সম্প্রতি সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) শাহিন হোসেনের বিরুদ্ধে ‘ছন্দ ছড়ায় রাসেল সোনা’ বই বিক্রিতে ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে ১৯১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের নিকট হতে ‘ছন্দ ছড়ায়’ ৬টি বই বিক্রিতে তিন হাজার টাকা অন্যায়ভাবে নেওয়া হয়েছে বলে শিক্ষকরা অভিযোগ করেন। এই অনিয়ম দুর্নীতির কারণে ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষকরা।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলা শিক্ষা অফিসারের মৌখিক নির্দেশে ৬টি বই প্রতিটা বিদ্যালয়গুলোতে দিতে বাধ্য হয়েছে।
এদিকে প্রকাশিত ৩টি বই সংগ্রহ ও সংরক্ষণের বিষয়টি বিবেচনার জন্য অনুরোধের পত্রকে হাতিয়ার বানিয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) শাহিন হোসেনের বিরুদ্ধে বই বিক্রি করে ৪ লাখেরও বেশি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ শিক্ষকদের।
দুযোর্গ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র সূত্রে জানা গেছে, শিশুদের পাশাপাশি বড়দের রাসেল সোনার জীবনী সম্পর্কে ধারণা রাখতে ৩টি করে বই সংগ্রহ ও সংরক্ষণের বিষয়ে বিবেচনার জন্য অনুরোধ জানানো হয়। তবে শ্যামনগর উপজেলায় ১৯১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের কাছে ৩টি করে বইয়ের পরিবর্তে ৬টি করে ‘ছন্দ ছড়ায় রাসেল সোনা’ বই বাধ্যতামূলক বিক্রি করা হয়েছে। বইটির বাজারে ১শ’ হতে ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ বইটি বিক্রি করা হয়েছে পাঁচ শত টাকায়।
উপজেলা শিক্ষা অফিসার প্রতি স্কুলে ০৬টি বই দিয়ে মূল্য নিয়েছেন ৩ হাজার টাকা। কিন্তু বাজার দর আছে, ৯শ’ টাকা। এভাবে উপজেলা শিক্ষা অফিসার ১৯১টি স্কুল থেকে ৫ লক্ষ ৭৩ হাজার টাকায় বিক্রয় করেন। এর মধ্য হতে তিনি ৪ লক্ষ ১ হাজার ১শ’ টাকা শিক্ষকদের নিকট থেকে জোরপূর্বক হাতিয়ে নিয়ে আত্মসাৎ করেছেন। শিক্ষা অফিসার ওই বইয়ের ৩ হাজার টাকা স্লিপ ফান্ড থেকে সমন্বয় করতে বলেছেন।
এ বিষয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি দীনেশ চন্দ্র মন্ডল, সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রশিদ, বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের সভাপতি পরিমল কর্মকার, প্রধান শিক্ষক সমিতির আহ্বায়ক মোঃ মিজানুর রহমান লাভলুসহ আরও অনেক প্রধান শিক্ষকরা জানান, স্লিপের অর্থ ব্যয় করতে হলে স্লিপ কমিটির মাধ্যমে স্লিপের পরিকল্পনা অনুযায়ী ক্রয় কমিটি বাজার যাচাই-বাছাই করে ন্যায্য মূল্যে মালামাল ক্রয় করবেন। অথচ শ্যামনগর উপজেলা শিক্ষা অফিসের পূর্ববর্তী দুর্নীতিবাজ শিক্ষা অফিসারদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে অধিক মুনাফার আশায় ১৫০ টাকার বইয়ের স্থলে ৫শ’ টাকা, ৩টি বইয়ের স্থলে ৬টি বই ১৯১টি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদেরকে নিতে বাধ্য করেন। এ ক্ষেত্রে (ভারপ্রাপ্ত) শিক্ষা অফিসার শাহিন হোসেন ৪ লাখ ১ হাজার ১শ’ টাকা অবৈধভাবে হাতিয়ে নিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে আমরা (শিক্ষক নেতারা) শিক্ষা অফিসারের সাথে কথা বললে তিনি জানান, ‘উপরের নির্দেশ, আপনারা মানতে বাধ্য।’
প্রধান শিক্ষকরা আরও জানান, পূর্বে শেখ রাসেলের ২৫টি বই ও ২৫টি বাঁধানো ছবি মাত্র ৪ হাজার টাকায় ক্রয় করেছি। সেখানে ৬টি চটি বই দিয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসার প্রতি স্কুল থেকে ৩ হাজার টাকা জোর করে আদায় করেছেন। শিক্ষকরা আরও জানান, বঙ্গবন্ধু, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, বিশেষ করে ছোট্ট সোনা শেখ রাসেল সর্ম্পকৃত সকল পুস্তক বিদ্যালয়ে সংরক্ষণ ও শিশুদের মাঝে বিতরণ করতে শিক্ষকরা আগ্রহী। বঙ্গবন্ধু পরিবারের প্রতি শিক্ষকদের ভালবাসাকে পুঁজি করে শ্যামনগর উপজেলা শিক্ষা অফিসার মহা প্রতারণার আশ্রয় গ্রহণ করে ৪ লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নিয়ে শিক্ষকদের স্ব-স্ব স্কুলের স্লিপ কমিটির কাছে বিতর্র্কিত করেছেন।
বই বিক্রয়ের বিষয় উপজেলা শিক্ষা অফিসার শাহিন হোসেন জানান, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের চাপে আমি বইগুলো প্রতিটি স্কুলে বিক্রয় করতে বাধ্য হয়েছি। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের মৌখিক নির্দেশে ৩টি বইয়ের স্থলে ৬টি বই প্রতিটি স্কুলে দেওয়া হয়েছে। এখানে আমার কিছু করার ছিলো না। অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, প্রতি স্কুল থেকে বই বিক্রয়ের সমুদয় টাকা কোম্পানীর প্রতিনিধির নিকট পাঠানো হয়েছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার হোসনে ইয়াছমিন করিমীর সাথে মুঠো ফোনে কথা হলে তিনি বলেন, ৩টি বইয়ের স্থলে ৬টি বই দিতে আমি বলি নি। আমি শ্যামনগর শিক্ষা অফিসারের সাথে কথা বলছি বলে ফোনটি কেটে দেন।
উল্লেখ্য, ইতোপূর্বে দুই জন শিক্ষা অফিসার দুর্নীতির দায়ে স্ট্যান্ড রিলিজ হয়ে দুদকের মামলায় তদন্তাধীন ও থানা মামলায় র্চাজশিটভুক্ত হয়ে বিচারাধীন আছে। শ্যামনগরের সুশীল সমাজ উপজেলা শিক্ষা অফিস দুর্নীতিমুক্ত করতে সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও দুদকের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।