গত সপ্তাহের বৃষ্টির অজুহাতে রাজধানীর বাজারগুলোতে এ সপ্তাহেও সবজির দাম চড়া। বরং এ সপ্তাহে দাম আরও বেড়েছে। বেড়েছে ডিম ও মুরগির দামও। আজ শুক্রবার সকালে রাজধানীর মেরাদিয়া হাট, গোড়ান বাজার ও খিলগাঁও রেলগেট বাজার ঘুরে এবং বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সব ধরনের বেগুনের দামই বেড়েছে। এর মধ্যে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়ে লম্বা বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১০০ টাকায়, আর গোল বেগুন ১১০ থেকে ১২০ টাকায় আর করলা বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকায়। বাজারে ৮০ টাকার কমে সবজি নেই বললেই চলে। চিচিঙ্গা, শসা, ঢেঁড়স, কচুর লতি বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকা কেজি দরে, যা কয়েকদিন আগেও ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছিল। পেঁপে ৪০ টাকা, পটল ৬০ টাকা, কাঁকরোল ১০০ টাকা, গাজর ১২০ টাকা, মুলা ৮০ টাকা, টমেটো ১০০ থেকে ১১০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। বরবটি ও কচুরমুখীর কেজি ১০০ টাকা, শিম ১৬০ টাকা। কাঁচা মরিচ ২৪০ টাকা, ধনেপাতা ২০০ কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতিটি লাউ ৮০ টাকা ও চাল কুমড়া ৬০ থেকে ৭০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ছিল ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। গত সপ্তাহে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয় ৯০ টাকায়। গত সপ্তাহের তুলনায় পেঁয়াজের দাম ৫ টাকা বেড়ে বিক্রি বর্তমানে হচ্ছে ৯৫ টাকায়। মেরাদিয়া হাটে ফয়সাল নামের এক সবজি বিক্রেতা বলেন, পাইকারি বাজারগুলোতে সবজির সরবরাহ কম থাকায় দাম অনেকটাই বেড়েছে। মূলত আগের সপ্তাহে টানা বৃষ্টির কারণে সবজির ফলন কমে গেছে। ফলে এই সপ্তাহ বাজারে যেসব সবজি ঢুকছে, তার বেশিরভাগই পচা এবং নষ্ট পড়ছে। এ কারণে সবজির দাম কিছুটা বেড়েছে। ক্রেতারা বলছেন, বৃষ্টির অজুহাতে সবজির দাম বাড়ানো হচ্ছে। দাম কমাতে সরকারের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। এদিকে দুই দিনের ব্যবধানে ডিমের দামও বেড়েছে প্রতি ডজনে ১০ টাকার মতো। গেল সপ্তাহে প্রতি ডজন লাল ডিম ছিল ১৫৫ টাকা। শুক্রবার প্রতি ডজন লাল ডিম ১৬০-১৬৫ টাকা, সাদা ডিম ডজন প্রতি ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজারে ডিমের সঙ্গে মুরগির দামও বেড়েছে। বাজারে ব্রয়লার মুরগি ২১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৯০ থেকে ২০০ টাকা। এ সপ্তাহে কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়ে কক এবং সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩১০ থেকে ৩৩০ টাকা দরে। গত সপ্তাহে কক ২৯০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল। দেশি মুরগি ৫৫০ টাকা কেজি আর গরুর মাংস ৭৮০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খিলগাঁও রেলগেট বাজারে বাজার করতে আসা আলাউদ্দিন নামে এক শিক্ষক বলেন, সরকারের উচিত সবজির ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া। ডিমের দামও নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্যও সরকারের পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। এদিকে রাজধানীর আনন্দবাজার, কেল্লার মোড় বাজার, আজিমপুর ও নিউ মার্কেট কাঁচা বাজার ঘুরে সবজি এবং মাছ-মাংসের দোকানেও বাড়তি দাম চাইতে দেখা গেছে। তবে গত সপ্তাহের তুলনায় বাজারে মুদি মালামালের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। আজিমপুর কাঁচাবাজারে দেখা গেছে, ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে প্রতিকেজি ২২০ টাকা করে। নিউমার্কেট এবং পলাশী বাজারেও একই দাম। তবে আনন্দবাজার এবং কেল্লার মোড় বাজারে ১০ টাকা কমে ২১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া সোনালি ও দেশি মুরগি গত সপ্তাহের মতোই ৩০০ ও ৫৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, পাইকারি বাজারে দাম বাড়ায় বেড়েছে ব্রয়লার মুরগির দাম। তবে শিগগিরই দাম কমার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান তারা। আনন্দবাজারের মুরগি ব্যবসায়ী শাহরিয়ার আলম জানান, গতকাল থেকেই পাইকারি বাজারে ব্রয়লার মুরগির দাম ১৯০ টাকা হয়ে গেছে। এর আগ পর্যন্ত ১৭৫ থেকে ১৮০ টাকা ছিল। এ কারণে খুচরা ব্যবসায়ীদের বেশি দামে মুরগি বিক্রি করতে হচ্ছে। ব্রয়লার মুরগির দাম বাড়ায় বাজারগুলোতে ক্রেতারা হতাশা প্রকাশ করেছেন। আজিমপুর ছাপড়া বাজারে বাকী বিল্লাহ নামে এক ক্রেতা জানালেন প্রতি সপ্তাহেই বিভিন্ন উসিলায় বিক্রেতারা দাম বাড়িয়ে থাকেন। তিনি বলেন, গত সপ্তাহে এবং এর আগের সপ্তাহে ব্রয়লারের দাম বেড়েছে। একবার দাম বাড়ার পর আর কোনভাবেই তা কমছে না। শুক্রবারে সবজি ও মাছের বাজারেও চড়া দাম দেখা গেছে। সবজির বাজারে দেখা গেছে- কাঁচা পেঁপে ছাড়া কোনো সবজিই ৫০ টাকার নিচে বিক্রি হচ্ছে না। গোল বেগুন, কাঁকরোল, টমেটো, কচুরমুখি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১০০ টাকায়। দেশি শসা, করলা, মুলা বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। পটল, চিচিঙ্গা ও ধুন্দল বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। এ ছাড়া গাজর ১২০ টাকা, শিম ১৫০ টাকা, কাঁচামরিচ ২৪০ টাকা, ধনেপাতা ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। মাছের বাজারে ইলিশ আকারভেদে ১০০০ থেকে ১৬০০ টাকা, রুই ও কাতল আকারভেদে ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা। চাষের কই ৩০০ টাকায় বিক্রি হলেও দেশি কই বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৮০০ টাকায়। এ ছাড়া পাবদা ৪০০, তেলাপিয়া ২৫০ এবং পাঙ্গাশ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ২০০ টাকায়। তবে অন্যান্য দিনের মতোই চাষের মাছের চেয়ে নদীর মাছের দাম ছিল তুলনামূলকভাবে বেশি। গত তিন সপ্তাহ ধরে বাড়তে থাকা আলু ও পেঁয়াজ এদিন বিক্রি হচ্ছে গত সপ্তাহের দামেই। দেশি পেঁয়াজ ১০০ টাকা, ভারতীয় ক্রস পেঁয়াজ ৯০ টাকা এবং আলু ৪৫ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া অন্যান্য মুদি মালামালও গত সপ্তাহের দামে বিক্রি হতে দেখা গেছে। এদিকে ব্রয়লার মুরগিসহ বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর জানিয়েছে বাজার তাদের নিয়ন্ত্রণে আছে। সংস্থাটির ঢাকা অফিসের প্রধান আবদুল জব্বার মন্ডলবলেন, ব্রয়লার মুরগিসহ অন্যান্য পণ্য সরকার নির্ধারিত দামেই বিক্রি হচ্ছে। বাজার মনিটরিং করার জন্য আমাদের টিম রয়েছে যারা প্রতিদিনই অভিযান পরিচালনা করছে। কয়েকটি জায়গায় অসাধু ব্যবসায়ীরা বেশি দামে বিক্রি করলেও তাদেরকে আমরা জরিমানার আওতায় আনছি।