আগামী ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে ঢাকার কোনো রাস্তা বন্ধ করা হবে না বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। আজ বুধবার দুপুরে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আসন্ন বিজয় দিবস উপলক্ষে অনুষ্ঠিত আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা জানান। মন্ত্রী বলেন, আমরা ঢাকার রাস্তাঘাট কেন বন্ধ করব? ঢাকায় মানুষ চাকরি-বাকরি এবং ব্যবসার কাজে আসে। আমরা ঢাকার কোনো রাস্তা বন্ধ করব না। বিএনপি যদি শান্তিপূর্ণভাবে নির্দিষ্ট স্থানে অবস্থান করে চলে যায়, তাহলে আমাদের কিছুই বলার নেই। আমরা কোনো বাধা দেব না। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমাদের দেশে অনেক দল ও মত রয়েছে। জামায়াতে ইসলামি এর আগেও কয়েক জায়গায় আলোচনা করেছে। আমাদের দেশের নিয়ম-কানুন মেনে, দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্দেশনা মেনে, যে কেউ যেকোনো কথা বলতে পারেন। এটা গণতান্ত্রিক দেশ, এখানে গণতান্ত্রিক চর্চা রয়েছে। দেশের আইন কানুনের মধ্যে থেকে তাদের এসব করতে হবে। আরেক প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী বলেন, আমরা কাউকে এখনও পারমিশন দিইনি। বিএনপি বিভিন্ন মাধ্যমে জানান দিচ্ছে, সারা বাংলাদেশ থেকে নেতা-কর্মীদের ঢাকা নিয়ে আসবে, এরকমই আমরা শুনতে পাঁচ্ছি। এত লোক ঢাকায় এলে ভিন্ন ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। সেজন্য কোথায় তাদের সমাবেশ করতে দেওয়া হবে, তা ডিএমপি কমিশনার বুঝবেন এবং সেভাবেই সিদ্ধান্ত নেবেন। জামায়াত প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, জামায়াতে ইসলামি এখন পর্যন্ত কোনো নিবন্ধিত দল নয়। কাজেই তারা যদি জামায়াতে ইসলামের ব্যানারে আসে, তাহলে তাদের পারমিশন দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। আমাদের কমিশনার এখন পর্যন্ত কাউকে সমাবেশ করার অনুমতি দেননি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, আনসার বাহিনীকে গ্রেপ্তারের ক্ষমতা কখনোই দেওয়া হয়নি, হবেও না। আনসার বাহিনীকে গ্রেপ্তারের ক্ষমতা প্রসঙ্গে আইনের বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী বলেন, আপনারা একটি ভুল ধারণা থেকে এই ধরনের প্রশ্ন করছেন। আনসার বাহিনীকে গ্রেপ্তারের অনুমতি কখনোই দেওয়া হয়নি। আজও দেওয়া হবে না, কোনো আইন দ্বারা দেওয়ার ক্ষমতাও আমাদের নেই। আমাদের ফৌজদারি আইনের কার্যবিধি রয়েছে, তার ভেতরে থেকেই সমস্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাজ করতে হবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আইনটি বর্তমানে স্থায়ী কমিটিতে রয়েছে। স্থায়ী কমিটির সদস্যরা এটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবেন। এখানে কোনো শব্দ যদি প্রশ্নের অবতারণা করে, তাহলে সেগুলো তারা সংশোধন করবেন। এখানে প্রচলিত আইনের বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। যেকোনো বাহিনীরই আমাদের প্রচলিত ফৌজদারি যে আইন রয়েছে সেটি মেনেই কাজ করতে হবে। তিনি আরো বলেন, আরেকটি কথাই স্পষ্ট করে বলে দিচ্ছি, এখানে ভুল বোঝাবুঝির কোনো অবকাশ নেই। শুনতে পাঁচ্ছি, বিভিন্ন পত্রপত্রিকা এবং মিডিয়াতে সংবাদ হচ্ছে, আনসার পুলিশের ক্ষমতা নিয়ে যাচ্ছে, এগুলো এক ধরনের প্রোপাগান্ডা। এ ধরনের কোনো ঘটনাই ঘটেনি। দুটি বাহিনীই আমাদের জাতীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষা নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য। আইনশৃঙ্খলার মূল যে আইন, তার বাইরে কেউ নয়। ধাক্কা দিলে সরকার পড়ে যাবে, সংবিধানে এমন কোনো কথা লেখা নেই বলে উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সরকার তো এমন কিছু নয়, যে ধাক্কা দিলাম আর পড়ে গেল। এটা গণতান্ত্রিক সরকার, ভোটের মাধ্যমেই ক্ষমতায় এসেছে। একটি সময়ের পর নির্বাচন হবে, তারপরই সরকার পরিবর্তন হবে। ধাক্কা দিলে সরকার পড়ে যাবে, এমন কোনো কথা আমাদের সংবিধানে লেখা নেই। তিনি বলেন, সংবিধানের বাইরে কোনো কিছু হলে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যা করণীয়, তা করবে। এখানে ব্যাখ্যা দেওয়ার কিছু নেই। সংবিধান রক্ষা করার দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। সংবিধানের বাইরে তারা কিছু করতে গেলে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করবে। মন্ত্রী বলেন, দেশের সব রাজনৈতিক দলের গণতান্ত্রিক চর্চা করার অধিকার রয়েছে। কিন্তু এরও একটা নিয়ম-কানুন রয়েছে। নিয়মবহির্ভূত কিছু করলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের বলবে, আপনারা আইন ভাঙছেন। বিএনপি যদি ঢাকার পুলিশ কমিশনারের কাছে আবেদন করে, শান্তিপূর্ণভাবে তারা যদি অবস্থান করে, পুলিশ কমিশনার নিশ্চয়ই তাদের অনুমতি দেবেন। বিএনপির মহাসমাবেশের একই দিনে আওয়ামী লীগের সমাবেশ কেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি এখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, এটা রাজনৈতিক বিষয়, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে আমি এটা বলতে পারি না। যে দলই সভা-সমাবেশের অনুমতি চাইবে, আমি তো তাকেই অনুমতি দিব। আইনসঙ্গতভাবে আরও দশটি দল যদি অনুমতি চায়, ওই দিনই তারা সমাবেশ করবে নিয়মকানুন মেনে, শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা করে যদি করতে পারে, তবে করবে।