নবজাতকের মৃত্যু হল জন্মের ২৮ দিনের মধ্যে একটি শিশুর জন্মকে বোঝায়। দেশে গত কয়েক বছরে নবজাতকের মৃত্যুহার বেড়েছে আশঙ্কাজনক হারে। এই হার বেড়েছে মূলত জন্মের সময় শ্বাসরুদ্ধ হওয়া, জীবাণুর বিষক্রিয়ায় পচন, সংক্রামক রোগ ও কম ওজনের মতো কিছু কারণে। পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুমৃত্যুর হার কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশে বিশ্বে প্রশংসিত হলেও নবজাতকের মৃত্যুহার কমানো এখনও একটি বড় চ্যালেঞ্জ। নবজাতক মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ার প্রধান কারণগুলোর ভিতর অপরিণত বয়সে গর্ভধারণ অন্যতম। দেখা গেছে অপরিণত বয়সে গর্ভধারণের কারণে গর্ভকালীন জটিলতা ও অপুষ্টির শিকার হয়ে বেশির ভাগ কিশোরী মায়ের নবজাতক শিশুর করুণ মৃত্যু ঘটছে। এর পাশাপাশি সেপসিস, মেনিনজাইটিস, নিউমোনিয়া এবং নবজাতক টিটেনাসের মতো কিছু প্রাথমিক সংক্রমণকের কারণে নবজাতকের মৃত্যু হয়ে থাকে। এক প্রতিবেদনে দেখা যায় বাংলাদেশে প্রতি এক হাজার জীবিত নবজাতকের মধ্যে ৩০ জন অকাল মৃত্যুর শিকার হয়। এদের মধ্যে ১৯ শতাংশ মারা যায় অকালজাত জন্ম (প্রিম্যাচিওর বার্থ) এবং জন্মকালীন কম ওজনের (লো বার্থ ওয়েট) কারণে। নবজাতক সাধারণত ৪০ সপ্তাহ বা ২৮০ দিন মায়ের গর্ভে থাকার পর জন্মগ্রহণ করে। এই সময়ে শিশু মায়ের গর্ভে থাকার পর পৃথিবীতে এসে বেঁচে থাকার মতো পরিপক্বতা অর্জন করে। কিন্তু মায়ের বিভিন্ন শারীরিক জটিলতায় কখনো কখন নির্ধারিত সময়ের আগেই শিশুর জন্ম হয়ে যায়। ওইসকল শিশুগুলো থাকে সব থেকে বেশি মৃত্যুর ঝুঁকিতে। এক প্রতিবেদনে দেখা যায় দেশে প্রতি বছর ১ লাখ ২০ হাজার নবজাতক মারা যাচ্ছে। এর মধ্যে শতকরা ৭৫ ভাগই কিশোরী মায়ের শিশু। কিশোরী মায়ের এসব শিশুর ৫০ ভাগ মারা যাচ্ছে জন্মের ২০ ঘণ্টার মধ্যে, ৫৪ ভাগ মারা যাচ্ছে জন্মের দুদিনের মধ্যে। আর প্রতি ৯টি শিশুর মধ্যে একটি শিশু মারা যাচ্ছে পাঁচ বছর বয়সের আগেই। সারা দেশে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের আওতায় ৩ হাজার ৩৬৪টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্র রয়েছে। এ ছাড়া ইউনিয়ন পর্যায়ে ১৮৩টি, উপজেলা পর্যায়ে ১২টি ও জেলা পর্যায়ে ৬০টি মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্র এবং ঢাকায় তিনটি বিশেষায়িত হাসপাতাল রয়েছে। এত কিছু পরও ক্রমেই বেড়ে চলছে এই নবজাতকদের মৃত্যুর মিছিল। এই মৃত্যু কমানর জন্য এখনি কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নিতে হবে। নবজাতকের মৃত্যুরোধে মায়ের প্রসব-পূর্ব সেবা ও হাসপাতালে প্রসব করানোর বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। মায়ের পুষ্টি নিশ্চিত করতে হবে। বাল্যবিবাহ বন্ধ করতে হবে। একটি শিশুর শারীরিক ও মানসিক সুস্থভাবে বেড়ে ওঠার জন্য মায়ের দুধের বিকল্প নাই। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, জন্মের এক ঘণ্টার মধ্যে মায়ের দুধ পান করালে মৃত্যুহার শতকরা ৩১ শতাংশ কমে যায়। ছয় মাস বয়স পর্যন্ত শুধু মায়ের বুকের দুধ পান করালে শিশুর মৃত্যুর ঝুঁকি আরও ১২ শতাংশ কমে যায়। তাই শারীরিক ও মানসিক বিকাশে জন্ম থেকে ছয় মাস বয়স পর্যন্ত শুধু মায়ের বুকের দুধ পান করাতে হবে। কিশোরী মায়ের শিশুমৃত্যুর ভয়াবহতা তুলে ধরে ব্যাপক সচেতনতার লক্ষ্যে প্রচারণা করতে হবে। আর তাহলেই নবজাতক মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা সম্ভব হবে।