বাগেরহাটের মোল্লাহাটে কুলসুম (১৯) নামে এক অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধুর রহস্যজনক মৃত্যুর অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলার মোল্লারকুল গ্রামে গত ১৭ অক্টোবর মঙ্গলবার দুপুরে শশুর ও বিকেলে স্বামী সহ শশুর বাড়ির লোকদের যৌথ শারীরিক নির্যাতনে এ ঘটনা ঘটে। এঘটনার পর থেকে শশুর বাড়ির সকলে পালিয়ে/আত্মগোপনে থেকে অর্থের বিনিময়ে হত্যার ঘটনা ধামাচাপা/ মিমাংসার চেষ্টা চালাচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধুর পিতা একাধিকবার থানায় গেলেও পুলিশ তার মামলা/অভিযোগ গ্রহণ না করে ফিরিয়ে দিয়েছে বলে জানিয়েছেন শোকাতুর পিতা।
সুত্রে প্রকাশ, প্রায় আড়াই বছর পূর্বে উপজেলার সরসপুর গ্রামের মোঃ আলমগীর শেখের মেয়ে কুলসুমের বিয়ে হয় মোল্লারকুল গ্রামের ফিরোজ কাজীর ছেলে সজিব কাজীর সাথে। বিয়ের পর থেকেই কুলসুমকে শারীরিক নির্যাতন করে চলেছে তার স্বামী সহ শশুর বাড়ির লোকেরা। ঘটনার দিন গত মঙ্গলবার সকালে স্বামী সজিব বাড়ির বাহিরে যাওয়ার সময় অন্তঃসত্ত্বা কুলসুমকে বলে গাছ থেকে সুপারী পাড়িয়ে ঘরে রাখতে। যথারীতি দেবর সাজ্জাদ (শিশু)'কে দিয়ে সুপারী পেড়ে ঘরে রাখে। দুপুরে শশুর ফিরোজ কাজী ওই সুপারী নিয়ে যায়। তখন শশুরকে জানায় যে, সুপারী দিতে সজিব নিষেধ করেছে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ফিরোজ কাজী পুত্রবধুকে মারপিট করে। এরপর বিকেলে সজিব বাড়ি ফিরে সুপারী চাইলে তার বাবা নিয়েছেন বলে জানায়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে সজিবও মারধর শুরু করে। তখন শশুর ও স্বামীর অন্যায় অত্যাচারের প্রতিবাদে কথা বলায় শশুর বাড়ির সকলে মিলে আবারো শারীরিক নির্যাতন চালায়। এরপর নির্যাতনকারীরা কুলসুমকে নিয়ে হাসপাতালে যায় এবং লোকজনের কাছে বলে সে বিষ/কুরাটার খেয়েছে। তথ্য সূত্র আরো জানায়, নির্যাতনে মৃত্যুর পর বিষের দোহাই দেয়া হতে পারে অথবা বারংবার সীমাহীন নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে বিষ /কুরাটার খেতে পারেন। যেভাবেই দেখা হোক, এটা জঘন্যতম হত্যাকা-। এর দৃষ্টান্তমূলক বিচার হওয়া দরকার। অন্যথায় অপরাধ প্রবণতা বেড়ে যাবে।
কুলসুমের বড় বোন হালিমা আক্তার জানান, তার এবং কুলসুমের শশুর বাড়ি কাছাকাছি হওয়ায় খবর শুনেই সে দ্রুত গোপালগঞ্জ হাসপাতালে গিয়ে দেখেন, মেঝেতে তার বোন কুলসুমের মৃত দেহ পড়ে আছে। তার স্বামী বা শশুর বাড়ির সকলে লাশ ফেলে রেখে পালিয়ে গেছে। পরবর্তীতে খোঁজ নিয়ে জেনেছেন, ওই দিন সকালে কুলসুমের স্বামী সজিব কাজী তাকে বলেছে গাছ থেকে সুপারী পাড়িয়ে রাখতে। সেমোতাবেক সুপারী পাড়িয়ে রাখার পর দুপুরে তার শশুর ফিরোজ কাজী সুপারী নিয়ে যায়। ওই সুপারী নিতে সজিবের নিষেধ আছে বলে জানালে শশুর তাকে মারপিট করে। এরপর বিকেলে সজিব বাড়ি ফিরে সুপারী চাইলে শশুর নিয়ে গেছে বলে জানায়। কেন সুপারী নিতে পারলো ? এমন কথা বলে নিরাপরাধী কুলসুমকে মারপিট শুরু করে সজিব। তখন তার স্বামী ও শ্বশুর দুই জনের অন্যায় নির্যাতনের বিরুদ্ধে কথা বলায় ওই বাড়ির সকলে একযোগে শারীরিক নির্যাতন চালায়। এরপর স্বামী সজিব, শশুর ফিরোজ ও শাশুড়ি স্বপ্না বেগম কুলসুমের মুখে বিষ ঢেলে (কুরাটার) খেয়েছে বলে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। এরপর হাসপাতাল থেকে কর্তব্যরত চিকিৎসক কুলসুমকে মৃত ঘোষণা করা মাত্রই তারা পালিয়ে যায়।
কুলসুমের পিতা মোঃ আলমগীর শেখ জানান, তার মেয়েকে মেরে (হত্যা) হাসপাতালে ফেলে পালিয়ে গেছে, এমনকি তারা কেউ জানাজায় আসে নাই। তিনি একাধিকবার থানায় গেলেও পুলিশ তার অভিযোগ না নিয়ে ফিরিয়ে দিয়েছে। তবে, ওসি'র সাথে দেখা হয়নি বলেও জানান তিনি। আলমগীর শেখ আরো বলেন, তিনি এ হত্যাকা-ের বিচার পেতে প্রয়োজনে উচ্চ আদালতের সরণাপন্ন হবেন। যে কোন মূল্যে এর বিচার হতে হবে বলেও উল্লেখ করেন শোকাতুর এই পিতা।
স্থানীয় কাছেদ আলী মীর বলেন, গোপন নয়, যা দেখছি তাই প্রকাশ্য কবো, ওরা সবাই মিলে মারছে। তখন চিৎকার শুনে আমি আইছিলাম, নিজে দেখছি, ওগে আপন যারা তারাও আইছিলো, এন্যে বাঁচানোর জন্যি তারা সত্যি কথা নাও কথি পারে। আমি সব যায়গায় সত্যি কথা কবো।
থানা অফিসার ইনচার্জ সোমেন দাশ জানান, এখন পর্যন্ত এ ঘটনায় কেউ থানায় আসে নাই। যেহেতু পোস্টমর্টেম হয়েছে, সেহেতু রিপোর্ট আসলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান তিনি।