দেশের শস্যভান্ডার খ্যাত নন্দীগ্রাম উপজেলা। এরপাশ দিয়ে বয়ে গেছে ভদ্রাবতী ও নাগর নদী। এ দুই নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় এ অঞ্চলের কৃষকরা এখন আতঙ্কিত। কয়েক দিনের টানা বর্ষণে নদীর পানি বেড়ে আমন ধান ও কাঁচা মরিচসহ নানান জাতের সবজি পানিতে ডুবে গেছে। এতে ভেঙতে বসেছে হাজারো কৃষকের স্বপ্ন।
আজ রোববার সকালে নন্দীগ্রাম উপজেলায় ডুবে যাওয়া জমির ধান ও ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শন করেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. গাজিউল হক।
সরজমিন দেখা গেছে, কয়েকদিনের উপজেলায় মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে। এতে উপজেলার মুরাদপুর, চকরামপুর, গুলিয়া, দমদমা, কৃষ্ঠপুরসহ বিভিন্ন মাঠের ফসল ডুবে গেছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে বুড়ইল ইউনিয়নের মুরাদপুর এলাকায়। পানি যদি দু’একদিনে কমে না যায় তাহলে অধিকাংশ ধান পচে যাবে। নতুন করে চারা রোপণ করার সময়ও এখন নেই। কৃষি বিভাগ সূত্র মোতাবেক এই উপজেলায় এ বছর রোপা আমনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৯ হাজার ৪২০ হেক্টর ও কাঁচা মরিচসহ সবজির লক্ষ্যমাত্রা ৫০০ হেক্টর। এ উপজেলায় বৃষ্টিতে ধান ডুবে ৭০ হেক্টর ও সবজি ১০ হেক্টর ক্ষতি হয়েছে। তবে কৃষকরা দাবি করছেন ক্ষতির পরিমাণ আরো বেশি হবে।
চাষিরা জানান, বিভিন্ন এনজিও ও অন্যান্য সংস্থার ঋণের টাকায় আমনের ধান রোপণ করা হয়েছিল। ইতোমধ্যে ধান গাছে ফুল (গামড়) হয়েছে। এমাসের শেষের দিকে আমন ধান কেটে ঘরে তুলতে পারতো-এমন স্বপ্ন দেখছিলেন কৃষকরা। কিন্তু হঠাৎ ভারী বৃষ্টিতে এখন সেই ধান পানির নিচে। সেগুলো ধান গাছের গোড়া পচে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ডুবে গেছে অসংখ্য পুকুর, ধসে পড়ছে মাটির বাড়ি। এমন পরিস্থিতিতে কৃষকরা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত।
উপজেলার চকরামপুর গ্রামের কৃষক ফারুক হোসেন বলেন, তার ৯ বিঘা আমন ধান ও দুই বিঘা মরিচ গাছ পানির নিচে। তার মাঠে ১২০ বিঘা জমির ধান ও মরিচ গাছ পানিতে ডুবে রয়েছে বলে দাবি করেন। এই উপজেলায় অধিকাংশ কৃষক বিভিন্ন এনজিও ও অন্যান্য সংস্থার ঋণ নিয়ে চাষাবাদ করেন। হঠাৎ ঢলের পানিতে ফসল ডুবে যাওয়ায় আমরা নিঃস্ব হয়ে পড়েছি। কৃষি অফিসে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সহযোগিতার দাবি জানান তিনি।
একই এলাকার কৃষক মজনু মিয়ার এক বিঘা মরিচ, মনির উদ্দিনের ৮ বিঘা ও আবদুল হাকিমের ৫ বিঘা জমির আমন ধান পানিতে ডুবে গেছে। তারা বলেন, ‘চার দিন যাবৎ আমনের ধান পানির নিচে রইছে। আইজ সারা দিন খেতে পানির সাথে আসা কচুরিপানাগুলা সরাইলাম। পানি না নামলে তো বিপদে পড়মু।’ পানি কমলে বোঝা যাবে ফসলের কী পরিমাণ ক্ষতি হইছে। তাদের মতো অনেক কৃষকের ধান ও সবজি পানিতে ডুবে রয়েছে।
জানতে চাইলে নন্দীগ্রাম উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. গাজিউল হক বলেন, টানা বর্ষণে এই উপজেলায় কিছু জমিতে পানি উঠেছে। প্রাথমিক তথ্যে পানিতে ডুবে ধান ৭০ হেক্টর ও সবজি ১০ হেক্টর ক্ষতি হয়েছে। আশা করছি পানি দ্রুত নেমে গেলে ধানের কোনো ক্ষতি হবে না।