জ্বালানি তেলের আমদানি, পরিশোধন ও সরবরাহ ব্যবস্থায় বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ বাড়াতে চায় সরকার। তাই জ্বালানি তেল খাতে বেসরকারি অংশগ্রহণ বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে। এতে এ খাতে যে পরিচালনগত ও আর্থিক চাপ বাড়ছে তা এড়াতে পারবে সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো। এই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে ইতোমধ্যে বেসরকারি পর্যায়ে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানির পর মজুত পরিশোধন পরিবহন ও বিপণন খসড়ার নীতিমালাও প্রস্তুত করা হয়েছে, যা চূড়ান্ত করছে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, জ্বালানি তেল খাতে বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে খসড়া নীতিমালায় নির্দিষ্ট পরিমাণ পরিশোধিত তেল রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) কাছে বিক্রির নিশ্চয়তা দেওয়ার পাশাপাশি জ্বালানি পণ্য রপ্তানিরও সুযোগ রাখা হয়েছে। বর্তমানে শুধু বিপিসি অপরিশোধিত তেল আমদানি করে। সেই তেল ইস্টার্ন রিফাইনারিতে পরিশোধিত হয়ে পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা অয়েলসহ সরকারি বিপণন কোম্পানির মাধ্যমে সারা দেশে সরবরাহ করা হয়। এর বাইরে সরকারি খাতের তিনটি ও বেসরকারি খাতের ১৩টি রিফাইনারি (কনডেনসেট ফ্র্যাকশনেশন প্ল্যান্ট) পেট্রোবাংলার কাছ থেকে কনডেনসেট গ্রহণের পর প্রক্রিয়াজাত করে পেট্রোল, অকটেন, ডিজেল, সলভেন্ট, মোটর স্প্রিট, কেরোসিন সুপিরিয়র অয়েল, মিনারেল তারপেনটাইনসহ বিভিন্ন পেট্রোলিয়াম পণ্য উৎপাদন করে। তাছাড়া বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো শর্তসাপেক্ষে ডিজেল ও ফার্নেস অয়েল আমদানি করতে পারে।
ক্রমবর্ধমান চাহিদার সাথে তাল মেলাতে নতুন একটি রিফাইনারি করার প্রস্তুতিও চলছে। বাড়ানো হয়েছে মজুদ সক্ষমতাও। এমন অবস্থায় বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় তেল আমদানির একটি নীতিমালা করছে। খসড়া নীতিমালায় অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি,পরিশোধন ও বিক্রয়ের সুযোগ দেয়া হয়েছে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের। প্রথম পাঁচ বছরে এই তেলের অর্ধেক কিনে নেবে বিপিসি। এ ছাড়া প্রথম তিন বছর ৪০ শতাংশ এবং পরের দুই বছর ৫০ শতাংশ তেল নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বিক্রি করতে পারবে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো। বেসরকারি উদ্যোক্তারা তাদের উৎপাদিত তেল সরকার নির্ধারিত মূল্যে বিক্রি করতে পেট্রল পাম্পও স্থাপন করতে পারবেন। এরিমধ্যে কয়েকটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ব্যবসার অনুমোদন চেয়েছে জ্বালানি মন্ত্রণালয়ে। সরকার বেসরকারি খাতকে যে সুযোগ দিচ্ছে তাতে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন ও একমাত্র জ্বালানি শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির ওপর চাপ কমবে বহুলাংশে। বাজারে একটা প্রতিযোগিতামূলক সক্ষমতা তৈরি হবে, সর্বোপরি নিশ্চিত হবে নিয়মিত জ্বালানির আমদানি ও সরবরাহ। এর মাধ্যমে বেসরকারি শিল্প উদ্যোক্তারাও তাদের শিল্পকারখানা সর্বদা সচল ও সক্ষম রাখতে পারবেন। ফলে, শিল্প উৎপাদন ব্যাহত হবে না। ইতোমধ্যে কয়েকটি বেসরকারি কোম্পানি প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ ও উন্নয়নসহ লিখিত প্রস্তাব উপস্থাপন করেছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে। বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তাদের যোগ্যতাও নির্ধারণ করা হয়েছে প্রণীত খসড়ায়। নীতিমালার প্রধান উদ্দেশ্য, দেশের ক্রমবর্ধমান জ্বালানি তেলের চাহিদা পূরণের ক্ষেত্রে সরকারি পর্যায়ের ভূমিকার পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোক্তাদের সম্পৃক্ততা ও এ খাতের পরিধি বাড়ানো। পাশাপাশি জ্বালানি খাতে দেশীয় সক্ষমতা বাড়ানো, যুগোপযোগী প্রযুক্তির ব্যবহার ও কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ানো।
দেশে অপরিশোধিত তেল আমদানি, পরিশোধন ও বিক্রিতে অংশগ্রহণের জন্য ইতোমধ্যে পাঁচটি বেসরকারি কোম্পানি বড় ধরনের প্রস্তাব দিয়েছে। এর মধ্যে বসুন্ধরা গ্রুপ, পারটেক্স গ্রুপ এবং পেট্রোম্যাক্স ও অ্যাকোয়া রিফাইনারি রয়েছে। অনানুষ্ঠানিক আলোচনার ভিত্তিতে ইতোমধ্যে বসুন্ধরা গ্রুপ চট্টগ্রামে ভূমি উন্নয়নসহ অবকাঠামোগত উন্নয়ন শুরু করেছে। বর্তমানে দেশে বছরে জ্বালানি তেলের চাহিদা ৭০ থেকে ৭২ লাখ মেট্রিক টন। এর মধ্যে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল পরিশোধন সক্ষমতা ১৫ লাখ টন। ‘সরকার জ্বালানি তেল আমদানি, পরিশোধন ও বাজারজাতের জন্য বেসরকারি খাতকে যে সুযোগ দিচ্ছে, সেই উদ্যোগটি ভালো’। তবে এখানে রিফাইনারি হচ্ছে একটি পার্ট। আরেকটি পার্ট বাজারজাতকরণ। সরকার চাইলে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের পরিশোধন করা তেল কিনে বাজারজাত করতে পারে। দেশে জ্বালানি তেলের ক্রমবর্ধমান চাহিদা, ব্যবহার, স্থানীয় উৎপাদন ও মজুদ সক্ষমতা বিবেচনায় দেশব্যাপী উৎপাদন ও সরবরাহ কার্যক্রমে সরকারি অংশের তুলনায় বেসরকারি পর্যায়ের অংশগ্রহণ সীমিত। তাই সরকারের রূপকল্পণ্ড২০৪১, এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন, জিডিপি প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতা সমুন্নত রাখার লক্ষ্যে জ্বালানি তেলের সরবরাহ ব্যবস্থাপনায় বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ বাড়ানো প্রয়োজন। যেন এ খাতকে স্রফে জনসাধারণের লুণ্ঠনের ক্ষেত্র হিসেবে প্রস্তুত করা সম্ভব হয়।