উত্তরের জেলা কুড়িগ্রামের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠির জীবন মান উন্নয়নে বেকারদেরকে সাবলম্বী করে গড়ে তুলতে নাগেশ্বরীতে চালু হয়েছে “সানফ্লাওয়ার টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার”। ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সী বেকার যুবক ও যুব মহিলাদেরকে দক্ষ প্রশিক্ষকের মাধ্যমে ইলেক্ট্রিক, ওয়েলডিং এবং সুয়িং ট্রেডে প্রশিক্ষণ দিয়ে দেশে-বিদেশে চাকুরির সুযোগ করে দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। গেলো ৫ বছরে এখান থেকে শহ¯্রাধিক বেকার নারী ও পুরুষ বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ নিয়ে কর্মসংস্থানের সুযোগ পেয়েছেন ৭ শতাধিক। বাংলাদেশ সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সেইপ প্রোজেক্টের বি.জি.এম.ই.এ সেইপ প্রোজেক্ট এবং বাইওয়া সেইপ প্রোজেক্ট-এর আওতায় অভিজ্ঞ প্রশিক্ষকের মাধ্যমে ২ মাস মেয়াদী সুইং মেশিন অপারেশন এবং ৪ মাস মেয়াদী ইলেকট্রিক্যাল ইন্সটলেশন এ- মেইনটেনেন্স ও ওয়েল্ডিং প্রশিক্ষন নিয়ে পাল্টে গেছে বেকারদের ভাগ্যের চাকা। প্রশিক্ষণ শেষে প্রশিক্ষনার্থীদেরকে যাতায়াত ভাতা এবং সনদপত্র প্রদান করে চাকুরি প্রাপ্তিতে সহায়তা করে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরিতে বেশ সুনাম অর্জন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। প্রশিক্ষরার্থীরা জানান, বেকারত্মের গ্লানি নিয়ে সংসারের বোঝা হয়ে ছিলেন তারা। এরইমধ্যে স্বপ্নের মতো ধরা দেয় নাগেশ্বরীর পৌরসভার বিদ্যুৎপাড়া এলাকায় গড়ে ওঠা আত্মকর্মসংস্থানমূলক এই প্রতিষ্ঠান। ফলে কারও কটু বাক্য, কিংবা বেকারত্মের গ্লানি মুছে সংসার খরচ চালানোর পাশাপাশি সন্তানদের লেখাপাড়া করাতে পারবেন বলে খুশি তারা। প্রাক্তন প্রশিক্ষানার্থীরা জানান, তাদের অনেকেই এখন বিভিন্ন কোম্পানিতে চাকুরি করছেন, কেউবা দিয়েছেন ওয়ার্কশপের দোকান। আবার কেউ ইলেকট্রিকের কাজ করে নিজের আয়েই চালাচ্ছে সংসার। ইলেকট্রিক ট্রেডের প্রশিক্ষানার্থী শিমু খাতুন জানান, মেয়েরা সবসময় অবহেলিত থাকে। তাই তিনি অবহেলা কাটিয়ে বেছে নিয়েছেন আয়ের পথ। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী এই প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষন নিচ্ছেন তিনি। তার কথায় মেয়েরা আর পিছিয়ে থাকবে না। আলতাফ হোসেন জানান, তিনি এর আগে বাড়িতে বেকার সময় কাটাতেন, এখন তিনি ইলেকিট্রকের মোটর বাঁধাই, সোলার প্যানেলের কাজ, হাউজ ওয়্যারিংসহ অনেক কাজ শিখেছেন। এখন তিনি বাইরে চাকুরি করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ওয়েলডিং ট্রেডের দুই জন প্রশিক্ষানর্থী জানান তারা গ্যাস ওয়েল্ডিং, আর্ক ওয়েল্ডিং, মিগ ওয়েল্ডিং, টিগ ওয়েল্ডিং, স্পট ওয়েল্ডিং, ফিটিংস এর ফাইলিং, গ্রাউন্ডিং, ড্রিলিং, থ্রেডিং, মেজারিংসহ আরও অনেক কাজ শিখেছেন। এছাড়াও বিভিন্ন টুলসের ব্যাবহার ও পরিচিতি সম্পর্কেও জেনেছেন তারা। এখন তারা ওয়েল্ডিং এর যাবতীয় কাজ করে চাকুরি কিংবা ওয়ার্কশপের দোকান দিয়ে আয় করতে পারবেন। সুইং ট্রেডের খোতেজা আক্তার হাসি জানায় তাদের ট্রেডের প্রশিক্ষনার্থীরা গার্মেন্টস সেক্টরের বিভিন্ন পোশাক তৈরির কাজ শিখেছেন। তারা কেউ কেউ পোশাক কারখানায় চাকুরি করবেন আবার কেউ ঘরে বসে বিভিন্ন পোশাক তৈরি করে আয় করতে পারবেন। ইলেকট্রিক ট্রেডের প্রশিক্ষক নাজমা খাতুন এবং ওয়েল্ডিং ট্রেডের প্রশিক্ষক মহিদুল ইসলাম জানান, বেকার যুবক ও যুবতীদেরকে প্রশিক্ষনের মাধ্যমে দক্ষ করে তৈরি করে দেশ সেবার অংশ হিসেবে কাজ করতে পেরে আনন্দিত তারাও।
সানফ্লাওয়ার টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টারের নির্বাহী পরিচালক মো. মাহমুদুল হাসান জানান, তিনি প্রথমে ২০০১ থেকে ১৬ সাল পর্যন্ত নিজস্ব উদ্যোগে সানফ্লাওয়ার টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টারের মাধ্যমে রাজারহাট উপজেলার বেকার নারী ও পুরুষকে টেইলারিং, ব্লক বাটিক, সতরঞ্জিত, এবং গার্মেন্টস মেশিন অপারেশনসহ বিভিন্ন প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করে তাদের কর্মসংস্থান তৈরিতে কাজ করেছিলেন। পরে ২০১৭ সালে তিনি নাগেশ্বরীসহ আশেপাশের উপজেলার মানুষের ভাগ্যোন্নয়নের লক্ষ্যে সানফ্লাওয়ার টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টারে বাইওয়া সেইপ প্রোজেক্ট এবং বি.জি.এম.ই.এ সেইপ প্রোজেক্ট-এর আওতায় বেকার নারী ও পুরুষের জীবনমান উন্নয়নে প্রশিক্ষন কার্যক্রম চালু করেন। এতে করে এ অঞ্চলের মানুষ নিজে সাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি পরিবারকেও সাবলম্বী করে তুলছে। তবে এই প্রকল্পের মেয়াদ চলতি বছর শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। তাই বেকারত্ম দূর করতে এ অঞ্চলে এমন প্রকল্প পুনরায় চালু হওয়া প্রয়োজন।