ঘাতক মাদকের বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রচারনা চালানো হলেও এখনো মাদক থেকে মুক্ত হতে পারে নি বাংলাদেশ। মাদকের ব্যাপারে সরকার জিরো টলারেন্স ঘোষণা করলেও ক্রমেই মাদক সহজলভ্য হয়ে উঠেছে। দেশের সীমান্তবর্তী বিভিন্ন অঞ্চল দিয়ে মাদক আসার ১৪৬ টি অরক্ষিত পয়েন্ট চিহ্নিত করেছে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি)। এর মধ্যে মিয়ানমার থেকে স্থল ও নৌপথে ৬৬ টি পয়েন্ট দিয়ে আসছে ভয়ঙ্কর মাদক আইস ও ইয়াবা। অন্য পয়েন্টগুলো দিয়ে ভারত থেকে হেরোইন, ফেনসিডিলসহ বিভিন্ন ধরনের প্রচলিত অপ্রচলিত মাদক আসছে। এই পয়েন্টগুলো দেশের ১৯ টি সীমান্তবর্তী জেলার মধ্যে পড়েছে। মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর বলছে, পয়েন্টগুলো অরক্ষিত থাকায় সহজেই দেশে মাদক আসছে। মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর গত বছরের জুন মাসে সীমান্তে ৯৫ টি অরক্ষিত পয়েন্ট দিয়ে দেশে মাদক আসার তথ্য দিয়েছিল, যা বেড়ে এবার হয়েছে ১৪৬ টি। সূত্র বলছে, সবচেয়ে বেশি ৬৬ টি পয়েন্ট চিহ্নিত করা হয়েছে দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে। এ পয়েন্টগুলো ক´বাজার ও বান্দরবন জেলায় চিহ্নিত করা হয়েছে। এ দু’ জেলায় যেসব পয়েন্ট অরক্ষিত সেগুলো খুবই দুর্গম। এ দু’ জেলায় এমন অনেক পয়েন্ট রয়েছে, যেখানে সাধারণ মানুষ তো দুরের কথা আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও যান নি। এ পয়েন্টগুলো দিয়ে আগে আসতো ইয়াবা। এখন ইয়াবার সাথে আইসও আসে। নাফ নদী সাগর পথে মাছ ধরার ট্রলারে করেও বিভিন্ন রুটে বিভিন্ন ইয়াবা ও আইস আসছে। চলতি বছরের প্রথম ৪ মাসে দেশে ৬৬ কেজি আইন বা ক্রিষ্টাল ম্যাথ উদ্ধার হয়েছে। ২০১৯ সালের শুরুর দিকেও দেশে অপ্রচলিত মাদক ছিল আইস। তবে এখন খুব প্রচলিত মাদক এটি। শুরুতে পরীক্ষামূলক ভাবে ইয়াবার চালানে অল্প পরিমাণে আইস আসতো। এখন আইস আনতে বিপুল টাকা খরচ করছে ইয়াবা কারবারিরা। কারণ, ইয়াবার চেয়ে এই মাদক বিক্রি করলে লাভ বেশি হয়। তবে ইয়াবা আসাও বন্ধ হয় নি। ২০২২ সালে ইয়াবা উদ্ধার হয়েছে ৪ কোটি ৫৮ লাখ ৬৮ হাজার ৫৬৯। এর আগের বছর ২০২১ সালে ইয়াবা উদ্ধারে পরিমাণ ছিল ৫ কোটি ৩০ লাখ ৭৩ হাজার ৬৬৫ টি। মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর বলছে, দেশের পশ্চিমাঞ্চলের নত্তগাঁ জেলার সীমান্তবর্তী সাতটি নতুন রুট দিয়ে ফেনসিডিল আসছে সাতক্ষীরার সাতটি পয়েন্ট দিয়ে আসছে ফেনসিডিল ও ইয়াবা। রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, জয়পুরহাট ও দিনাজপুরের ২৪ টি পয়েন্ট দিয়ে ফেনসিডিলের পাশাপাশি হেরোইন আসছে। এ ছাড়া যশোর, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরের ১৩ টি পয়েন্টে দিয়ে দেশে ঢুকছে ফেনসিডিল। উত্তরাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চল ৮ টি জেলার ২৯ টি পয়েন্ট দিয়ে ফেনসিডিল ও গাঁজা আসছে। এর সাথে পূর্বাঞ্চলের কুমিল্লার ন’টি পয়েন্ট এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছ’টি পয়েন্ট চিহ্নিত করা হয়েছে। এমন পরিস্থিতির মধ্যে ২৬ জুন পালিত হয়েছে আন্তর্জাতিক মাদক বিরোধী দিবস। ‘মানুষই মুখ্য : মাদককে না বলুন, শক্তিশালী প্রতিরোধ গড়ে তুলন।’ দিবসের প্রতিবাদ্য বিষয় খুবই চমৎকার। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে সীমান্তবর্তী অঞ্চল দিয়ে মাদক আসছে স্থল পথে। সীমান্ত রক্ষীবাহিনী বিজিবি আর নৌপথে কোষ্টগার্ড। তারা তাদের দায়িত্বের প্রতি আন্তরিক হলে কোনো ভাবেই মাদক দেশে আসতে পারে না। তাই সরকার শুধু জিরো টলারেন্স ঘোষণা দিয়েই মাদক নির্মূল করতে পারবে না। এজন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে সচেতন করতে হবে। দিবসের শুধু আনুষ্ঠানিকতা নয় চাই মাদক নিয়ন্ত্রণে যথাযথ উদ্যোগ।