যশোরের চৌগাছায় চলতি বছরের আট মাসে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে অনন্ত ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। বিদ্যুৎস্পৃষ্টে আহত হয়েছেন অনেকে। নিহতদের মধ্যে কলেজ শিক্ষক, শিক্ষার্থী, গৃহবধূ ও কৃষক রয়েছে। এলাকাবাসীর অভিমত বিদ্যুতের যথাইচ্ছা সাইড লাইন ব্যবহার করা। অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিদ্যুৎ আইন না মেনেই নগদ নারায়নে লাইন সংযোগ দেওয়ায় হরহামেশায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে মানুষের মৃত্যু ঘটছে। ২০২৩ সালের গেল ৮ মাসের বিভিন্ন সময় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে উপজেলার ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিদ্যুৎ আইন না মেনেই নগদ নারায়নে ঝুঁকিপূর্ণ লাইন সংযোগ ও সাইড লাইনে বাঁধা না দেওয়ায় হরহামেশায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। ইচ্ছামত সাইড লাইন টেনে মোটর চালিয়ে পুকুরে পানি, ভ্যান-ইজিবাইক চার্য দেওয়াসহ মানুষের প্রয়োজনে ব্যবহার করছে। এসব ঘটনা জানার পরেও অদৃশ্য কারণে কর্মকর্তারা কিছুই বলছেন না। ফলে অবৈধ বিদ্যুৎ লাইনে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে দুর্ঘটনা ঘটছে। মরছে মানুষ ও বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী। সাইড লাইনের কারণে ক্ষতিগ্রহস্থ হচ্ছে গ্রহকরা ও হরহামেশায় ঘটছে দুর্ঘটনা। চৌগাছা হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ৩ সেপ্টেম্বর উপজেলার চৌগাছা সদর ইউনিয়েনর লস্করপুর গ্রামে বিদ্যুৎ ¯পৃষ্ট হয়ে শিমুল হোসন (২০) নামে এক মাদ্রসা ছাত্র নিহত হয়। এ ঘটনায় তার পিতা জাহাঙ্গীর আলম (৪৫) মারাত্মক আহত হন। এদিন সকালে লস্করপুর গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম ও তার ছেলে শিমুল হোসেন বিচলী কাটা মেশিনে বিচলী কাটছিল। এ সময় ছেড়া-কাটা তারের কারেণ হঠাৎ মেশনটি বিদ্যুতায়িত হলে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে। ৩০ জুন বিদ্যুৎ ¯পৃষ্টে রেজাউল ইসলাম (৪০) নামে এক কলেজ শিক্ষক ও রিয়াদ হাসান (১৩) নামে এক স্কুল ছাত্রের মৃত্যু হয়। এদিন পৃথক দুটি ঘটনায় তাদের মৃত্যু হয়। সকালে কলেজ শিক্ষক উপজলার পাতিবিলা গ্রামে তার গাছের বাগানে কাজ করতে গিয়ে বাগানের ভিতর দিয়ে নিয়ে যাওয়া একটি অবৈধ সাইড লাইনে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে তার মৃত্যু হয়। নিহত রেজাউল ইসলাম উপজেলার পাতিবিলা গ্রামের মৃত আবদুল ওয়াদুদের ছেলে ও কাটগড়া কলেজের প্রভাষক ছিলেন। একই দিন বিকেলে রিয়াদ হাসান নামে এক স্কুল ছাত্র বিকেলে তার পড়ার ঘরে বিদ্যুতের একটি বোডে কাজ করছিলো। এ সময় সে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে মারাত্মক আহত হয়। তাকে চৌগাছা সরকারি মডেল হাসপাতালে নিলে। হাসপাতালে জরুরী বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করেন। ২৩ জুলাই উপজেলার হাজরাখানা গ্রামে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে সজিব হোসেন গাজু (২৫) নামে এক কলেজ শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়। সজিব হাজরাখানা গ্রামের আবদুস সুবহানের ছেলে ও যশোর এম এম কলেজের ছাত্র ছিল। ঘটনার দিন সে হাজরাখানা গ্রামের পশ্চিমবেলে মাঠে কৃষি কাজ শেষ করে বাড়িতে ফিরছিলো। তিনি আবদুল লতিফ হাজীর বাড়ীর নিকট আসলে সেখানে থাকা অবৈধ্য সাইড লাইনে সে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যায়। ১১ এপ্রিল সকালে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে রফিকুল ইসলাম সর্দার (৫০) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়। এ দিন তিনি ধান ক্ষেতে পানি দেওয়ার জন্য গ্রামের সর্দার পাড়ামাঠে নিজের মোটরে যান। মোটরের তার থেকে বিদ্যুতায়িত হয়ে তিনি মারা যান। তিনি উপজেলার ফুলসারা ইউনিয়নের ফুলসারা গ্রামের হবিবর রহমান সর্দারের ছেলে পেশায় একজন কৃষক। একই দিন ১১ এপ্রিল রাতে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে মহিউদ্দীন (৩৩) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়। তিনি উপজেলার ধুলিয়ানী ইউনিয়নের কাবিলপুর গ্রামের ছিদ্দিকুর রহমানের ছেলে। তিনি নিজের সেচ পাম্প চালু করতে গিয়ে বিদ্যুতায়িত হন। ২৩ মার্চ বিদ্যুৎস্পৃষ্টে নাসরিন আক্তার (৩২) নামে এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়। তিনি উপজেলার সিংহঝুলি ইউনিয়নের মসিয়ূর নগর গ্রামের মহি উদ্দিনের স্ত্রী। সাইড লাইন টেনে নির্মানাধীন বাড়ীর ওয়ালে পানি দিচ্ছিলেন। এ সময় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে এ ঘটনা ঘটে। ১১ জানুয়ারী বিদ্যুৎস্পৃষ্টে জতিন্দ্র নাথ বিশ্বাস (৫৫) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়। জতিন্দ্র নাথ বিশ্বাস উপজেলার সদর ইউনিয়নের উত্তর কয়ারপাড়া গ্রামের খগেন্দ্র নাথবিশ্বাসের ছেলে। এদিন সকালে তিনি কাজ করতে মাঠে যাচ্ছিলেন। এ সময় একই গ্রামের প্রশান্ত কুন্ডুর পোট্রিমুরগীর ফার্মে শিয়াল মারার জন্য পেতে রাখা বিদ্যুতের ফাঁদে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে গুরুতর আহত হন। পরে তাকে উদ্ধার করে চৌগাছা উপজেলা সরকারি মডেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ভাবে চৌগাছায় চলতি বছরের আট মাসে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট অনন্ত ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। বিদ্যুৎস্পৃষ্টের ঘটনায় আহত হয়েছেন অনেকে। এলাকাবাসীর অভিযোগ বিদ্যুৎ বিভাগের অবহেলার কারণে এ সকল দূর্ঘটনা ঘটছে।