কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জের অন্তত পনের মামলার আসামি ভয়ংকর সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ী শরীফ মিয়াকে এবার ৫ বছরের সাজাপ্রাপ্ত মামলায় জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১৭ অক্টোবর) কিশোরগঞ্জ দায়রা জজ আদালতের বিজ্ঞ বিচারক সাজাপ্রাপ্ত এ আসামীকে কিশোরগঞ্জ মডেল থানায় ২০১৭ সালে পুলিশের দায়েরকৃত একটি মাদক মামলা নং-৪৮(১০)১৭ ইং ও দায়রা মামলা নং ২১৮/২০১৮ এ কিশোরগঞ্জ জেলা কারাগারে প্রেরণ করেছে বলে আদালত সুত্রে জানা গেছে। এর আগে গত সোমবার কিশোরগঞ্জ ৬নং জুডিসিয়াল আদালতের বিজ্ঞ বিচারক মাদক ব্যবসায়ী শরিফ মিয়া (করিমগঞ্জ থানার মামলা নং-১০/১৯৪ তাং ১২/৯/২৩ ইং) মূলে এক মাস হাজতবাস থাকার পরে জামিন মঞ্জুর করে বলে জানা গেছে।
কিশোরগঞ্জ ও করিমগঞ্জ থানার বিভিন্ন মামলার সুত্রে জানা গেছে, জেলার করিমগঞ্জ উপজেলার জাফরাবাদ ইউনিয়নের মাঝিরকোনা গ্রামের নূর ইসলামের ছেলে মাদক ব্যবসায়ী শরীফ মিয়া একই এলাকার মৃত আঃ খালেকের ছেলে আ.আওয়ালের পরিত্যক্ত জামতলা বাজারের ঘরে দলবল নিয়ে গাঁজা সেবন করছিলো। খবর পেয়ে ব্যবসায়ী আ.আউয়াল গাঁজা সেবনের প্রতিবাদ করলে শরীফ তার প্রতি ক্ষিপ্ত হয়। পরে আওয়াল জামতলা বাজারের আলতু মিয়ার চায়ের স্টলে বসে চা পান করছিলেন। এমন সময় নূর ইসলামের নির্দেশে শরীফ মিয়া লোহার রড দিয়ে আওয়ালকে মেরে ফেলার উদ্দেশ্যে মাথা লক্ষ্য করে বাড়ি দিলে নাকে লেগে হার ভেঙ্গে গুরুতর জখম হয়ে মাটিতে পরে যায় আওয়াল। এসুযোগে জীবন মিয়ার হাতে থাকা ধারালো খুর দিয়ে আওয়ালের চোখের নীচে হাড়কাটা রক্তাক্ত জখম করে। এ সময় তাঁর সাথে থাকা নগদ ৩০ হাজার টাকা ও সেম্পুনি কোম্পানীর একটি মোবাইল যার আনুমানিক মূল্য পনের শত টাকা নিয়ে যায়। স্থানীয় লোকজন আওয়ালের ডাক চিৎকারে এগিয়ে এসে তাকে উদ্ধার করে জেলা ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানে ১ সেপ্টেম্বর থেকে ৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চিকিৎসাধীন থেকে কিছুটা সুস্থ হয়ে করিমগঞ্জ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। করিমগঞ্জ থানার পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে গত ১২ সেপ্টেম্বর মামলাটি ৩২৩/৩২৫/৩২৬/৩০৭/৩৭৯/৫০৬/১১৪ ধারায় এফআইআর করে (মামলা নং-১০/১৯৪ তাং ১২/৯/২৩ ইং)। এ মামলায় ১৩ সেপ্টেম্বর কিশোরগঞ্জ জুডিসিয়াল আদালতে মাদক ব্যবসায়ী শরিফ মিয়া ও তাঁর পিতা নূর ইসলাম এ মামলায় হাজিরা দিলে আদালতের বিজ্ঞ বিচারক নূর ইসলামের জামিন না মঞ্জুর করে শরীফ মিয়াকে জেল হাজতে প্রেরণ করার নির্দেশ দেন। সে মামলায় সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ী শরীফ এক মাস হাজতবাস ছিলেন।
মাদক ব্যবসায়ী শরীফ মিয়ার বিরুদ্ধে কিশোরগঞ্জ মডেল থানা, করিমগঞ্জ থানাসহ আদালতে ১০/১৫টি মামলা রয়েছে বলে জানা গেছে। এরমধ্যে করিমগঞ্জ থানায় ২০২২ সালের ২১ মে মাদক ব্যবসায়ী শরীফ মিয়ার নামে তার চাচা মো: ইব্রাহীম বাদী হয়ে ১৪৩/৩২৩/৩২৪/৩২৫/৩০৭/৫০৬/১১৪/৩৪ ধারায় একটি মামলা (নং-১৬/১০৮ তাং ২১/৫/২২ইং) দায়ের করে। মাদক ব্যবসায়ী শরীফ মিযার অপর চাচা জহিরুল ইসলামকে সম্পত্তির ভাগ না দিয়ে বরং উল্টো বাড়ি ছাড়া করেছে। দীর্ঘ বছর যাবত তিনি নিজ বাড়িতে আসতে পারেননি। শরীফ জেল হাজতে রয়েছে শুনে তিনি মাঝিরকোনা গ্রামের নিজ বসত ভিটায় গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। এ সময় তিনি অভিযোগ করে বলেন,আমার ভিটেবাড়িতে থাকার মতো পরিবেশ না থাকায় নিজ বাড়িতে থাকতে না পেরে আপন ভাই ইব্রাহীমের ঘরে আশ্রয় নেওয়ায় তার প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে এবং ভাইকে খুন করে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছিলো শরীফ। আমি আমার ভিটে ঘর তৈরির প্রস্ততিকালে ঘর ভেঙ্গে দিয়ে আমাকে প্রাণে মেরে ফেলার ষড়যন্ত্র করে। বর্তমানে আমি পিতৃভিটেহারা হয়ে মানুষের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছি। এলাকায় দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কোনো সুবিচার পায়নি। শরীফ মিয়া জেল হাজতে রয়েছে তাই ভিটে বাড়িটা এক নজর দেখতে আসি। জমিজমা সংক্রন্ত বিষয়ে আমার ভাই নূর ইসলাম ও তাঁর সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ী ছেলে শরিফ মিয়াকে আসামি করে আদালতে ও থানায় অনেক মামলা রয়েছে। আমি নিজেও বাদী হয়ে বিজ্ঞ করিমগঞ্জ সিনিয়র সহকারী জজ আদালতের মোকদ্দমা নং ০৯/২২ ও মূল মোকদ্দমা নং২৪/২০১৯ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। আমি শরীফের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি ও সুবিচার চাই।
এইতো গেলো আপন চাচাদের প্রতি পাষন্ড শরিফের লোম হর্ষক নির্যাতনের ঘটনা। আপন চাচাদের সাথে এমন নির্যাতন চালিয়ে থেমে থাকেনি শরীফ। যারাই শরীফের অন্যায় কাজের প্রতিবাদ করে তাদেরকেও বিভিন্ন মামলা মোকদ্দমায় জড়িয়ে ফেলে শরীফ। মাঝিরকোনা গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা আ.সালাম বলেন, ভয়ংকর শরিফ মিয়ার অপরাধমুলক কর্মকা- করেও দাপিয়ে বেড়ানোই তার পেশায় পরিণত হয়েছিলো। আমরা এসব অপরাধ কর্মকান্ডের প্রতিবাদ করলে মাদক মামলায় ফেঁসে দিবে বলে হুমকি দেয় স্বয়ং আমাকে। এ বিষয়ে ২০২২ সালের ৩০ জুন করিমগঞ্জ থানায় আমি একটি সাধারণ ডায়েরীও করেছি যার নং-১৩৩৫।
সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ী শরীফ মিয়ার চাচা মো: ইব্রাহীম বলেন, শরীফ মিয়া আমার ভাতিজা বলে পরিচয় দিতেও এখন লজ্জা লাগে। সে ও তার পিতা ভাবী খুবই খারাপ দাঙ্গবাজ ও সন্ত্রাসী প্রকৃতির লোক। তাদের বিরুদ্ধে আমার মামলা বিচারাধীন রয়েছে। আমাদের পরিবারের উপর তাদের নানা নির্যাতনে অতীষ্ট হয়ে মামলা দায়ের করলে নানাভাবে হুমকি দমকি দিয়ে আসছিলো। তাদের নিপীড়নে বাড়িতে থাকা যায় না।
কিশোরগঞ্জের ভয়ানক সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ী শরফি মিয়ার বিরুদ্ধে কিশোরগঞ্জ মডেল থানায় ২০১৭ সালের দায়েরকৃত একটি মাদক মামলা নং-৪৮(১০)১৭ ইং। এ মামলায় গত ৬/৮/১৯ তারিখে জেলা দায়রা জজ মো: সায়েদুর রহমান খান ৫ বছরের সশ্রম কারাদন্ড, ৫ হাজার টাকা অর্থদন্ড ও অনাদায়ে আরও ৩ মাসের বিনাশ্রম কারাদ-ে দন্ডিত করে। এ মামলার শরীফ দীর্ঘ ৫ বছর পলাতক ছিলেন। জানা গেছে আসামি শরীফ (করিমগঞ্জ থানার মামলা নং-১০/১৯৪ তাং ১২/৯/২৩ ইং) মূলে হাজতবাস রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট পুলিশ শ্যোন এরেস্ট করতে আদালতের মাধ্যমে গ্রেপ্তারী পরোয়ানার কপি সোমবার ১৬ অক্টোর জেলা কারাগারে প্রেরণ করা হলে মঙ্গলবার জেলা দায়রা জজ আদালতে হাজির করা হলে বিজ্ঞ আদালত তাকে সাজামূলে জেলা কারাগারে প্রেরণ করে। এ বিষয়ে কিশোরগঞ্জ জেলা কারাগারের জেলার মো: আসাদুর রহমান এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি আসামি শরীফ জেলা কারাগারে রয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন।
করিমগঞ্জ থানাসহ বিভিন্ন থানায় ও আদালতে মাদক ব্যবসায়ী শরীফ মিয়ার নামে আরও অনেক মামলা ও সাধারণ ডায়েরী রয়েছে বলে জানা গেছে। এলাকার সাধারণ মানুষ শরীফ মিয়ার অপরাধমুলক কর্মকা-ে অতীষ্ট ছিলেন। দীর্ঘ এক মাস জেল হাজত বাসের পর ৫ বছরের সাজামূলে কারাগারে প্রেরণ করার খবরে জনমনে সন্তোষ বিরাজ করছে।