগে গত শনিবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাওলা অংশে নামফলক উন্মোচনের মাধ্যমে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের উদ্বোধন করেন। এরপর কাওলা প্রান্ত থেকে টোল দিয়ে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে ছোটবোন শেখ রেহানাকে নিয়ে ওঠেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ সরকারের পদস্থ কর্মকর্তারা সঙ্গে ছিলেন।