ঝিনাইদহ কালীগঞ্জে সপ্তাহে সাত দিন সকাল থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ঘরের এক কোণে বসে ১৮ বছরের যুবক হাছান ইমন রোগীর মুখে বর্ননার উপর ভরসা করে কিছু কথা বলতে থাকে। রোগীকে বলে এটা কি ঠিক, কিছু উদাসীন স্বপ্নের মত বলে থাকে এটা ঠিক। তখন তাকে বলে বিভিন্ন তাবিজের কথা। সাধারন মানুষ বেকুব হয়ে পানি পড়া,তাবিজ-ও গাছ গাছারী দিয়ে প্রতারনায় টেনে নিচ্ছে হাজার হাজার টাকা। এ প্রতারনার কাজে সহযোগিতা করছে তারই পাতানো স্থানীয় কয়েকজন সহযোগী। তাদের কে প্রতিদিন নগদ টাকা দিয়ে প্রতারনার ব্যবসা ঠিক রাখছে। এই প্রতারক প্রায় ৪ মাস এভাবে রোগ নিরাময়ের কথা বলে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। সরেজমিনে দেখা যায়, কালীগঞ্জ উপজেলার প্রতারক এই কবিরাজ কাদিরডাঙ্গা গ্রামের মোহাম্মদ মন্তেজ আলী এবং ফিরোজা বেগম দম্পতির ছেলে হাছান ইমন (১৮)। ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে সাধারণ রোগীদের প্রতারনার ফাঁদে ফেলে জি¦ন দ্বারা চিকিৎসার কথা বলে নামের আগে কবিরাজ সাটিয়ে হাসান ইমন (১৮) নামের এক যুবক রোগীদের নিকট থেকে প্রতারনার মাধ্যমে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। তিনি রোগীদের বিভিন্ন রোগের চিকিৎসার নামে নিজ ও পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন এলাকার সহজ-সরল সাধারণ মানুষের নিজের বশে আনা জি¦নের দ্বারা চিকিৎসার কথা বলে প্রতারনা করছে। অধিকাংশ আসা রোগি মহিলা এবং রোগীকে প্রথমে ৫০ টাকা দিয়ে সিরিয়াল রশিদ নিতে হয়। টিকিট নিয়ে ছোট টিনের ঘরে গোপনিয় ভাবে ও মোবাইল বিহীন রোগীকে প্রবেশ করতে হয় কবিরাজের কাছে। কবিরাজ ইমন নানা রকম আয়ুর্বেদিক ও গাছের ঔষধ, তেল পড়া, পানি পড়া, এবং তাবিজ রোগীদের দিয়ে ৬০০ থেকে ১০০০ টাকা করে হাতিয়ে নিচ্ছে। আবার জ্বর,ঠান্ডা, মাথা ব্যথা, হার্টের সমস্যা, বন্ধ্যাত্বা, মহিলাদের গোপনিয় রোগের সমস্যা, সন্তান না হওয়া, কানে ব্যথা, কোমরে ব্যথা, হাঁপানি, এ্যাজমা, পলিপাস,কিডনির অল্প বয়সে চুল পাকা, প্রতিবন্ধি শিশুদের ভালো করা, প্রেমিক প্রেমিকাকে পাওয়ে দেওয়া, জিন-ভূত তাড়ানো, যেসব নারীদের বয়স পেরিয়ে গেলেও বিয়ে হচ্ছে না, ক্যান্সার, ডায়াবেটিকস,সরকারী চাকুরী পাইয়ে দেওয়া পুরুষাঙ্গহীন,সহ নানা জটিল ও কঠিন রোগের চিকিৎসা করছে। সমস্যাসহ সকল প্রকার রোগের চিকিৎসা দিচ্চে এই প্রতারক। এই ভুয়া কবিরাজের বাসায় সপ্তাহে ৭ দিন অনেক দূর দুরান্ত থেকে সকল প্রকার রোগী আসে। হাত, মুখ ও রোগিদের মুখের কথা শুনে রোগ নির্নয়ের সূত্র বলতে পারে সে। এমন কোন রোগ নেই যা ইমন চিকিতসা দিচ্ছে না। বাড়িতে নেই কোন ঔষধি গাছ,তবুও তিনি বিভিন্ন গাছ গাছারী থেকে ওষুধ তৈরী করে সকল রোগের চিকিৎসা প্রদান করে গাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা।
আর রোগের ধরন দেখে চিকিৎসার ফি নিচ্ছেন মোটা অংকের টাকা। আড়পাড়া গ্রামের জামিলা বেগম বলেন, গ্রামের মানুষের কাছে শুনে আমি আমার মেয়ের চিকিৎসার জন্য এসেছি। তিনি আরো বলেন,আমার মেয়ে ২ মাসের গর্ভবতী এবং বাচ্চাটি নষ্ট হয়েছে কোন জিন ভুতের আছর আছে কিনা কবিরাজ বলেন তোমার মেয়ের জরায়ু নেই। ঝিনাইদহ থেকে গোলাম আজম বলেন,সরকারী চাকরী হচ্ছে না,এই জন্য এসেছিলাম। কবিরাজ বলল যদি বিশ্বাস করিস তাহলে সামনে শনিবারে ওষুধ নিয়ে যাবি,সরকারী চাকুরী হবে। শহিদুল ইসলাম বলেন,বিয়ে হচ্ছে না কবিরাজের কাছে জানতে চাইলে কবিরাজ শনিবারে তৈল পড়া দিতে চেয়েছে। প্রতারক কবিরাজের মা ফিরোজা বেগম বলেন, বর্তমানে দূর-দূরান্তের মানুষ ভোর ৪ টা থেকে বাড়িতে আসা শুরু করে। সপ্তাহে সোমবার ও শুক্রবার জি¦নের ডাক্তার বসে আমার ছেলের শরীরে। পার্শ্ববর্তী জেলা মাগুরার শালিকা থেকে প্যারালাইসিস রোগী হান্নান বিশ্বাসকে তার পরিবারের লোক এই কবিরাজের কাছে নিয়ে এসেছেন। এখানে আগেও দুদিন এনেছেন হান্নান বিশ্বাসকে। অনেক টাকার ওষুধও দিয়েছিল, কিন্তু কোন উপকার হয়নি। কালীগঞ্জ উপজেলার মোস্তবাপুর গ্রামের নুর মোহাম্মদ বলেন, আশপাশের লোকের মুখে শুনে আগে একবার এসেছিলাম আমার পাইলসের সমস্যা নিয়ে। সেদিন সব মিলিয়ে ২ হাজার টাকার ওষুধ দিয়েছিল, কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। কবিরাজি সনদ দেখতে চাইলে বলেন মেম্বার মৌখিক নির্দেশনা দিয়েছেন আমাকে রোগী দেখার জন্য। সাধারণ মানুষ এখনো বুঝতে পারেনি কবিরাজি পুরোটাই প্রতারনা। প্রতিদিন প্রশাসনের চোখের সামনে এ প্রতারনা হলেও তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহন করা হচ্ছে না। কবিরাজ মোহাম্মদ মুন্না হাসান ইমন বলেন, মানুষের কাজ না হলে এত লোক আমার কাছে আসে কেন ? এখানে রোগীদের সাথে কোন প্রতারনা করা হয় না। আমি কিছুই না সব কিছু জি¦নে মাধ্যমে চিকিৎসা করে থাকি। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন আল আজাদ বলেন, আমি শুনেছি অল্প বয়সের এক ছেলে প্রতিদিন অনেক রোগী দেখছেন। কিভাবে কি করছেন তা খোঁজ-খবর না নিয়ে বলতে পারছি না। কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার আলমগীর হোসেন জানান, জ্বীনের দ্বারা চিকিৎসার কোন ভিত্তি নেই এটা নিছক প্রতারনা।