খুলনার কয়রা-বেতগ্রাম আঞ্চলিক সড়কের পাইকগাছা উপজেলার বাতিখালী এলাকা। ব্যস্ত সড়কে চলাচল করছে মালবাহী গাড়ি। সেসব থামিয়ে আদায় করা হচ্ছে টাকা। কারণ জানতে চাইলে হেনস্তার শিকার হতে হচ্ছে। ভ্যান, ইজিবাইক ও নছিমন চালকদের সঙ্গে টোল আদায়কারীদের বচসা নিত্যদিনের। তৈরি হচ্ছে যানজট। এভাবে চালক ও যাত্রীরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। অথচ পৌরসভায় নির্দিষ্ট কোনো টার্মিনাল না থাকলে সড়কে চলাচলকারী যানবাহন থেকে টোল আদায় করা যাবে না বলে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা রয়েছে। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ থেকে এ-সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে সব সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার মেয়রকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সে নির্দেশনা উপেক্ষা করে টোলের নামে সড়কে গাড়ি থামিয়ে প্রকাশ্যে টাকা আদায় চলছে। পিকআপ থেকে ১০০, বড় ট্রাক ১৫০ এবং অন্য যানবাহন থেকে ১০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। জানা গেছে, পাইকগাছা পৌরসভা থেকে সড়কের বাতিখালী এলাকা আনার আলী নামে শ্রমিক লীগ নেতার কাছে ইজারা দেওয়া হয়েছে। তিনি লোকজন দিয়ে সেখান থেকে টাকা আদায় করেন। পিকআপচালক তুষার মন্ডল জানান, তিনি কয়রা থেকে খুলনায় পণ্য আনা-নেওয়া করেন। বাতিখালি এলাকায় পৌঁছালে গাড়ি থামিয়ে টাকা দাবি করা হয়। ব্যস্ত সড়কে এভাবে টোলের নামে ‘চাঁদা আদায়’র প্রতিবাদ জানান তিনি। সড়কটিতে যাতায়াতকারী ভ্যান ও ইজিবাইকচালকরা জানান, বাতিখালী এলাকা দিয়ে গেলে প্রতিবারই তাদের কাছ থেকে ১০ টাকা করে নেওয়া হয়। না দিতে চাইলে খারাপ ব্যবহার করেন টোল আদায়কারীরা। মাহবুব হোসেন নামে একজন ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, প্রায়ই দেখেন টোল আদায় নিয়ে ঝগড়া-বিবাদ লেগে আছে। এ কারণে যানজট তৈরি হয়। এভাবে টোল আদায়ের নামে মানুষের হয়রানি বন্ধে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু সে নির্দেশনা মানা হচ্ছে না। জানতে চাইলে শ্রমিক লীগ নেতা আনার আলী বলেন, আদালতের নির্দেশনার কথা তারা জানলেও কিছু করার নেই। কারণ প্রতি বছর পৌরসভা থেকে এভাবে স্থানটি ইজারা দেওয়া হচ্ছে। তিনি না নিলেও অন্য কেউ নেবে। পৌরসভা থেকে ইজারা বাতিল করলে টোল আদায় বন্ধ হয়ে যাবে। আগে বার্ষিক ২৬ লাখ টাকার টেন্ডার থাকলেও এবার কাক্সিক্ষত দরদাতা না পাওয়ায় খাস আদায়ে দেওয়া হয়েছে বাতিখালী এলাকা। প্রতি মাসে গড়ে ২ লাখ টাকা জমা হয় বলে জানান পৌরসভার উচ্চমান সহকারী উত্তম মন্ডল। ভ্যানচালক আবদুর রহমান বলছিলেন, মূল সড়ক হওয়ায় দিনে অন্তত ১০ বার যাতায়াত করতে হয় তাঁর। প্রতিবারই টাকা আদায় করে। জবরদস্তি করে টাকা নিচ্ছে। দরকষাকষির সময় মারামারিও হচ্ছে। পৌরসভার নির্দিষ্ট কোনো টার্মিনাল নেই জানিয়ে পাইকগাছা নাগরিক কমিটির সভাপতি মোস্তফা কামাল জাহাঙ্গীর বলেন, টার্মিনালের নামে ইজারা দিয়ে টোল আদায়ের অনুমতি দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। অবৈধ টোল আদায় বন্ধে অনেকবার প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। কিন্তু লাভ হয়নি। ব্যস্ততম সড়কে টোল আদায়ের নামে হয়রানি বন্ধ করতে হবে। এ বিষয়ে পাইকগাছা পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. লালু সরদার বলেন, সড়কের এ স্থান পৌরসভার ভেতরে পড়ায় মেয়রের নির্দেশে ইজারা দেওয়া হয়েছে। এর বেশি কিছু বলতে পারবেন না। মেয়র সেলিম জাহাঙ্গীরের দাবি, কিছু দূরে পৌরসভার ট্রাক টার্মিনাল আছে। এর উন্নয়নের জন্য সড়কের অংশটি ইজারা দেওয়া হয়েছে।